• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

রিজভীর দুই পদ নিয়ে বিএনপিতে চরম অসন্তোষ


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৮, ২০১৭, ০৩:০৮ পিএম
রিজভীর দুই পদ নিয়ে বিএনপিতে চরম অসন্তোষ

ঢাকা: সর্বশেষ কাউন্সিলে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি চালুর ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি নেতৃত্ব। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও সেই নীতি প্রায় অকার্যকর থেকে গেছে। তা ছাড়া ওই নীতি কার্যকর করলে বেশ কিছু জেলায় সাংগঠনিকভাবে দলের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে-এ যুক্তি দেখিয়ে জেলা ও পৌর নেতাদের অনেকেই বাড়তি পদ ছাড়তে অনাগ্রহী বলে জানা গেছে।

আর রুহুল কবীর রিজভী আহমেদকেও এ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অনেকেই দায়ী করছেন। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পরও ‘দপ্তর’ পদ ধরে রাখায় তাকেই এ ক্ষেত্রে সবাই উদাহরণ হিসেবে টেনে আনছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দলের হাইকমান্ড নির্দেশ দেয়- যাদের একাধিক পদ আছে, তারা যে কোনো একটি রেখে বাকি পদগুলো ছেড়ে দেন। এর জন্য তাদেরকে ‘ডেডলাইন’ও বেঁধে দেয়া হয়। পাশাপাশি একাধিক পদে থাকা দলের ১৯ জন নেতাকে চিহ্নিত করে চিঠি পাঠানো হয়। তবে সবাই চিঠির উত্তর দিলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উল্টো রুহুল কবির রিজভীকে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতির এই সিদ্ধান্ত অকার্যকরের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অনেকেই দায়ী করছেন। কারণ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পরও দলের ‘দপ্তর’-এর পদ ধরে রাখায় তাকেই এ ক্ষেত্রে সবাই উদাহরণ হিসেবে সামনে টেনে আনছেন।

প্রসঙ্গত, পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি ও কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ ছেড়ে দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর দলের যুগ্ম মহাসচিবের পদ পাওয়ার পর যুবদলের সভাপতির পদ ছেড়ে দেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। শুধু এই দুই নেতা নন, দলের অসংখ্য নেতা আছেন। যারা নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সর্বশেষ পাওয়া ‘মর্যদাপূর্ণ’ পদটি রেখে আগের পদ ছেড়ে দেন। কেউ কেউ আবার আগের পদটিকে শ্রেয় মনে করে ছেড়ে দেন নতুন পাওয়া পদটি।

তবে এ ক্ষেত্রে রুহুল কবির রিজভী একটু বেশি যেন ব্যতিক্রম। কারণ দলের গুরুত্বপূর্ণ ‘সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব’ পদটি পাওয়ার পরও দপ্তর সম্পাদক-এর পদটি ছাড়েননি তিনি। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে দীর্ঘদিন ধরে চলছে নানা আলোচনা, সমালোচা, অসন্তোষ ও হৈ-চৈ। এছাড়া বিএনপি ঘরোনার বুদ্ধিজীবী এবং পেশাজীবীরাও প্রকাশ্যে রুহুল কবির রিজভীর এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন পদ দখলের সমালোচনা করেন। তবুও এক অদৃশ্য কারণে সব কিছুই নীরবে সয়ে যাচ্ছেন রিজভী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়ার পর তারেক রহমানের আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত দলের সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনিকে দফতর সম্পাদকের পদে বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। কারণ বিএনপি এবং শহীদ জিয়া পরিবার প্রশ্নে আবদুল লতিফ জনির ভূমিকা সবসময় আপোষহীন। এছাড়া দলের সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জনির ইতিবাচক ভূমিকা বিএনপির ভেতরে-বাইরে বেশ প্রশংসনীয়। তাই দলের দফতরের কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়াতে আবদুল লতিফ জনিকে দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। এমন খবরে ‘মাথায় আকাশ ভেঙে’ পড়ে রুহুল কবির রিজভীর। তিনি ছুটে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে।

কাকুতি-মিনতি করে রিজভী বলেন, অনেক ঝড়-ঝাপ্টার মধ্যেও তিনি রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়েননি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের সদর দফতরকে আগলে রেখেছেন। যতোদিন রাজনীতি করবেন, ততোদিন নয়াপল্টন কার্যালয় ছাড়বেন না তিনি।

দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নাছোরবান্দা রুহুল কবির রিজভীর এই আবদার উপেক্ষা করতে পারেননি খালেদা জিয়া। ফলে নিজের নেয়া ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি কার্যকরের সিদ্ধান্ত রিজভীর ক্ষেত্রে শিথিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

অবশ্য দলের বেশিরভাগ সিনিয়র নেতা মনে করেন, দফতর সম্পাদকের পদটি ধরে রাখার জন্য খালেদা জিয়াকে ‘মেন্টাল ব্ল্যাকমেইল’ করেছেন রিজভী। তবে এই ঘটনার পর সেসময় এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ম্যাডমের (খালেদা জিয়া) দেয়া দায়িত্ব আমি পালন করছি। ম্যাডাম যদি মনে করেন, এ দায়িত্ব অন্য কাউকে দেবেন, তাহলে আমি সরে যাবো।

এ প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য হলো, নিজে দুই পদে বহাল থেকে অন্যকে পদ ছাড়তে বলা অনৈতিক। রিজভী যদি এটি করে থাকেন, তাহলে সেটি মোটেই উচিত হয়নি। তাঁর মতে, এটাই বিএনপির সমস্যা। তিনি বলেন, বিশেষ বিবেচনা কখনো বিধান হতে পারে না। তা ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন দলের সবার নেত্রী। সুতরাং ওই বিবেচনা সবাই দাবি করতে পারেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!