• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সরিষার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি


কুষ্টিয়া প্রতিনিধি মার্চ ৬, ২০২৩, ০৯:২৮ এএম
সরিষার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

ফাইল ছবি

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের কাথুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হক। চলতি বছর প্রায় ২ একর জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছিলেন। সরিষা মাড়াই করে ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি। প্রতি বিঘায় প্রায় ৭ মণের কাজে ফলন হয়েছে তার। এমন ফলন গত কয়েক বছরের মধ্যে বেশি বলে জানান তিনি। প্রতি মণ সরিষা বাজারে বিক্রি করছেন ৩ হাজার ৫০০ টাকা ৩ হাজার ৬০০টাকা। যা গত বছরের তুলনায় মণে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি। সামনে আরও দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন এই কৃষক।

কুষ্টিয়ায় সরিষার ভালো ফলন ও দামে হাসি কৃষকদের আব্দুল হকের মত একই ইউনিয়নের শাহিন প্রমানিক, সেলিনা পারভীন ও রেজাউল ইসলাম সরিষা আবাদ করে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে খুশি। সেলিনা পারভীন বলেন,‘ সরকারিভাবে এবার কৃষকদের প্রনোদনা বাড়ানো হয়। ৩ একর জমিতে বারি-১৪ জাতের উচ্চ ফলনশীল সরিষা আবাদ করে তিনি প্রায় ২১ মণের কাজে সরিষা পেয়েছেন। যার বাজার মুল্য প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। ৬ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে সরিষা আবাদ করতে।

কৃষকরা বলেন,‘ বিশেষ করে বারি ১৪,১৭,১৮ ও বিনা ৯ জাতের সরিষায় রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। সেখানে প্রতি বিঘায় গড়ে ৪ থেকে ৫ মণ ফলণ হয় এবার সেখানে প্রায় ৭ মণের কাছে ফলন পেয়েছেন তারা। মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ করে ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে প্রতি বিঘায় আয় হচ্ছে প্রায় ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

কৃষকরা জানান,‘ সরিষা কর্তন করে একই জমিতে বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেণ কৃষকরা। যারা আগে ভাগে সরিষা কর্তন করেছেন তারা জমি প্রস্তুত করে বোরো চারা রোপন করেছেন। সরিষা আবাদ করে যে অর্থ পেয়েছেন তা দিয়ে বোরো আবাদে সহায়ক হবে বলেও জানান তারা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়ার মাঠে-মাঠে এখন পাকা সরিষার ক্ষেত। কৃষকরা ক্ষেত থেকে পাকা সরিষা গাছ তুলে বাড়িতে নিচ্ছেন। মহিষ ও গরুর গাড়িতে করে বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে সরিষা। বাড়িতে নিয়ে যান্ত্রিক মেশিনের সাহায্যে গাছ থেকে সরিষা আলাদা করছেন। এরপর তা রোদে শুকিয়ে বস্তায় ভরে বাজারে নেওয়ার জন্য রাখা হচ্ছে।

আব্দালপুর ইউনিয়নের কৃষক রুহুল আমিন বলেন,‘ এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় সরিষায় কোন রোগ-বালায় ছিল কম। যে কারনে ফলন হয়েছে ভাল। বাজারেও ভাল দাম মিলছে। সারা বছরের খাওয়ার সরিষা বাড়িতে রেখে বাকি বাজারে বিক্রি করে অন্য চাষাবাদ করবেন।

তিনি বলেন, বোরোতে সেচ খরচ বেড়েছে আগের তুলনা অনেক। আমন ধান কাটার পর সাধারনত জমি খালি পড়ে থাকে। এ সময়টাতে এবার গ্রামের প্রায় সকল কৃষক সরিষা আবাদ করেছেন। সরিষার অর্থে বোরো ধান আবাদ করা সহজ হবে কৃষকদের। পাশাপাশি তেলের চাহিদা পূরণ হবে প্রায় প্রতি পরিবারে।’

উজানগ্রাম ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি অফিসার আশরাফ সিদ্দিক বলেন,‘ বীজ বোপন থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে গতবারের তুলনা কৃষকরা ফলন বেশি পেয়েছেন। সবমিলিয়ে এবার সরিষার যে ফলন হয়েছে তাতে সামনে সরিষার আবাদ আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। গ্রামের কৃষকদের এবার প্রনোদনা বাড়ানোর ফলেও তারা উৎসাহ নিয়ে সরিষা আবাদ করেছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, প্রতি বিঘায় প্রায় ৭মণের কাছাকাছি ফলন হয়েছে সরিষার, যার বাজার মুল্যে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। যারা বেশি যত্ম করেছেন তাদের ফলন অন্যদের তুলনায় বেশি হয়েছে। সরকার থেকে বীজ ও সার দেওয়ায় কৃষকদের তেমন কোন খরচ করতে হয়নি। নামমাত্র খরচে কৃষকরা ভাল লাভ করতে পারছেন। একই সাথে সরিষার উৎপাদন বাড়ায় বাজারে সয়াবিনসহ অন্য তেলের ওপর এবার চাপ কমবে বলে মনে করেন তিনি।

উল্লেখ, চলতি বছর জেলায় ২৫ হাজার কৃষকদের বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয় কৃষি বিভাগ থেকে। গত বছর মাত্র ৫ হাজার জনকে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। দেশের বাজারে সয়াবিনসহ অন্য ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার ফলে এবার দেশেই ভোজ্য তেল উৎপাদনের ওপর জোর দেন সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও সরিষা উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে বলে কৃষি বিভাগকে। কুষ্টিয়ায় গতবারের তুলনায় এবার প্রায় ৪০ ভাগ বেশি সরিষা আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকারও বেশি।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!