• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

জোরপূর্বক ফসলি জমির মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ


কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৫, ২০২৪, ১১:২২ এএম
জোরপূর্বক ফসলি জমির মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ

মাদারীপুর: মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় ফসলি জমির মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

কৃষকদের অভিযোগ, মাটি ভরাটে বরাদ্দ থাকলেও ঠিকাদারের লোকজন ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন। কাজে বাধা দিলে দেওয়া হচ্ছে হুমকি।

প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাননি উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের পরিপত্তর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ২০ কৃষক। তবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে ও অনুসন্ধান করে জানা গেছে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (এমএসআরডিপি) আওতায় মাদারীপুর-শরীয়তপুর-বরিশাল জেলায় ১২০০ মিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি ৮৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা। যেখানে মাটি ভরাটে ব্যয় ধরা হয় ১৫ লাখ টাকা।

পিরোজপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএফটিই-ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে গত বছরের আগস্টে শুরু হয় এই প্রকল্পের কাজ। কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৫ সালের আগস্টে।

পরিপত্তর গ্রামে ভেকু মেশিন দিয়ে মিলন আকন, মুজাফ্ফর আকন, মোশারফ আকন, শাহ আলম হাওলাদারসহ ১৫ থেকে ২০ জন কৃষকের জমির মাটি কেটে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সড়কের পাশের বহু গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, তারা বাধা দিলে মামলা ও হামলার হুমকি দিচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি বাবুল আকন।

ভুক্তভোগী কৃষক মোশারফ আকন বলেন, “এই গ্রামে একটি রাস্তা অনেক দিন ধরেই প্রয়োজন ছিল। সরকার থেকে একটি রাস্তা বরাদ্দ হয়েছে। রাস্তা নির্মাণে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু রাস্তার কাজে মাটি বাইরে থেকে আনার কথা।

সেই হিসেবে রাস্তার মাটির জন্য আলাদাভাবে বরাদ্দ ধরা হয়েছে। অথচ আমাদের কৃষকের জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছে ঠিকাদার। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের প্রতিনিধি বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন।

তিনি আরও বলেন, “আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। কী করব বুঝতে পারছি না। আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। মাছের ঘেরের পাড়ের মাটিও কেটে নিয়েছে তারা। রাস্তা নির্মাণে পাঁচ শতাধিক গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”

আরেক কৃষক শাহ আলম হাওলাদার বলেন, “নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। আমার জমির শতাধিক গাছ কেটেছে ঠিকাদারের লোকজন। ফসলি জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তায় দিয়েছে।

এখন বোরো আবাদের সময়; কিন্তু জমিতে পানি থাকায় চাষাবাদ করতে পারছি না। এতে করে বিপদে পড়েছি।”

মুজাফ্ফর আকন নামে আরেক কৃষক বলেন, “হুমকি-ধামকির শেষ নেই। জোর করে ফসলি জমি থেকে মাটি নিয়েছে। এ ছাড়া গাছপালা কেটে ফেলেছে।”

মাদারীপুর জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসনের কাছে আবেদন, এ ঘটনায় জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি বাবুল আকনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভি করেননি।

কালকিনি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, “এলাকার মানুষকে ম্যানেজ করে ঠিকাদার মাটি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু কারো ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না।

“রাস্তা নির্মাণ করার বিষয়টি আমাকে কয়েকজন অবগত করেছেন। আমি ঠিকাদারকে বলে দিয়েছি বিষয়টি সমাধান করার জন্য।”

কালকিনি ইউএনও উত্তম কুমার দাশ বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করার এখতিয়ার কারো নেই। এ ব্যাপারে এলজিইডির প্রকৌশলীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাদারীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল কীর্তনিয়া বলেন, “সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

সোনালীনিউজ/এএ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!