• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ডেল্টা লাইফের নতুন প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১১, ২০২১, ০৭:৩১ পিএম
ডেল্টা লাইফের নতুন প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ

ফাইল ছবি

ঢাকা : বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ডেল্টা লাইফ কর্তৃক দুদকে দাখিলকৃত ৫০ লাখ টাকার ঘুষ দাবির অভিযোগ ডেল্টা লাইফের প্রশাসক কর্তৃক প্রত্যাহার করার প্রচেষ্টার কারণে কেন প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর রুল জারি করেছেন আদালত। অন্য আরেক আদেশে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যথাসময়ে তদন্ত পূর্বক রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদালত অবমাননার আদেশ প্রদান করেন। কোম্পানির পরিচালক জেয়াদ রহমান হাইকোর্ট বিভাগে একটি আদালত অবমাননার পিটিশন দায়ের করেন।  

জানা গেছে, দুদকে তদন্তাধীন ও মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা থাকা সত্বেও সেই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষে অভিযোগকারী পল্লব ভৌমিককে চাপ সৃষ্টি ও আদেশ প্রদানের জন্য ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নবনিযুক্ত প্রশাসক সুলতান-উল আবেদীন মোল্লা’র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আদেশ জারি করেছেন মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান-এর দ্বৈত বেঞ্চ। এছাড়া উক্ত বেঞ্চ অন্য আরেক আদেশে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যথাসময়ে তদন্ত পূর্বক রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন ডেল্টা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির বিষয়টি যখন দুদকে তদন্তাধীন এবং মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ উক্ত তদন্ত দ্রুত পরিচালনার জন্য দুদককে নির্দেশ প্রদান করেছেন। এমতাবস্থায় ডেল্টা লাইফের নবনিযুক্ত প্রশাসক সুলতান-উল আবেদীন মোল্লা কোম্পানির পক্ষে দুদকে অভিযোগকারী পল্লব ভৌমিককে ভয়ভীতি প্রদর্শন পূর্বক দুদকে দায়েরকৃত অভিযোগ প্রত্যাহারের নির্দেশ প্রদান করেন। 

পল্লব ভৌমিক উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে গুলশান থানায় উপস্থিত হয়ে একটি জিডি নং ৭৬৩, তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি দায়ের করেন। এরপর কোম্পানির প্রশাসক সুলতান-উল আবেদীন মোল্লা গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে বিকাল ৫টা ২০ মিনিট হতে রাত ৯টা পর্যন্ত পল্লব ভৌমিককে কোম্পানির গুলশান হেড অফিসের ১৪ তলায় আটকিয়ে রেখে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং দুদকের অভিযোগটি অসত্য ও বানোয়াট মর্মে প্রত্যাহরের জন্য প্রশাসক একটি লিখিত আদেশ প্রদান করেন যাহা বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ৯৬ এ প্রদত্ত প্রশাসকের ক্ষমতা ও দায়িত্ব বহির্ভূত। 

উল্লেখ্য যে, এই সময় আইডিআরএ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন ফোনে পল্লব ভৌমিকের সাথে কথা বলে দুদকের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে পল্লব ভৌমিককে দিয়ে দুদকে মামলা প্রত্যাহারের একটি আবেদন দাখিল করা হয়।

এছাড়া মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. মজিবর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ কামরুল হোসেন মোল্লাহ এর দ্বৈত বেঞ্চে প্রশাসক নিয়োগের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে রীট পিটিশন নং ২০৯৩/২০২১ দায়ের করা হয়। শুনানী অন্তে মহামান্য হাইকোর্ট রুল এবং স্ট্যাটাস-কো অর্ডার জারী করেন। উক্ত মামলা পেইন্ডিং থাকা অবস্থায় পল্লব ভৌমিকের উপরে প্রশাসক এবং আইডিআরএ-এর চেয়ারম্যান কর্তৃক ভয়ভীতি প্রদর্শন পূর্বক ডেল্টা লাইফ কর্তৃক দুদকে দাখিলকৃত ৫০ লাখ টাকার  উৎকোচ দাবীর অভিযোগ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়। 

উপরোক্ত ঘটনার বিষয়টি এক আবেদনের মাধ্যমে আদালতের নজরে আনলে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে উভয় পক্ষের শুনানী অন্তে আদালত প্রশাসককে তার নিয়োগপত্রে উল্লিখিত দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং দুদকে দায়েরকৃত অভিযোগটি প্রত্যাহারের বিষয়টি আমলে না নেয়ার জন্য দুদককে নির্দেশ প্রদান করেছেন। 

উল্লেখ্য যে, ডেল্টা লাইফ গত ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে ড. এম. মোশাররফ হোসেনর বিরুদ্ধে অডিও ক্লিপসহ উৎকোচ দাবীর বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে, তার ঠিক ৩ দিন পর নাম মাত্র শুনানীর আয়োজন করে, ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষকে শুনানীতে কোনরূপ কথা বলতে না দিয়ে তড়িঘড়ি করে শুনানী শেষ করা হয়। উক্ত শুনানীতে ডেল্টা লাইফ আইডিআরএ কর্তৃক কারণ দর্শানোর নোটিশের বিপরীতে ১৭ পৃষ্ঠা সম্বলিত লিখিত জবাব প্রদান করে। কিন্তু ঐ লিখিত জবাব পর্যালোচনা না করেই মিটিং শেষ হওয়ার মাত্র ৪৫ মিনিট সময়ের মধ্যে প্রশাসক নিয়োগ করেন। যার সংবাদ মিডিয়াতে চলে আসে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ৪৫ মিনিট সময়ের মধ্যে কিভাবে ডেল্টা লাইফের লিখিত জবাব পর্যালোচনা করে প্রশাসক নিয়োগের ৫ পৃষ্ঠা সম্বলিত চিঠি প্রস্তুত করা সম্ভব হয়? তাছাড়া কমিশনের মিটিংই বা কখন হলো? সুতরাং ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারণে, হয়রানীর উদ্দেশ্যে এবং দুদকে দায়েরকৃত অভিযোগ যে কোনো ভাবে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করার জন্য কোনরূপ আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই তড়িঘড়ি করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন। শুধু তাই নয়, সুলতান-উল আবেদীন মোল্লাও প্রশাসক হিসেবে নিরপেক্ষ দায়িত্ব ও ভূমিকা পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন।

যেখানে বিষয়টি দুদকে তদন্তাধীন এবং মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে বিষয়টি তদন্তের জন্য, সেখানে অভিযোগটি অসত্য ও বানোয়াট বলে প্রত্যাহার করার নির্দেশ প্রদান সুস্পষ্ট আদালত অবমাননা, বিধায় কোম্পানির পরিচালক জেয়াদ রহমান মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে একটি আদালত অবমাননার পিটিশন দায়ের করলে বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান এর দ্বৈত বেঞ্চ আজ এই আদেন দেন।

সোনালীনিউজ/আরএইচ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!