• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যবিধির নামগন্ধ নাই বাংলাবান্ধা বন্দরে


পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৭, ২০২২, ১১:৫৬ এএম
স্বাস্থ্যবিধির নামগন্ধ নাই বাংলাবান্ধা বন্দরে

ছবি : সংগৃহীত

পঞ্চগড় : করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এ কারণে বিভিন্ন স্থলবন্দরে সতর্কতা জারি করলেও দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে নেওয়া হয়নি বাড়তি সর্তকর্তা। বন্দর সংশ্লিষ্টরা শুধু কাগজে সর্তকতা জারির কথা বললেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন।

জানা গেছে, ভারত থেকে আসা ইমিগ্রেশন যাত্রী কিংবা বিদেশি চালক কারো স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় না। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আসা চালকরা মাস্ক, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে বন্দর এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে এ স্থলবন্দরে বাড়ছে ওমিক্রনের ঝুঁকি।

এদিকে বন্দর এলাকায় করোনা কিংবা ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিম ও বিজিবি সদস্যদের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তারা নিজেদের ব্যবহারের জন্য টেবিলের উপর একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর কলম নিয়ে চেয়ারে বসে থাকেন। মেডিকেল টিমের কথা বলা হলেও দায়িত্বে থাকছেন নামে মাত্র একজন স্বাস্থ্য কর্মী। মেডিকেল টিম ও বিজিবি সদস্যদের নিজেদেরও মাঝে নেই কোনো স্বাস্থ্য সুরক্ষার বালাই। 

অন্যদিকে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আসা চালকদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় একই চিত্র। প্রতিদিন বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত ও ভুটান থেকে কয়েক শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পণ্য নিয়ে বন্দর এলাকায় যাতাতায়াত করলেও কোনো ট্রাকেই জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয় না,  চালকদের মাপা হয় না তাপমাত্রা, মাস্ক পরিধান করছে না চালকরা। ফলে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে যে যার ইচ্ছে মতো বন্দর এলাকাসহ আশপাশের দোকানপাটে হরহামেশাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, ভিন্ন দেশীয় চালকরা তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ট্রাকের ভেতরে বসে থাকবেন, বাইরে বের হতে পারবেন না। তারা সেই নির্দেশনাকে পাত্তা দিচ্ছে না।

ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের ইমিগ্রেশন যাত্রীরা বলছেন, ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দর থেকে তাপমাত্রা পরিমাপ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মাস্ক পরাসহ আরটিপিপিআরের রিপোর্ট দেখিয়ে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে এলেও এখানে কোনো ব্যবস্থা নেই। ভারত থেকে যে পরীক্ষা ও কাগজপত্র দেওয়া হয় তা বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দেখেই যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রী মিনাল কান্তি দে বলেন, আমি ভারত থেকে আসার আগে সেখানে আরটিপিটিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষাসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও শরীরে তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়। তারপর ফুলবাড়ী ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে আমাদের ছাড়লেও বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে এসে দেখি ভিন্ন চিত্র। এখানে কোনো কিছুই হচ্ছে না। ভারতের কাগজপত্র দেখে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

একই কথা বলেন জিতেন রায় নামে আরেক পাসপোর্ট যাত্রী। তিনি বলেন, এর আগে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে যে ব্যবস্থা ছিল এখন তা আর নেই। কোনো নিয়মনীতি চোখে পড়ছে না। আগে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের তাপমাত্রা পরিমাপ, এন্টিজেন টেস্টসব বিভিন্ন পরীক্ষা করলে উপকার হতো।

এদিকে বাংলাদেশি চালকরা ভারত, নেপাল ও ভুটানের চালকদের অসাবধানতাকে দায়ী করছেন। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ট্রাক নিয়ে আসা বাংলাদেশি চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারত, নেপাল ও ভুটানের চালকরা বাইরের দেশ থেকে এসে মাস্ক না পরে বন্দরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমরা দেশি চালকরা আতঙ্কে রয়েছি। তবে ভারত-বাংলাদেশ চেকপোস্টে আগে চালকদের তাপমাত্রা ও ট্রাক স্প্রে করা হলেও এখন করা হয় না।

একই কথা বলেন কুদরত-ই খুদা শান্ত নামে আরেক চালক। তিনি বলেন, আগে বাংলাবান্দা স্থলবন্দরে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা থাকলেও এবার কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। বন্দরের পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই এটা বাজার নাকি বন্দর।

ভারত থেকে পাথর নিয়ে আসা ট্রাকচালক রঞ্জন দাস বলেন, ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে সব দেশের চালকদের তাপমাত্রা ও ট্রাকের স্প্রেসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কড়াকড়ি নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে এসবের কিছুই হয় না। যে যার মতো অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই আমরাও খুব আতঙ্কে আছি।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন মুসা বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি-রফতানি হচ্ছে। পাশাপাশি ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে বন্দর কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের পোর্ট ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম পরিচালনা করে আমদানি-রফতানির চালু রয়েছে। আমরা ভিন্ন দেশীয় চালকদের জন্য আলাদাভাবে শেড ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করেছি। তাদের মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মনে চলতে প্রতিদিনই প্রচারণা চালাচ্ছি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণ যেন না ছড়ায় সেজন্য বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আসা ভারত, নেপাল ও ভুটানের চালকদের আলাদাভাবে বিশ্রাম ও থাকার জন্য শেড ও ওয়াশ ব্লক নির্মাণ করা হয়েছে। চালকরা সেগুলো ব্যবহার করছে কি না তার জন্য মনিটরিং কমিটি গঠনসহ অভিযান চালানো হবে।

সোনালীনিউজ/এসএন

Wordbridge School
Link copied!