• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

তাপপ্রবাহের উচ্চ ঝুঁকিতে ২১ জেলার মানুষ


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ১১:৩২ এএম
তাপপ্রবাহের উচ্চ ঝুঁকিতে ২১ জেলার মানুষ

ঢাকা: তাপপ্রবাহের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন ২১ জেলার অধিবাসীরা। সিলেট ও নেত্রকোনা জেলায় তাপপ্রবাহ না থাকলেও তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র তুলে ধরেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। সরকারের কাছে দেওয়া তাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তাপপ্রবাহের কারণে সারা দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষ সবচেয়ে কষ্ট ও বিপদে আছেন। এর বড় অংশ প্রচণ্ড গরমের কারণে দৈনন্দিন কাজ করতে পারছে না। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সংস্থাটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান তাপপ্রবাহের চিত্র তুলে ধরেছে এবং সারা দেশের তাপপ্রবাহ নিয়ে একটি মানচিত্র তৈরি করেছে।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মানচিত্র অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি উষ্ণতার বিপদে থাকা ২১ জেলা হচ্ছে সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও বাগেরহাট।

মানচিত্রে দেখা যায়, তাপপ্রবাহের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে ২১ জেলা। আর ১৪টি জেলা ২১ জেলার চেয়ে কিছুটা কম ঝুঁকিতে আছে। বাকি জেলাগুলো কিছুটা কম গরমের ঝুঁকিতে রয়েছে। আর দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ গরমের কারণে নানা মাত্রার ঝুঁকিতে বসবাস করছে।

শুধু তা-ই নয়, গত ২৯ দিনে সারা দেশের গড় তাপমাত্রা এই প্রথম প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ৭৬ বছরের আবহাওয়ার তথ্য রয়েছে। সে তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা ২৯ দিন দেশের বড় অংশজুড়ে তাপপ্রবাহ ছিল না। এবারই প্রথম অতি উষ্ণতার কবলে পড়ল দেশের বড় অংশ।

লাল সতর্কতা জারির পরামর্শ
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, গতকাল দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫০ শতাংশের বেশি। এই আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা কোথাও থাকলে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা থেকে ওই এলাকার অধিবাসীদের জন্য লাল সতর্কতা (রেড অ্যালার্ট) জারির পরামর্শ রয়েছে। 

ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের তাপপ্রবাহের শিকার দেশগুলোতে এ ধরনের তাপমাত্রায় লাল ও কমলা সতর্কতা জারি করেছে। বাংলাদেশ ১৯ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে।

গবেষকেরা বলছেন, দেশের বড় শহরগুলোতে গরমের কারণে মানুষের ভোগান্তি ও বিপদ সবচেয়ে বেশি। গত বছরের জুনে কানাডার ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়; অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়; চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছিল, দেশের পাঁচটি প্রধান শহরের ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রচণ্ড গরমের বিপদে রয়েছেন।

গরমের অনুভূতি আরও বাড়বে
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, গতকাল দেশের সিলেট, নেত্রকোনা এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশ বাদে বাকি এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থেকেছে। আর গরমের অনুভূতি এর চেয়ে ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি ছিল। বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘ ও জলীয় বাষ্প আসা বেড়ে যাওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে গেছে। ফলে গরমের অনুভূতি বেড়ে গেছে।

তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির কারণ
‘বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে তাপপ্রবাহের বিপন্নতা: একটি মূল্যায়ন’ শীর্ষক যৌথ গবেষণায় দেশের বড় শহরগুলোয় তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির দুটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এক. দ্রুত নগরায়ণ ও ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ; দুই. ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়াগত পরিবর্তন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়াগত কারণে সবচেয়ে কম তাপপ্রবাহপ্রবণ এলাকা হওয়ার কথা ছিল ঢাকা শহরের। আর রাজশাহী ও সিলেট সবচেয়ে তপ্ত শহর হওয়ার কথা। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে তার উল্টো। ঢাকার ৭৮ শতাংশ বা ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে পড়েছে। কিন্তু রাজশাহীতে ওই হার মাত্র ৪৫ শতাংশ বা ৪ লাখ মানুষ এ ঝুঁকিতে পড়েছে।

গরমের কারণে ঢাকাসহ ৩০টি জেলায় তাপপ্রবাহ তীব্র ঝুঁকি তৈরি করছে। এসব এলাকার দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা দরকার। তাদের জন্য খাওয়ার পানি ও গরম থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্র করতে হবে। নয়তো ক্ষয়ক্ষতি ও বিপদের আশঙ্কা বাড়বে।

এআর

Wordbridge School
Link copied!