• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

টিআর প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, কাজ না করেই টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ


মাদারীপুর প্রতিনিধি অক্টোবর ২৪, ২০২৩, ০৩:৫২ পিএম
টিআর প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, কাজ না করেই টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ

ফাইল ছবি

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলায় ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে প্রকল্পে বরাদ্দের বিষয় গোপন রেখে এবং অনেক প্রকল্পের সম্পূর্ণ প্রকল্প শেষ না করে নানা গায়েবি প্রকল্প সাজিয়ে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন কৌশলে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসব প্রকল্প থেকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকার কমপক্ষে ২০টি প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শনে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা প্রেসক্লাবের এসি ক্রয়ের নামে এক লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। অথচ কালকিনি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেউই জানে না বরাদ্দে ব্যাপারে। অথচ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। 

কালকিনি উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিএম হানিফ বলেন, আমাদের প্রেসক্লাবের নামে বরাদ্দ এসেছে আমরা তো জানিই না। আমরা বরাদ্দই পাইনি। তবে কে বা কারা যেন বরাদ্দের টাকা তুলে নিয়ে গেছে। এই বরাদ্দের টাকা আমাদের ক্লাবের কেউ পায়নি। মাদারীপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ফারুক বেপারীর বাড়ী থেকে সুজন বেপারীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়নের নামে ৫০হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। একই চিত্র মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের একটি রাস্তা সংস্কার কাজের। এই রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রায় ২ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। অথচ সেই রাস্তা বর্তমানে এলজিইডির অর্থায়নে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত টাকা পুরোটাই অনিয়মের মাধ্যমে গায়েব করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই প্রকল্পের মতো এমন অনেক প্রকল্প পাওয়া গেছে, যেগুলোর কাজ কাগজে-কলমে সমাপ্ত। এসব প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের টাকাও তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ বাস্তবে এসব প্রকল্পের কোনো কাজই হয়নি।

মাদারীপুর জেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির অধীনে নানা প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে স্থানীয় লোকজনের দাবি, এসব প্রকল্পের কোথাও নামেমাত্র কাজ হয়েছে, কোথাও কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আবার কিছু প্রকল্প শুধু কাগজেকলমে আছে, বাস্তবে কাজের কোনো অস্তিত্ব নেই। 

এব্যাপারে মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, টিআর প্রকল্প মুলত কর্মী বাঁচানো প্রকল্প। অধিকাংশ প্রকল্প দেয়া হয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের। এতে করে সরকারের টাকা অবচয় হয় কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাই তদন্ত করে সরকারী অর্থ ফেরত আনা উচিত। তিনি আরও বলেন, এটা দেখভাল করার জন্য সুপারভিশন কমিটি থাকে। এই অনিয়মের দায় তারাও এড়াতে পারে না।

জেলা ত্রান ও পূনবাসন কার্যলয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দুই শতাধিক প্রকল্পের বিপরিতে প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

এব্যাপারে কালকিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মস্তফা কামাল অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এখানে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সত্য নয়। যদি কেউ কাজ না করে থাকে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কাজী মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, এই প্রকল্পগুলো উপজেলা থেকে বাস্তবায়ন করা হয়। এসব প্রকল্পে কাজ না হয়ে থাকলে কাজ করানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি অর্থ অবচয় বা আত্মসাত হয়ে থাকে তাহলে তা ফেরত আনার ব্যবস্থা করবো এবং পরিপত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

সোনালীনিউজ/এস/এসআই

Wordbridge School
Link copied!