ছবি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ঢাকা : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া বাংলাদেশ আজ ৪৬-এ পৌঁছলো। সময়ের হিসেব করলে কয়েকটি প্রজন্ম ইতিমধ্যে ’৭১-এর রক্তাক্ত বাংলার বুকে সবুজের সমারোহ ঘটাচ্ছে নির্ভীক চিত্তে। তবে তাদের সকলেরই পালহীন নৌকার যাত্রী হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। একজন নেতা, একজন বলিষ্ঠ নেতার অভাব বোধ বাঙালিকে সবসময়ে সংকুচিত করে রেখছে এবং রাখছে। এই অভাববোধ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য।
যিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। প্রাচীন বাঙ্গালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের জাতির জনক বলা হয়। এই মহান ব্যক্তিত্বকে ঘিরে ‘আমার চোখে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে লিখেছেন সমাজের বিশিষ্টজন। চলুন দেখে আসি তাদের চোখে এই অবিসংবাদিত নেতা কে-
বঙ্গবন্ধুর ছিল কালপোযোগী যোগ্যতা ও স্বপ্ন
আমার দৃঢ়ভাবে মনে করি- বঙ্গবন্ধু জনগণের স্বার্থ থেকে দূরবর্তী অবস্থানে থাকেননি, বেঁচে থাকলে বরং জনগণের ত্রাণকর্তা হিসেবেই ভূমিকা রাখতেন। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে সেই কালপোযোগী যোগ্যতা ও স্বপ্ন ছিল বলেই মনে হয়। ১৯৭৫ সালে বাকশালের ১১৫ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয় এবং ২১শে জুন ১৯ জেলাকে ৬১ জেলায় রূপান্তরিত করে প্রত্যেক জেলায় গভর্নর নিয়োগ করে এক নতুন ধরনের শাসন পদ্ধতির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই পদ্ধতি সেই সময়কালের বহু দেশের মডেলের ছায়া-প্রচ্ছায় ও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে নেওয়া হয়েছিল, যখন দেশকে বিভিন্ন সংকট উজিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মানুষের মধ্যেও এক ধরনের প্রণোদনা ছিল।
বিভিন্ন সময়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়- দেশের কালগত সংকট ও সমস্যা উপলব্ধি করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে মহান নেতারা এগিয়ে আসেন। সেই ধরনের সামর্থ্য ও মানুষের আহ্বান নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কালের সংকট মোকাবেলায় ‘বাকশাল’-এর মত একধরনের শাসন পদ্ধতির প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেন। সাধারণ মানুষের আশাভাজন ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর এই উদ্যোগ মানুষ ও দেশ বাঁচানোর পথ-পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতো কি না, তা প্রমাণে বঙ্গবন্ধু হাতে সময় পাননি।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ড এক কলঙ্ক অধ্যায়। তাঁকেসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়, পরবর্তী সময়ে তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারী জাতীয় নেতাদের হত্যা করা হয়। অর্থনৈতিক সাম্য জনগণের জীবনকে বিকশিত করবে- এমন আকাঙ্ক্ষাও ছিল-মানুষের মধ্যে। মানুষ একটি সুন্দর জীবন পাবেন- সেই আশাও করেছিলেন। আর এসবের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁকে হত্যার পর- মানুষের আকাঙ্ক্ষা দূরবর্তী হলো- গণতন্ত্রের বিভিন্ন দিক বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রেও শূন্যতা তৈরি হলো- সেই শূন্যতার কারণে আমাদের বহু ধরনের অগণতান্ত্রিক ও রক্তাক্ত অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে। গণতন্ত্র বিকাশে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়টি এখনো সংকট হিসেবেই বারবার ফিরে আসে।
ড. গোলাম কিবরিয়া পিনু
কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক
বঙ্গবন্ধু শোষিত বঞ্চিত মানুষের মহানায়ক
বঙ্গবন্ধু নামটি চোখে ভাসলেই মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত শোষিত বঞ্চিত মানুষের মহানায়ক। ছেলেবেলা যখন সাত মার্চের ভাষণ শুনতাম। মনে হতো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোনো কবি তাঁর কবিতা আবৃত্তি করছেন। ধীরে ধীরে বড় হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠি। বিশ্ব বিখ্যাত মানুষগুলো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কি বলেছেন সেগুলো জানতে পারি। এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমি একটি প্রবন্ধ লিখি বিখ্যাতদের চোখে বঙ্গবন্ধু যা গতবছর জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার ১৫ আগস্টের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশ হয়।
প্রজন্মের ভাবনার বিষয়ে যদি বলতে যাই, প্রথমেই বলবো আমি ধন্য এমন একটি দেশে জন্মগ্রহণ করে যে দেশের স্বাধীনতার মহানায়ক বা বাংলাদেশের স্থপতি বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম হিসাবে জনকের প্রতিটি ভাষণ আমি শুনেছি। এই প্রজন্মের একজন ক্ষুদ্র সাহিত্য সেবক বা বার্তা বাহক হিসাবে আমি কিছুটা হতাশ।
এই কারণে যে এই দেশ বঙ্গবন্ধু বা তাঁর আদর্শকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি। যদিও আমরা কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলি। কিন্তু বাস্তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম হিসাবে জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা চাই আমি। এবং আওয়ামীলীগের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ থাকবে আওয়ামীলীগের প্রতিটি নেতা কর্মীকে অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়া চীন বই তিনটি প্রতি বছরে একবার হলে পড়া বাধ্যতামূলক করা।
এ প্রজন্মের একজন বার্তা বাহক হিসাবে আমার চাওয়া দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ। পরিশেষে আমার কবিতার দুটি লাইন দিয়ে শেষ করছি-
‘একাত্তরের যুদ্ধে আমি নাইবা হলাম সৈনিক
সোনার বাংলা গড়তে এখন স্বপ্ন দেখি দৈনিক’
ফখরুল হাসান
কবি ও কাব্যশীলন প্রকাশক
শেখ মুজিব শুধু নেতা নন, শিক্ষকেরও শিক্ষক
বঙ্গবন্ধুর উপরে কখনো লিখিনি। লিখতে যেমন লোভ লাগছে, তেমনি করছে ভয়। কারণ এ মুহূর্তে আমি ব্যস্ত। ব্যস্ততার মধ্যে মহান নেতাকে নিয়ে লিখতে যেয়ে যদি কথাও ভুল করি! তিনি বঙ্গবন্ধু, তাঁকে নিয়ে কোন ভুল করার সুযোগ নেই। কারণ, তিনি অন্তরের নেতা। তবে এটাও তো সত্যি, অন্তরে যার বাস তাকে নিয়ে ভুল বা ভুল-ভয়ের সন্দেহ থাকবে কেন?
এভয়ের কারণেও ভাবি, প্রিয় মানুষকে নিয়ে কথা বলতে ভয় হবে কেন? তিনি তো আমার প্রিয়ই। প্রিয় মানুষের কাছে সকলই ক্ষমাযোগ্য। ফের প্রশ্ন জাগে, সবই কী ক্ষমাযোগ্য? যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, পিতা তাদের ক্ষমা করবেন? অবান্তর প্রশ্ন। তাদের কাছে তো তিনি প্রিয়ই ছিলেন না। তাহলে ক্ষমা কিসের? তাই তো জাতি আজও তাঁর হয়ে তাঁর হত্যার বিচার দাবি করে। বিচার করে জাতি পবিত্র হতে চায়।
কবে দেশ পবিত্র হবে তা জানা নেই। তবে শেখ মুজিব শুধু নেতা নন, শিক্ষকেরও শিক্ষক। তার বিষয়ে লেখা পাঠাতে আমার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ভয় জাগে। আমরা সেই মহান শিক্ষককে হারিয়ে শোকাহত।
প্রফেসর ড. এ, এইচ, এম, কামাল
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
শেখ মুজিবুর রহমান এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে যিনি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি আর কেউ নন, বাঙালি জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোনও জাতি যখন প্রকৃতই সংকটের সম্মুখীন হয় ঠিক তখনই সেই জাতির পরিত্রাণের জন্য পৃথিবীতে আবির্ভাব ঘটে কোনও না কোনও মহাপুরুষের।
বাংলাদেশের মানুষের কাছেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন এমনই এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কস্বরূপ। বর্তমান সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার বুকে যে স্বাধীন রাষ্ট্রটি বাংলাদেশ নাম নিয়ে আজ মানচিত্রে জ্বলজ্বল করছে, সেই লাল-সবুজের দেশটি গঠনে সব থেকে বড় ভূমিকা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। সে জন্যই আজ স্বাধীন বাংলাদেশ তাকে দিয়েছে বাঙালির জাতির পিতার সম্মান।
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ মুজিব ছাড়া আজকের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কখনো কল্পনাই করা যেত না। আমৃত্যু বাঙালি তথা বাংলাদেশের হিতের কথা চিন্তা করে যাওয়া মুজিবুর রহমানের এই দেশ তার শাসনকালে আদৌ সোনার বাংলা হয়ে উঠতে পেরেছিল কিনা তা বিচার্য নয়। বিচার্য এই যে সারা জীবন তিনি রাজনৈতিক ভাবে যা কাজ করেছেন, তা এই বাংলাদেশ তথা দেশবাসীর সামগ্রিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যেই তিনি করে গেছেন।
তার শাসনকালে গৃহীত নানা নীতির জন্য বিভিন্ন মহলে বঙ্গবন্ধু সমালোচিত হলেও আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন- সেই নীতিগুলো বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই গৃহীত হয়েছিল। এ কথা সন্দেহাতীত যে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জাতির নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান থেকে উপমা নিয়ে এক সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তৎকালীন কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান ফিদেল কাস্ত্রো এক মহান উক্তি করে গেছেন-
‘আমি হিমালয় দেখিনি, তবে আমি মুজিবকে দেখেছি।
ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় যিনি হিমালয়ের মতন।’
কে এইচ আর রাব্বী
গণমাধ্যম কর্মী
তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান, শ্রেষ্ঠ নেতাকে
সেটা ছিল সাদা কালো টেলিভিশনের যুগ, তখন ঘরে ঘরে এতো টিভি মিডিয়া ছিলো না। আমাদের বাড়িতে একটা সাদা কালো টিভি ছিল। হাতে গোনা কয়েকটি বাড়িতে টেলিভিশন ছিল। হয়তো তাই সমস্ত মহল্লার মানুষ আমাদের বাড়ির উঠোনে জমা হতো টিভি দেখার জন্য। আমাদের উঠোনে টিভি চালানো হতো, বিশেষ বিশেষ দিনে। সেই দিনটিও বিশেষ ছিল।
সময়টা ১৯৯৬। ১২ জুন বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণ হয়েছিল ১০ অথবা ১১ তারিখে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী নেত্রী হিসেবে টিভিতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রধান করেন। পরে ২২ জুন রাতে সাদাকালো টিভিতে প্রথমবারের মতো শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ ভাষণ দেখানো হয়। এর পূর্বে দুই-চার বার এই ভাষণ মাইকে শুনেছি। তবে আগে তো মাইকেও ঠিক মতো চলাতে দিতো না। তখনকার সরকার। শেখ মুজিবের ভাষণ মাইকে চালানো হলেই একদল এসে মাইক ভেঙে মারামারি বাঁধিয়ে দিতো। খুব ছোট বেলা থেকেই এই সব দেখেছি।
পারিবারিক ভাবে আমার বংশের লোক জন আওয়ামী দলের সাথে জড়িত হওয়ার সুবাদে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামীলীগ, নৌকা, শেখ হাসিনা! এই শব্দগুলো রক্তের সাথে মিশে গেছে। সেই ছোটবেলা থেকেই। তো সেদিন একদম প্রথম বার সাদাকালো টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ছবি দেখি। সেদিন আমি খুব কেঁদেছিলাম। শিহরিত হয়ে, অদ্ভুত এক বিস্ময়কর কষ্টে। জাদুকর, বাংলাদেশের জাতির পিতাকে দেখে বাচ্চা আমি আমার আবেগ সামলাতে পারিনি।
হাউমাউ করে সেকি কান্না। আমার কান্না দেখে আমার বড় আপু আমাকে জড়িয়ে ধরনের। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান, শ্রেষ্ঠ নেতাকে দেখলাম। একজন সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী যিনি, দার্শনিক, অসাম্প্রদায়িক চেতনার শ্রেষ্ঠ মহান বাংলাদেশের গড়ার কারিগর সেই নেতা আমার কাছে চিরকাল বিস্ময়কর মহান দার্শনিক। তার বাণী মানব কল্যাণের ঔষধি।
কবি সাফিনা আক্তার
বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের কণ্ঠ আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন
অসম্ভব সাহসী ও প্রত্যয়ী নেতৃত্বের দীক্ষায় বেড়ে ওঠা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠ আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক এ নেতা কখনওই রাষ্ট্রনায়ক হতে চায়নি, চেয়েছেন এদেশের মানুষের মুক্তি তথা উন্নতি। তেজোদীপ্ত নেতৃত্বের ভিতরে বাইরে আপাদমস্তক মানবিক গুণাবলী তাঁকে কখনওই শাসকের আবহে বন্দী হতে দেয়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রান্তিক মানুষের হৃৎস্পন্দন অনুধাবন করেছিলেন বলেই তার মহত্ব রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রীকে ছাপিয়ে গেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী এদেশে সু-শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি বিভাজন ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করার চেষ্টা করেছিলেন। হিংসা বিদ্বেষ কখনও তাঁকে ছুঁতে পারেনি বলেই মুক্ত স্বাধীন, প্রটোকলবিহীন জীবনযাত্রা বেশি পছন্দ করতেন।
বঙ্গবন্ধুকে কেউ মারতে পারে কিংবা তার শত্রু থাকতে পারে তিনি তা বিশ্বাসই করতেন না। জীবনের সকল মায়া-মমতা, সম্পত্তি, সুদৃঢ় অবস্থান যাঁকে কখনওই টানেনি এদেশের মানুষের মায়ায় পড়ে, সেদেশেরই কেউ তার মতো বিশাল বটবৃক্ষ হৃদয়ের অধিকারীকে খুন করতে পারেন, এটা অবিশ্বাস্য তার কাছে, দেশের আপামর মানুষের কাছে।
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো স্বনির্ভর আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণ। যেখানে থাকবেনা ধর্মীয় বিভেদ, দলীয় হানাহানি, সন্ত্রাস, লুটতরাজ, দুর্নীতিসহ দেশ পিছিয়ে যায় এরকম কোন কর্মকাণ্ড। বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনগণকে কাজে লাগিয়ে স্বকীয় স্বাধীন বাংলাদেশ। যেখানে পরনির্ভরতা পরিহার করে অর্থনীতিতে সবল, মজবুত পরিচয়ে গৌরবোজ্জ্বল সবুজ বাংলাদেশ।তাইতো তিনি মহাকাব্যের অমর কবি।
শেগুফতা নাসরীন আইরিন
সহকারী শিক্ষক
খোয়াজনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
পিতার সমাধি
বঙ্গবন্ধু সেদিন টুঙ্গিপাড়ায় বাইগার নদীর পাড়ে তোমার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম। লাল সিরামিক-ইট আর সাদাকালো মার্বেল পাথরে নির্মিত তোমার সমাধি। সমাধির উপরের দেয়ালে জাফরি কাটা-আলোছায়ার মায়াবী খেলা চলে। কারুকাজ করা কাঁচের ভিতর দিয়ে আলো ছড়িয়ে পড়ে সমাধিতে। চারিদিকে কালো-মাঝখানে সাদা মার্বেল পাথর-ও পরে ফাঁকা। কিছু সময় নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়াই। তোমার উর্বর মাটিতে পা রাখতেই গা ছমছম করে ওঠে। তোমার সমাধি জুড়ে লাল কাগুজে ফুল-শিরিশ-দেবদারু-চম্বল অনবরত ছায়া দিয়ে যায়। চোখে পড়ে কৃত্রিম চঞ্চলা ঝর্ণা। যেন তুমি আজও পদ্মা-যমুনা-গৌরি-মেঘনার মতো বহমান।
নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হলো-তোমার স্বপ্নগুলো জ্যোৎস্নার মতো শব্দহীন কৃত্রিম ঝর্ণার জল রঙে জেগে উঠেছে।মনে হলো বারবার তোমার বেদীতে কাগুজে ফুল-তোমার বুকের রক্তক্ষরণ বহন করেছে যুগযুগ।দেখে নোনা অশ্রু-চোখ ভিজে যায়-আবার সান্ত্বনায় মুছে ফেলি জল।কিছু দূরে-তোমার টোল পড়া গালের প্রথম প্রভাত-ঐতিহ্যবাহী বড়তালাব পুকুর ঘাট। যে শান বাঁধানো ঘাটে তুমি পা ভিজিয়ে উর্বর করেছো পলি। চারিদিকে তোমার ভাষাহীন দুটি চোখ।হাসনাহেনা-গোলাপ-টগর আজও সাক্ষ্য দেয় তোমার বিপ্লবী মুখ। মুহূর্তে আমার রক্ত ফিনকি দিয়ে ওঠে-প্রতিধ্বনিত হই-নিজেই নিজের ভিতর। সমুদ্রের টানের মতো দিশাহীন সম্মুখে এগিয়ে যাই। শান বাঁধানো পুকুর ঘাটের পাশে সাড়ি সাড়ি দেবদারু-তোমার প্রিয় বালিশা আম গাছ-বকুলতলা চত্ত্বর-হিজল তলা ঘাট-যেখানে তুমি ছোট বেলায় গোসল করতে। তোমার উর্বর দশ মাটিতে আমার পা-চোখ আটকে গেলো-দেখে বুকের মধ্যে রক্তক্ষরণ হলো: যে সামরিক হেলিকপ্টার তোমার দেহ টুঙ্গিপাড়া নিয়ে গিয়েছিল-সেটি আজও অক্ষত আছে।
সামনে শেখ রাসেল শিশু পার্ক-আর একবার ভিজে গেলো চোখ।মনে পড়ে গেলো-রাসেলের আর্তনাদ-আমি মায়ের কাছে যাবো। হায়নারা-বুলেটে যার বুক ঝাঁঝরা করেছিল।
পিতা তুমি শুয়ে থাকো-তোমার শিমুল-জারুল-পলাশ-গোলাপ-টগর কিংবা তোমার প্রিয় বালিশা আম গাছের নিচে।তোমার বেদির কাছে আজও দেবদারু মাথা উঁচু করে আছে।তোমার প্রিয় পদ্মবিলে লাল রক্তাক্ত পদ্ম ব্যথায় কাতর।জানালার ওপাশে শুধু তোমার এক জোড়া চোখ জেগে থাক প্রিয় টুঙ্গিপাড়ার পলি মাটি জুড়ে।আমরা না হয় ইশারায় কথা কই-হেঁটে যাই তোমার ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল গন্তব্য জুড়ে।
কবি বিনয় মণ্ডল
আপনার মতামত লিখুন :