• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি কর্মচারীদের যে সুখবর দিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী


সোনালীনিউজ ডেস্ক নভেম্বর ৫, ২০২২, ১১:২১ এএম
সরকারি কর্মচারীদের যে সুখবর দিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: পদ না থাকলেও সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে প্রতিবছর প্রশাসন ক্যাডারের অনেক বেশিসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। প্রশাসন বাদে অন্য ক্যাডারে এভাবে পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় প্রশাসনের ভেতরেই ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে পদ ছাড়া পদোন্নতির দুর্নাম ঘোচাতে জনপ্রশাসনের জনবল কাঠামো হালনাগাদ করে স্থায়ী পদের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত মঙ্গলবার ২৫৬ জনকে উপসচিব এবং গত বুধবার ১৭৫ জনকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে।

তবে পদোন্নতি পেলেও পদ না থাকায় বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের দপ্তরে নিচের পদে কাজ করতে হচ্ছে। ছোটদের পদে কাজ করতে অনেকের মধ্যে রয়েছে অস্বস্তি।

জনপ্রশাসনে এখন সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৯৬টি স্থায়ী পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে ৬ হাজার ৭৯৫ জন কর্মরত আছেন। পদের থেকে অনেক বেশি কর্মকর্তা কর্মরত থাকায় স্থায়ী পদের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে যাচ্ছে সরকার।

বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি পদের বিপরীতে ৪১৪ জন, যুগ্মসচিবের ৫০২টি পদের বিপরীতে ৮৮৮ জন, উপসচিবের ১৭৫০ জনের বিপরীতে আছে ১ হাজার ৬৫২ জন, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিবের ১ হাজার ১৪৩টি পদের বিপরীতে ২ হাজার ৯৩৯ জন কাজ করছেন। পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি দেয়ায় এলোমেলো হয়ে গেছে জনপ্রশাসনের পিরামিড আকারের জনবল কাঠামো।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নতুন পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অর্গানোগ্রাম (কাঠামো) আপডেট করা হচ্ছে। জনবল কাঠামো আপডেট করে দ্বিগুণ করা হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ নিয়ে কাজ করছে। জনবল কাঠামো আপডেট হলে পদের বেশি পদোন্নতির দুর্নাম আর থাকবে না।’

পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তা পদোন্নতি দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সরকারের প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৭০০টি, সব প্রকল্পে একজন করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প তৈরি হলেও সেজন্য আলাদা অর্গানোগ্রাম তৈরি করা যায় না। অনেক মন্ত্রণালয় সেখানে নিজেদের কর্মকর্তা নিয়োগ না দেয়ায় সেখানেও জনপ্রশাসন থেকে কর্মকর্তা দিতে হয়েছে।

‘প্রশিক্ষণ, পড়াশোনা, অসুস্থতা, চাকরি ছেড়ে দেয়া, লিয়েন- এসব কারণে সব কর্মকর্তা সব সময় কাজে নিয়োগিত থাকে না। ফলে অর্গানোগ্রামে যত পদ থাকবে তত কর্মকর্তা দিয়েও হবে না, বাড়তি কর্মকর্তা সব সময়ই রাখতে হবে। কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় ডেস্কের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। ফলে দপ্তরগুলোতে কর্মকর্তা বেশি লাগছে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবের দুটি পদের বিপরীতে ১৩ জন, যুগ্মসচিবের পাঁচটি পদে ২১ জন এবং উপসচিবের ২৩টি পদে ৪৫ জন কর্মরত আছেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে একজন অতিরিক্ত সচিবের পদ থাকলেও অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত আছেন ছয়জন। আর সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিবের ১৭টি পদে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চিত্রই এমন।

অতিরিক্ত পদোন্নতিতে খরচ বাড়ছে

পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি দেয়ায় বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। তা ছাড়া পদোন্নতির পর কর্মকর্তাদের নিচের পদে কাজ করতে হয় বলে জনপ্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ভাঙছে।

বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর কর্মকর্তারা বেতন কাঠামোর নবম গ্রেডে কাজে যোগ দেন। এরপর ক্যাডারভিত্তিক তাদের পদোন্নতি হয়। পদোন্নতি বিধি অনুযায়ী, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ২৫ শতাংশ পদ নির্ধারিত। ফলে উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত সরকারের পদগুলোতে ৭৫ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা রয়েছেন।

পদের চেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ায় তাদের বেতন স্কেল বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের বেতন-ভাতা, পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাবদ সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। তবে পদের অতিরিক্ত পদোন্নতিতে প্রতি বছর কত টাকা বেশি লাগছে সেই তথ্য নেই।

কর্মকর্তাদের নিচের পদে কাজ করতে হলেও জনপ্রশাসনের চেইন অব কমান্ডে কোনো ঝামেলা হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন তিনি বলেন, ‘তবে বিষয়টি একটু দৃষ্টিকটু লাগতেই পারে।’

রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী সচিব বা সহকারী সচিবদের ডেস্কের কাজগুলো করার কথা। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ পদে বসে আছেন উপসচিবরা। উপসচিবদের সিনিয়র সহকারী সচিবের সঙ্গে কাজ করার কথা থাকলেও এখন তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে।

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান মনে করেন জনপ্রশাসনের কাঠামো এলোমেলো হয়ে গেছে। এই কাঠামো ঠিক করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মকর্তারা কাজটা ঠিকমতো করতে পারছেন কি না, সেটিই আসল কথা। ক্ল্যাসিক্যাল কাঠামোটা এখন কাজ করছে না। এখন একটা প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস হওয়া জরুরি। এই কাঠামো ঠিক না করলে লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হবে। সরকারের কাজ বেড়েছে। ফলে আশির দশকের কাঠামোটি পরিবর্তন হওয়া দরকার।

যেভাবে পদের চেয়ে পদোন্নতি বেশি

সরকারের কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে নতুন নতুন বিভাগ ও অনুবিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে সময়ে সময়ে জনবল কাঠামো হালনাগাদ করা হয়নি।

বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিচালক এবং সমমানের পদগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কদর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। ওই সব পদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হলেও সেসব পদে সরকারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। এর বাইরে সরকারের প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী সেখানে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব এবং উপসচিবদের পদায়ন করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘যখন পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল তখন সরকারের এত প্রকল্প ছিল না। মন্ত্রণালয়গুলোতেও কাজের পরিধি অনেক বেড়েছে। উইংগুলোকে ভাগ করে একাধিক উইং করা হয়েছে। কিন্তু পদ সৃষ্টি করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যেই রাখতে হবে, বাইরে তো ওভাবে দেয়া যায় না। রাষ্ট্রদূত হিসেবে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মূল কাঠামোর বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা হচ্ছে। অতিরিক্ত সচিবদের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ওই পদগুলো কিন্তু আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোতে নেই, কিন্তু ওগুলো সরকারের পদ।’

জনবল কাঠামো হালনাগাদ করে মন্ত্রণালয়ের সব উইং প্রধানদের পদ অতিরিক্ত সচিব পদের করা হবে বলে জানান আবুল কাশেম। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর পুরো সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সূত্র : দৈনিক বাংলা

সোনালীনিউজ/এসআই

Wordbridge School

সংবাদ পত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর

Link copied!