• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোপালগঞ্জের কাজুলিয়া ইউপিতে চলছে নকল জন্মনিবন্ধন বাণিজ্য


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি  জুন ১৯, ২০২৩, ১১:৫৯ এএম
গোপালগঞ্জের কাজুলিয়া ইউপিতে চলছে নকল জন্মনিবন্ধন বাণিজ্য

ইউপি সচিব শুনিল চন্দ্র বাড়ৈ

গোপালগঞ্জ: এ যেন এক ইচ্ছা স্বাধীন ইউনিয়ন পরিষদ, যেখানে যা খুশি তাই করা সম্ভব। শিশুকে যুবক আর যুবকে বৃদ্ধ। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ১৬ নং কাজুলিয়া ইউনিয়নে টাকার বিনিময়ে চলছে জন্মসনদ তৈরি বানিজ্য। টাকা হলেই ১৩ বছরের নাবালিকা মেয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছরের বিবাহ উপযুক্ত সাবালিকা। আবার ৩৫ বছরের মধ্য বয়স্ক ব্যক্তিকে ২০ বছর বয়স দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে জন্ম সনদ। 

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এধরনের জন্মসনদ বানিজ্যের নেপথ্যে রয়েছে ইউপি সচিব শুনিল চন্দ্র বাড়ৈ, ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওলিউর রহমান হাওলাদার ও পরিষদের অস্থায়ী উদ্যোগতা সবুজ ফকির।

সরজমিনে কাজুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অনিয়মের মাধ্যমে বড় অংকের টাকাসহ বিভিন্ন স্বার্থের বিনিময়ে জন্মনিবন্ধন সরবরাহ করে আসছে। পাশাপাশি বানোয়াট ওরিশান সনদপত্র সরবরাহ করে আইনবহিভুত কাজ করছে। অনৈতিক এই সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নকল জন্মসনদ ব্যবহার করে এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে। এছাড়াও এধরনের নকল জন্মসনদ দিয়ে ওই ইউপিতে প্রকাশ্যে চলছে বাল্যবিবাহ। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৯ নং ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা সাংবাদিকদের জানান ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওলিউর রহমান হাওলাদার পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব আলী ফকির ও সচিব শুনিল চন্দ্র বাড়ৈকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নকল জন্মসনদ তৈরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছেন। 

তারা আরো জানান, গত ৪ জুন ৯ নং ওয়ার্ডের আনছারি পাড়ার ওয়াসিম মোল্লা’র ১৩ বছরের নাবালিকা মেয়ে লামিয়া খানমের বিবাহের খবর পেয়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি ঘটনা স্থলে আসে। এসময় ইউপি সদস্য ওলিউর রহমান হাওলাদার তাদের পরিষদের মাধ্যমে সরবরাহকৃত ২০০৪৩৫১২২৪৩০২৪৫৫৪ নম্বরের একটি বয়স বাড়িয়ে দুইদিন আগে তৈরি করা জন্মনিবন্ধন উপস্থাপন করে প্রশাসনের ওই কর্মকর্তাকে গোলক ধাঁধায় ফেলে বাল্যবিবাহটি সম্পন্ন করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করেন। 

এবিষয়ে ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মর্জিনা খানম সাংবাদিকদের জানান, আমি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে জনস্বার্থে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি, অজানা কারণে অভিযোগের কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। 

জন্মনিবন্ধন তৈরির বিষয় জানতে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান আয়ুব আলী ফকিরকে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত সচিব শুনিল চন্দ্র বাড়ৈ অস্থায়ী উদ্যোগতা সবুজ ফকিরের কাঁধে দায় দিয়ে নিজের ভুল হওয়ার কথা শিকার করলেও ইউপি সদস্য ওলিউর রহমান হাওলাদার তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে এবিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। পাশাপাশি তিনি গোপালগঞ্জ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙ্গিয়ে সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে চাপ প্রয়োগ করেন।

এবিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন খান বলেন, গত ৪ জুন কাজুলিয়া ইউপিতে বাল্যবিবাহ প্রস্তুতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাময়িক ভাবে বিবাহ বন্ধ করি। পরবর্তিতে কন্যা পক্ষের লোকজন ও ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য ওলিউর রহমান হাওলাদার ১৯ বছর বয়সের একটি ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন উপস্থাপন করে। এসময় আইনের মারপ্যাঁচে বিবাহ বন্ধ না করে ফিরে আসতে বাধ্য হই। এখন দেখছি ওই মেয়ের দুইটা জন্মনিবন্ধন। একটিতে নাবালিকা ২০১১ সালে জন্ম অপরটিতে সাবালিকা ২০০৪ সালে জন্ম দেখানো হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এইচ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!