• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়মের তোয়াক্কা না করে চলছে আকিজ তাকাফুল লাইফ


আবদুল হাকিম জুন ২১, ২০২৩, ০৬:০৯ পিএম
নিয়মের তোয়াক্কা না করে চলছে আকিজ তাকাফুল লাইফ

ঢাকা: অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত আকিজ তাকাফুল ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স পিএলসি। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চলছে কার্যক্রম।বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা পলিসি চালু, নিয়োগ ছাড়াই চাকরি, কোম্পানির ১ম বছরে অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বীমা উন্নয়নও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (আইডিআরএ)।

বীমা কোম্পানিটিতে আইডিআরএ'র চালু করা ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা’ পলিসিটি চালুর বিষয়ে রয়েছে ধোয়াশা। কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নতুন এই প্রোডাক্টটির ডিজাইনের কাজ চলছে বললেও সোনালী নিউজের অনুসন্ধানে তার কোনো কার্যক্রম চোখে পরেনি। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিমার ভূমিকা জোরালো করতে যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বদ্ধপরিকর, পাশাপাশি এ সংক্রান্ত তথ্য নির্ধারিত ছকে প্রতি মাসের ৭ তারিখে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়াও এই বিমা পলিসি দ্রুত বাস্তবায়নে সব কোম্পানি এগিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত আকিজ তাকাফুল ইনস্যুরেন্স এ নির্দেশনা আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রাহকরা।

এদিকে, প্রতিষ্ঠানটিতে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন মো. মাসুদুজ্জামান খান রিপন। এই কর্মকর্তা নিয়োগপত্র ছাড়াই বিমা কোম্পানিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন এবং বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। এছাড়া বিমা কোম্পানির পাশাপাশি তিনি আকিজ গ্রুপেরই অপর এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। যা বিমা আইন লঙ্ঘন বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

সোনালী নিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যবসা শুরুর প্রথম বছরেই অস্বাভাবিক ব্যয় করেছে আকিজ তাকাফুল। কোম্পানিটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। কিন্তু সে সময় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় করে। মাত্র ছয় মাসেই অতিরিক্ত ব্যয় করে ১ কোটি ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এমন মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে কোম্পানির লাইফ ফান্ড সে বছর নেগেটিভ হয়েছিল ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। এখনো সেই অতিরিক্ত ব্যয় প্রবণতা রয়ে গেছে। ফলে এখানে গ্রাহকের সঞ্চিত আমানত কতটুকু সুরক্ষিত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে মেয়াদপূর্তির পর গ্রাহকের টাকা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটি হিমশিম খাবে এবং সার্বিকভাবে বিমা সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে বলে শঙ্কা রয়েছে।

আইডিআরএ এক গ্রাহকের দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোম্পানিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে আকিজ গ্রুপের কর্মকর্তারা। বিমা কোম্পানিটির হিসাব বা প্রশাসন বিভাগের ছোট ছোট নোট অনুমোদন করতেও গ্রুপ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হয়। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হয়েও প্রাইভেট কোম্পানির মতো পরিচালনা করা হচ্ছে এই বিমা কোম্পানিকে। স্বয়ং বিমা কোম্পানির সিইও নিজেও একক সিদ্ধান্তে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না। এতে অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরো অসহায় হয়ে পড়ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম।

সোনালী নিউজের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিমা আইন লঙ্ঘন করে এখন পর্যন্ত সিইও নিয়োগ দেয়নি কোম্পানিটি। ২০২১ সালের ২৭ জুন প্রতিষ্ঠার পর আকিজ তাকাফুলে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন আলমগীর চৌধুরী। সে সময় প্রতিষ্ঠানটিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকায় তাকে মুখ্য নির্বাহীর চলতি দায়িত্ব (সিসি) দেওয়া হয়। তখন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় দুই বছর ধরে সিইওর চলতি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। অথচ বিমা আইনে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে মোট ছয় মাস পর্যন্ত মুখ্য নির্বাহীর চলতি দায়িত্ব পালনের সুযোগ আছে।

অন্যদিকে সিইওর চলতি দায়িত্ব পালন করা আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। এ সম্পর্কে জানা যায়, তাকে সিইও অনুমোদন দিতে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর আইডিআরএ কে চিঠি দেন কোম্পানির চেয়ারম্যান শেখ শামীম উদ্দিন। সেখানে সিইওর সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো হয় ২০০৪ সালে দ্যা ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনার ওপর অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৩ সালে। কিন্তু এর ১৬ বছর পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে স্বদেশ লাইফে দাখিল করা জীবনবৃত্তান্তে শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো হয়েছে ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম ডিগ্রি অর্জন। প্রশ্ন উঠেছে মাত্র দুই বছর আগে দাখিল করা জীবনবৃত্তান্তে তিনি তবে এই অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের তথ্য গোপন করলেন কেন? নাকি মাত্র দুই বছরেই তিনি দ্যা ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা থেকে চার বছরের অনার্স ও এক বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন?

এদিকে অভিযোগ ওঠার পর বিষয়গুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মকর্তা আবদুর রহিম মাসুদ এবং শাসমুল আলমের সমন্বয়ে একটি তদন্ত দল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এসব বিষয় নিয়ে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) আলমগীর চৌধুরী সোনালী নিউজকে বলেন, আমাদের কোম্পানি নতুন। আগের বছর ব্যবস্থাপনা ব্যয় যা হয়েছে তা অস্বাভাবিক বলার সুযোগ নেই। আমরা ২০২১ সালের নভেম্বরে অপারেশন শুরু করেছি। সেই হিসেবে বছরের মাত্র দেড় মাস আমাদের কার্যক্রম চলেছে। ২০২২ সালে আমাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেক কমে গেছে। চলতি বছরের অনুমোদিত সীমার মধ্যেই ব্যবস্থাপনা ব্যয় থাকবে।

আইডিআরএর তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবীমা আমরা চালু করেছি। এটা আমরা অবহেলা করছি এ তথ্য ঠিক নয়।

ডিএমডি ও চিফ অপারেটিং অফিসার মাসুদুজ্জামান খান রিপনের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়োগ না পেলে তিনি কীভাবে কোম্পানিতে কাজ করছেন? আমাদের এই অফিসে বসার জায়গা না হওয়ায় তিনিসহ আরও কয়েকজন কর্মী গ্রুপের অফিসে বসেন। এটাকে অন্যভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে তিনি বলেন, যে সব কোম্পানিতে বিকম পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করলেই ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল হয়েছে সেখানে তাই করা হয়েছে। তবে সিইও হওয়ার জন্য আমি দ্যা ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার সনদ দিয়েছি। এটাও আমি লেখাপড়া করেই অর্জন করেছি। 

আলমগীর চৌধুরী দাবি করে বলেন, বীমা সেক্টরে আমার অনেক অর্জন রয়েছে। একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্য তথ্য ছড়াচ্ছে। আমি বীমার উন্নয়নের জন্য কাজ করছি।

সোনালীনিউজ/এএইচ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!