• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শাওন-সুমন-সোহাগ-সিফাত— এই ভাইয়েরা কারা?


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২১, ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
শাওন-সুমন-সোহাগ-সিফাত— এই ভাইয়েরা কারা?

ঢাকা : রিয়েল সার্ভিস, ১০০ শতাংশ নিরাপদ, স্মৃতিময় জীবনে আপনি কি একা?, এখানে এসি-নন এসি রুম ভাড়া দেওয়া হয়, আসার আগে ফোন দিয়ে আসবেন— এরকম তথ্যসংবলিত নানা রং-বেরঙয়ের ভিজিটিং কার্ড রাজধানীর মিরপুরের ফুটপাত-ফুটওভারব্রিজ, রাস্তা-অলিতে-গলিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

কোনোটির গায়ে হোটেল আবাসিকের সঙ্গে স্পা সেন্টারও থাকে লেখা। কোনোটাতে ছোট্ট করে বেড রুমের ছবি। কোনোটায় গোলাপফুল বা ইন্টারনেট থেকে নামানো কোনো নারীর ছবিও থাকে। কিন্তু সেসব হোটেল বা স্পা সেন্টারের কোনো ঠিকানা উল্লেখ নেই। শুধু লেখা এলাকার নাম।

প্রতিটি কার্ডেই বড় করে মোবাইল নম্বরের পাশাপাশি থাকে একজন ভাইয়ের নাম। শাওন ভাই, সুমন ভাই, সাজু ভাই, তুষার ভাই, শিকর ভাই, সোহাগ ভাই, সিফাত ভাই, নাবিল ভাই, নিরব ভাই, নয়ন ভাই— এরকম ভাইয়ের নামের শেষ নাই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু মিরপুর এলাকাতেই এরকম ৩০ জন ভাই আছেন। আবার তাদের কার্ড বিলি করার জন্য আলাদা আলাদা রিপ্রেজেন্টেটিভও আছে।

মিরপুর ১৩ এলাকায় কথা হয় রাকিব (১৮) নামের একজন রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে। পটুয়াখালী থেকে আট মাস আগে ঢাকায় এসেছেন। তিনি সুমন ভাইয়ের কার্ড বিলি করে থাকেন।

রাকিব জানান, আট মাস ধরে এই কার্ড বিলি করছেন তিনি। এ জন্য তাকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সাধারণত ফুটপাত-ফুটওভারব্রিজ বা যেখানে লোকসমাগম বেশি হয় সেখানের রাস্তায় কার্ডগুলো ফেলে যান তিনি।

রাকিব বলেন, মিরপুরের এই ভাইয়েরা প্রায় ৩০ জনের মতো হবে। এখানে রুম ভাড়া দেওয়া হয়। আমি শুধু সুমন ভাইয়ের কার্ড বিলি করি। ফোন দিয়ে কথা বলে যাইয়েন। শাহআলী প্লাজার পাশেই। রুমগুলোতে গার্লফ্রেন্ড নিয়েও যাওয়া যায় বলে জানান রাকিব।

এসব ভিজিটিং কার্ডে স্থানীয় বাসিন্দা, দোকানকার ও পথচারীরা বিরক্ত। স্থানীয়রা বলছেন, দেহ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চক্র এসব ভিজিটিং কার্ড পাড়া-মহল্লা-অলি-গলিসহ রাস্তায় ফেলে রাখছে। এরা মূলত যৌনকর্মীদের দালাল হিসেবে পরিচিত।

মিরপুর ১৩ এলাকার একটি আবাসিক এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিকিউরিটি গার্ড দেশ রূপান্তরকে জানান, তাদের মেইন গেট ও ফুটপাত থেকে প্রতিদিন কার্ডগুলো ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়। ভোরের দিকে ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী পোলাপানেরা এই কার্ডগুলো ছিটিয়ে দ্রুত চলে যায়। এগুলো খারাপ কাজের জন্য ফেলে রাখে তারা।

ভিজিটিং কার্ডে পাওয়া সুমন ভাইয়ের নম্বরে ফোন দিলে অপর প্রান্ত থেকে তা রিসিভি করেন মধ্য বয়সী এক পুরুষ। দেশ রূপান্তরকে তিনি জানান, স্কুল, কলেজ, ইউনির্ভাসিটি পড়ুয়া ছাত্রী, ভাবি, বৌদিসহ মধ্য বয়সি অনেক নারী তার কালেকশনে আছে। ঠিকানা জানতে চাইলে ওই পুরুষ সরাসরি ঠিকানা না দিয়ে মিরপুর-১০ নম্বরে গিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।

সুমন বলেন, সামনে আসেন, সামনাসামনি কথা বলি। আপনি নিশ্চিন্তে আইয়া পড়েন শাহ আলী মার্কেটের সামনে। কথা বলি, তার পর গিয়া এনজন করেন।

এ সব ভিজিটিং কার্ড প্রসঙ্গে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ছাব্বীর আহম্মেদ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ভিজিটিং কার্ড কেন রাস্তায় পড়ে থাকবে। এসব কী রাস্তায় পড়ে থাকার জিনিস নাকি!

বিষয়টি কী সেটি তাকে অবহিত করলে ওসি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কাছে পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই। তবে কার্ডসহ আমরা হাতে-নাতে কাউকে ধরতে পারলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সূত্র : দেশ রূপান্তর

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!