• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীর ৪ আসনের প্রার্থীদের চেনেন না ভোটাররা!


নীলফামারী প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩, ০৩:৫২ পিএম
নীলফামারীর ৪ আসনের প্রার্থীদের চেনেন না ভোটাররা!

ফাইল ফটো

নীলফামারী: নীলফামারীর ৪টি সংসদীয় আসনে নাম সর্বস্ব কয়েকটি দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এই দলগুলোর নেই কোন দলীয় কার্যালয়। দলীয় নেতা-কর্মীদের কোন জাতীয় দিবস পালনে সক্রিয় ভূমিকা নেই। নির্বাচনকে ঘিরে হঠাৎ করে সামনে এসেছে। এর পাশাপাশি দল বদল করে অন্যদলের প্রার্থী হয়েছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে অনেক ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের স্থানীয়দের চেনা জানা আছে। এই দলগুলোর নিজ নিজ দলীয় কার্যালয় থাকলেও নাম সর্বস্ব দলগুলোর স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী দলীয় কার্যালয় নেই। অথচ তারা নির্বাচনী মাঠ দাফিয়ে বেড়াচ্ছে গুটি কয়েক কর্মী ও সমর্থক নিয়ে।

মাঠজুড়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিশাল মিছিল, গণসংযোগ, পথসভা ও শোডাউন করছে। ফলে নির্বাচনি আমেজ তৈরি হয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অনেকটা কোনঠাসা। হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটে ব্যানার-ফেস্টুন এবং মার্কা সম্বলিত ব্যানার দেখা গেলেও প্রার্থীর নেতা কর্মী ও সমর্থকদের লোকজনের দেখা অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যাদের মাধ্যমে চলছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), তৃণমূল বিএনপির নির্বাচনি মাঠ

নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনে বিএনএমের প্রার্থী হিসেবে রয়েছে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসনটিতে জাপার প্রার্থী হিসেবে রয়েছে সাবেক সেনা কর্মকর্তা তছলিম উদ্দিন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পরে জাফর ইকবাল সিদ্দিকী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সদ্য নিবন্ধন পাওয়া দল বিএনএমের প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

এখন পর্যন্ত নিজ আসনে পরিচিতি রয়েছে জাতীয় পার্টির জাফর! তার আসনে নির্বাচনী অফিস খুলেছেন। জাপার একাংশকে সাথে নিয়ে নির্বাচনি মাঠে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। জাফর ইকবাল সিদ্দিকী আগে জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু চলতি বছর ৬ অক্টোবর জাপার দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে সকল পদ-পদবী থেকে বঞ্চিত হওয়ায় রাতারাতি দল বদল করেন। বিগত দশ বছরেও দেখা যায়নি মাঠে কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে। ব্যবসায়িক কাজে সময় পার করেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর ও রাজধানী ঢাকায়।

টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, আমাদের কাছে জাতীয় পার্টির চেয়ে প্রার্থীর হিসেবটা মূখ্য তাই আমরা জাফর সাহেবের নির্বাচন করতেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা-কর্মী কিছুই নই। জাতীয় পার্টি করি, ভবিষ্যতেও করে যাবো।

অপরদিকে, জাতীয় পার্টির সাবেক জেলা কমিটির আহবায়ক, বর্তমান জেলা জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা ও নীলফামারী-১ ও ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট এন.কে আলম চৌধুরী তৃণমূল বিএনপির সোনালী আশঁ এ নির্বাচন করছে। কিন্তু তিনি এই তো কয়েকদিন আগে তথা চলিত বছরে জাপার জেলা দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে হতে চেয়েছেন আহবায়ক এবং দলীয় প্রার্থী। ভাগ্যে জোটেনি জাপার লাঙল। রাতারাতি আয়ত্বে নিলেন সমশের মুবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারের ‘সোনালী আশঁ’। যা জেলার অনেকের কাছে অপরিচিত। দুইটি আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য নিজের দলের পরিচিতি তো দূরের কথা, প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি দলীয় কার্যালয়, খুলতে পারেনি নির্বাচনি অফিস। নির্বাচনের সময় পাশে নেই সু-দিনের নেতা-কর্মী বা ভক্তরা। সভা-সমাবেশ যেন স্বপ্নের অদৃষ্ট আলোকচ্ছোটা।

ইসমাইল নামের এক জাতীয় পার্টির কর্মী জানান, আলম চৌধুরী যতদিন জাতীয় পার্টিতে ছিলেন ততোদিন সম্মানের পাত্র। তিনি আমাদের প্রাণ পুরুষ ছিলেন। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ভূল সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন। তার পাশে যারা ছিলেন তারা সকলে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তিনি প্রত্যাখিত ব্যক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছে।

জাফর ইকবাল সিদ্দিকী ও এন.কে আলম চৌধুরীর ব্যক্তি কেন্দ্রীক পরিচিতি ব্যাপক। সাধারণ ভোটারের মাঝে দলের নাম-পরিচয় ফুটাতে পারেনি। তারা দু’জনে নতুন প্রজম্মের কাছে নতুন ব্যক্তি। একদিকে নিজের পরিচিতি অন্যদিকে স্তম্ভ ছাড়া রাজনৈতিক সংগঠন।

কংগ্রেস কি নির্বাচনে মাধ্যমে পরিচিতি মিলাতে পারবে?

নীলফামারী-২ (সদর) আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টি-ডাব প্রতীকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ডিতা করছেন মোরছালিন ইসলাম। জন্ম সূত্রে নীলফামারীর হলেও ব্যবসায়ীক সূত্রে ঢাকার অধিবাসী। পরিচয় মিলাতে পারেনি গ্রামের বাড়ির আশপাশের লোকজনের কাছে। নির্বাচনে হাল ধরেছে যেন লঘি ছাড়া মাঝির মতো। কিন্তু সদর তো দুরের কথা, জেলায় তাদের কোনো অফিসের দেখা মিলেনি। মাঠে চলছে নির্বাচনি আমেজ, প্রার্থী পড়ে রয়েছেন রাজধানীর বাসায়।

সদর উপজেলার রামগঞ্জ গ্রামের তৌহিদুর রহমান জানান, কিংস পার্টি হিসেবে তাদের আবির্ভাব হয়েছে। তাদের ওয়ার্ড-ইউনিয়ন, উপজেলা-জেলায় একজন নেতা-কর্মীর দেখে মিলেনা, নেই কোনো কমিটি।

এ বিষয়ে ‘ডাব’ প্রতীক প্রার্থী মোরছালিন ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। জেলায় কমিটি আছে কিনা সেই বিষয় অজানা। জেলায় দলীয় অফিস কোথায় আছে নাকি নেই বলতেই পারেননি তিনি। অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় অবস্থান করেছেন। কাল-পরশু আসবেন এলাকায়।

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন খলিলুর রহমান। তার রাজনীতির শুরুটা ইসলামী ছাত্র শিবিরের হাত ধরে পরে বিএনপির রাজনীতিতে মিশে যায়। তবে, পালা বদলের শেষ কোথায়? ক্ষমতার নেশায় আবার দলের পরিবর্তন! হাল ধরলেন কিংস পার্টি খ্যাত তৃণমূল বিএনপির। তাদের হয়ে করছেন নির্বাচন। তাদের অবস্থান প্রায় নীলফামারী-১ আসনের মতোই রয়েছে। তবে, তারা অনেকটা প্রচারনায় এগিয়ে রয়েছে। শহর ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাটিয়েছে ব্যানার-পোস্টার। মাঠে প্রচারনার লোকজন না থাকায় অটোগাড়ি আর মাইক যেন প্রচারের তাদের সম্বল।

আনিছুর নামের এক জামায়াত কর্মী জানান, খলিলুর রহমান শিবির করতো, পরে বিএনপিতে যোগদান করে। এবার শুনতেছি তিনি নাকি সোনালী আশঁ নিয়ে নির্বাচনে করছেন। কোনো মিছিল মিটিং এখনো দেখা যায়নি। জলঢাকা বাজারে গেলে দুই একটা পোস্টার চোখে পড়ে।

চমক সাবেক বিএনপি নেতা/বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

সারাদেশের বিশিষ্ঠজন-রাজনৈতিক ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে দলের চেয়ারম্যান জেনারেল মুহাম্মাদ ইব্রাহিম বীর প্রতিকের গ্রহণ যোগত্য আর ব্যাপক পরিচিতি থাকলেও সাধারণ ভোটারের কাছে তাদের সংগঠন পরিচিতি নেই বললে চলে। জেলায় নেই কোনো দলীয় কার্যালয়। এ আসনে যে প্রার্থী বাদশা আলমগীর রয়েছেন তিনি এক সময় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা ছিলেন। তিনি পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক। দলের সাথে পরিচয় শিবিরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সেক্রেটারী ও বর্তমান সংগঠনের মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুনের সুবাদে। আর সেই সুবাদে তিনি অমাবস্যার চাঁদের মতো প্রার্থী হয়ে উঠেছেন।

জামায়াতে ইসলামীর এক উপজেলা নেতা জানান, শুনেছি জেলার বাহিরে থাকাকালীন জামায়াতে সাংগঠনিক সর্বোচ্ছ মানে উন্নতি হতে না পারায় বাদশা আলমগীর সংগঠনের পিছু ছেড়ে অন্য কিংস পার্টি তথা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির হয়ে নির্বাচনে গেছেন। তিনি সংগঠনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত নেই।

নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনে তৃণমূল বিএনপির আব্দুল্লাহ আল নাসের অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নোঙর প্রতিকে নির্বাচনের অংশ নিয়েছে। তারা দু’জনে সাইব্রেরীয় অতিথি পাখির মতো। শীত এলে যেমন বাংলাদেশে পশ্চিমাঞ্চল থেকে অতিথি পাখিরা এ অঞ্চলে আসে। তেমনি তৃণমূলের নাসের ও বিএনএমের এম সাজেদুল করিম। এলাকায় তেমন কোনো পরিচিতি না থাকলেও নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচিতি লাভের জন্য এসেছে।

রোহানুর নামের এক ব্যক্তি জানান, তাদের সম্পর্কে কিছুই বলার নেই। তারা আমাদের অতিথি পাখি। এত দিনে তাদের নামও জানতাম না। দেখতেছি দাঁড়ি-টুঁপি পড়ে মার্কা টানিয়েছে। এর আগে একজন অতিথি আসলেন ৫ বছর কোনো উন্নতি দেখতে পারেনি সৈয়দপুরবাসী। সৈয়দপুর এতো বড় শহর কোথাও দলীয় কিংবা নির্বাচনী কোনো অফিস নেই।

Wordbridge School
Link copied!