• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

দুই মাসের লন্ডন সফরে খালেদা জিয়া, দল চালাবে কে?


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৬, ২০১৭, ১২:৫৭ পিএম
দুই মাসের লন্ডন সফরে খালেদা জিয়া, দল চালাবে কে?

ঢাকা : দুই মাসের লম্বা সফরে লন্ডন গেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। শনিবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় বিমানযোগে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডন রওনা হয়ে গেছেন।

লন্ডনে অবস্থানরত তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসভবনেই উঠবেন বিএনপি-প্রধান। তারেক রহমান পরিবারের সঙ্গে তার ঈদুল আজহা উদ্যাপনের কথা রয়েছে। বিএনপির কেউ কেউ বলছেন, চিকিৎসা সম্পন্ন হয়ে গেলে ঈদের আগেও দেশে ফিরতে পারেন তিনি। যাওয়ার এক দিন আগে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে দলকে সবাই ঐক্যবদ্ধ রাখবেন। কোনোভাবেই যেন দলে বিভেদ সৃষ্টি না হয়। ’

এদিকে দলের শীর্ষ এ দুই নেতার অনুপস্থিতিতে দল চালাবেন কে— এমন প্রশ্ন দেখা দিলেও সিনিয়র নেতারা বলছেন, দল চলবে স্বাভাবিক নিয়মেই। এ নিয়ে দলীয় গঠনতন্ত্রে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। অর্থাৎ চেয়ারপারসন যেখানেই থাকেন, নিয়ন্ত্রণ থাকবে তারই হাতে। সে ক্ষেত্রে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য নেতারা তাকে সহযোগিতা করবেন।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকসূত্র জানায়, বৈঠকে বেগম জিয়ার লন্ডন সফরের সময় দল কীভাবে চলবে তা নিয়ে দীর্ঘ সময় কথা হয়। এ সময় বেগম জিয়া শীর্ষ নেতাদের বেশকিছু দিকনির্দেশনা দেন। ২০১৫ সালে লন্ডন যাওয়ার সময় দলের অভ্যন্তরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরে বেগম জিয়া এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ কারণে এবার তিনি লন্ডন থেকেই কঠোরভাবে দল মনিটর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীকে বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে যান। সদস্য সংগ্রহ অভিযান ঠিকমতো পরিচালনা হচ্ছে কিনা স্থায়ী কমিটির সদস্যদের তা পর্যবেক্ষণের জন্য আহ্বান জানান বেগম জিয়া।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডন সফর ঘিরে সেখানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বিএনপি নেতারা ঝাঁকে ঝাঁকে লন্ডনমুখী তৎপরতা বাড়াচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা লন্ডনে আসছেন। এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির তরুণ নেতা তাবিথ আউয়াল, ব্যক্তিগত সহকারী এ বি এম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা খাতুন রয়েছেন। অন্যদিকে একই ফ্লাইটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু লন্ডন যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা লন্ডন যেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন।

সূত্র জানায়, শীর্ষ দুই নেতার দেখা-সাক্ষাতে দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে লন্ডনে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা এবং দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে দলীয় চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনা হবে। সরকার সহায়ক সরকার দাবি না মানলে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়েও মা-ছেলের মধ্যে কথা হবে। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপি নেতাদের কার কী ভূমিকা তা নিয়েও কথা হতে পারে দলের শীর্ষ দুই নেতার। বিতর্কিত ও নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এদিকে ছাত্রদলের বিষয়টি দেখভাল করেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, তাই নতুন কমিটি নিয়েও মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারেন তিনি। দেশে ফিরে ছাত্রদলের নতুন কমিটিও ঘোষণা দিতে পারেন বিএনপি-প্রধান। এ নিয়ে ছাত্রদলের নেতৃত্বে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বিরাজ করছে। কয়েক দিন ধরে রাতে গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া অন্য অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কার কী ভূমিকা তা নিয়েও খোলামেলা কথা উঠে আসতে পারে দুই নেতার দেখা-সাক্ষাতে।

লন্ডনে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সবকিছুই দেখভাল করছেন তারেক রহমান। সেখানে নেতা-কর্মীসহ প্রবাসীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের জন্য একটি হোটেলও বুকড দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সফরে চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান কিছু ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন। লন্ডন ভিজিটে উনি হয়তো কোনো আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন যোগাযোগের চেষ্টা করবেন।

বিমানবন্দরে নেতা-কর্মীর ঢল : এদিকে বিমানবন্দর এলাকায় কয়েক হাজার নেতা-কর্মী দলীয় প্রধানকে বিদায় জানান। খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে বিকাল থেকে বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। এতে টার্মিনালে যেতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বাধার মুখে পড়েন।  দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদায় জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!