• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
ডেডলাইন ৮ ফেব্রুয়ারি

কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী 


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৮, ০৯:২৩ পিএম
কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী 

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় কেন্দ্র করে হঠাৎ রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গত মঙ্গলবার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পরই শুরু হয়েছে ধরপাকড়।

ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকেই দলের নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত দুই দিনে শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক ও গ্রেফতারের দাবি করেছে বিএনপি। 

এদিকে ধরপাকড়ের ঘটনায় দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেক নেতাকর্মী বাসাবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ দলের সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে।

গ্রেফতার করা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। তাদের পুরনো মামলায় অজ্ঞাত আসামির স্থানে নাম ঢুকিয়ে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে পুলিশ রিমান্ডে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট মোড়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ এবং দুই নেতাকে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ ৭০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

এ ছাড়া বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের প্রায় অর্ধশত নেতার বাসায় রাতভর তল্লাশি চালানো হয়।

পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছে। তাই যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোনো অবস্থাতেই যাতে ২০১৪-১৫ সালের মতো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে না পাওে, সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখা হচ্ছে। 

ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরনো নাশকতার মামলাগুলোও সচল করা হচ্ছে। সেসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের পাশাপাশি সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে, বিএনপি-জামায়াতের এমন নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নাশকতায় যারাই জড়িত থাক, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। মঙ্গলবারের নাশকতায় জড়িত আসামিদের ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র বিশ্নেষণ করে চিহ্নিত করা হবে। চিহ্নিত অনেককে গ্রেফতারে অভিযানও চলছে।

গত রাতেও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেনি পুলিশ। বিএনপি নেতাকর্মীদের পুরনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তুলছে পুলিশ।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের দিন ধার্য রয়েছে। এই রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীরা কয়েক দিন ধরেই ঁশিয়ারি উচ্চারণ করছে। তারা বলছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় হলে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ‘দেশ অচল করে দেওয়া হবে’ বলেও বিএনপির নেতারা বিবৃতি দিচ্ছেন।

এদিকে বেগম জিয়ার রায়কে ঘিরে বিএনপির তৃণমূলেও কঠোর বার্তা দিয়েছে বিএনপি। রায়ের দিন ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই ২০১৪-১৫ সালের মতো নৈরাজ্য বরদাশত করা হবে না। খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে অরাজকতা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মাঠপর্যায়ের প্রায় ২৭৫ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে। গত দুই দিনে নতুন করে চার মামলায় ৯০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে অজ্ঞাত আসামিই বেশি। ফলে গাঢাকা দিয়েছেন মধ্য সারি ও নিম্নস্তরের নেতাকর্মীরা। অনেকেই বন্ধ রেখেছেন নিজের সেলফোন।

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার এড়িয়ে চলার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে ৮ ফেব্রুয়ারি শান্তিপূর্ণভাবে আদালত পাড়ায় নেতাকর্মীদের অবস্থান নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি। দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে তিনি শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের এই নির্দেশনা দেন। ঢাকাসহ সারা দেশের সাংগঠনিক ইউনিটগুলোতে একই বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/জেএ/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!