ঢাকা: কাতার বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে ৩২ দল। যেখানে নেই বাংলাদেশ ফুটবল দলের নাম। ভবিষ্যতে কোনো দিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলতে পারবে কি না সেটা সময়ই বলে দেবে।
স্বপ্ন দেখা তো আর দোষের কিছু নয়? তবে কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে বাস্তবতা যে বলছে ভিন্ন কথা। বাংলাদেশ হয়তো দল হিসেবে কাতার বিশ্বকাপে নেই।
কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলার সুযোগ না হলেও লাল সবুজের প্রতিনিধিত্ব করার মতো লোক ঠিকই আছে। ফুটবল মাঠে মূলত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন রেফারিরাই। যার সিদ্ধান্ত ছাড়া খেলা শুরু কিংবা শেষ করা সম্ভব নয়। 'গ্রেটেস্ট শো অন দ্যা আর্থ' খ্যাত বিশ্ব আসরে এ গুরু দায়িত্বে দেখা যাবে বাংলাদেশের শিয়াকত আলীকে। বর্তমানে কাতার ফুটবল ফেডারেশনের রেফারি হিসেবে শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তিনিই একজন।
মাঠের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক। কাতারে এমনিতেই ফুটবল বেশ জনপ্রিয়। রেফারিদের জন্যও রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। যেখানে প্রায় এক দশক ধরে রেফারি হিসেবে কাজ করছেন শিয়াকত আলী। সেখানে শেখ আলী হিসেবে পরিচিত তিনি।
চট্রগ্রামে জন্ম নেওয়া আলী ছোট থেকেই ছিলেন ক্রীড়ামোদি। স্কুল এবং জেলা পর্যায়ে সাঁতারে চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবলও খেলেছেন। কাতার ফুটবল ফেডারেশনের রেফারি হিসেবে যুক্ত হওয়ার গল্প নিজেই শুনিয়েছেন শিয়াকত।
তিনি জানান, দেশে থাকা অবস্থায় রেফরিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। রেফারির যে ১৭টা কনস্টিটিউট আছে সেটাও আমি জানতাম না। জেলা কিংবা কলেজ লেভেলে খেলতাম। এবং অন্যান্য ইভেন্টের সঙ্গে জড়িত ছিলাম।
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা এবং নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে পড়াশুনা শেষ করার পর চেষ্টায় ছিলেন সরকারি চাকরির। এক পর্যায়ে রেলওয়ে পুলিশে চাকরিও হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন কাতারে পাড়ি জমানোর। সরকারি চাকরি ছেড়ে কাতারে যাওয়ার বিষয়ে শিয়াকত জানান, কাতার যাওয়ার তিন মাস পর বার্সেলোনার একটা ফুটবল প্রজেক্টে ভিজিট করতে যাই। যেখানে কিছু পেশাদার রেফারির সঙ্গে আমার দেখা হয়। তাদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।

তখন আমার মনের আগ্রহটা তাদেরকে বলে ফেলি, আমি রেফারি হতে চাই। কীভাবে আপনাদের সহযোগীতা পেতে পারি। তখন ওরা আমাকে কাতারে ফুটবল এসোসিয়েশনের একটি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
কাতার ফুটবল এসোসিয়েশনে তালিকাভুক্ত মোট ১২০ জন রেফারি আছেন। যেখানে বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবারের মতো শেখ আলী রেফারি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।
শিয়াকত জানান, আমাদের রেফারির সিইও ছিলেন ৯০ এবং ৯৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের রেফারি ছিলেন। তার নাম সৈয়দ নাদী আল জোয়ানি। উনি তিউনিসিয়ার নাগরিক। সে আমাকে প্রথমে একটু অবহেলার সুরেই বলেন, তুমি বাংলাদেশ থেকে আসছ।
সাউথ এশিয়া থেকে আসছ। ওদের ফুটবলের স্ট্যাটাস তেমন ভালো না। তুমি সেখান থেকে এসে কীভাবে আমাদের পারফরম্যান্স করে দেখাবা। তখন আমি উনাকে অনুরোধ করলাম আপনি আমাকে একবার সুযোগ দেন, আমি আমার মতো করে চেষ্টা করব। এবং তিনি আমাকে সুযোগ দিলেন।
আর এই অপরচুনিটি পেয়ে ফরেইনাদের সাথে আমাদের প্রতিবারই যে পরীক্ষা হয়, ফিটনেসের, ট্রেনিংয়ের, বিভিন্ন সেশনগুলোর যাচাই-বাছাইয়ে আমি রেফারি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করি। এবারের বিশ্বকাপেও বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন আলী।
বিশ্বকাপে ফিফা কর্তৃক যে রেফারিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে ম্যাচ পরিচালনা করার জন্য। যেখানে ৩৬ জন রেফারি ২৪ জন ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট অফিসিয়াল এবং ৬৯ জন সহকারী রেফারি দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে শিয়াকত জানান, ওদের জন্য ফিফা এবং কাতার এসোসিয়েশন যৌথ উদ্যোগে রেফারি গাইডার এবং কো অর্ডিনেটর নিয়োগ দেয়া হয়। সেখানে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেখানে আমিই প্রথম সাউথ এশিয়ান হিসেবে আমার সুযোগ হয়েছে। ফুটবল এসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ আমার সম্পর্কে জানে এবং আমি এটা কভার দিতে পারব সেই সুবাধে আমাকে নিয়োগ দেয়া হল।
২০২০ সালে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের একটি ম্যাচ খেলতে কাতার সফর করে বাংলাদেশ জাতীয় দল। সফরের প্রস্তুতি ম্যাচে জামাল ভূইয়ারা মুখোমুখি হয় কাতার আর্মি টিমের সঙ্গে। ওই ম্যাচে রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শিয়াকত আলী।
আলী জানান, আমি এসি মিলান, জুভেন্টাস, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, পিএসজিসহ আরো অনেক ম্যাচের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলাম।
যারা রেফারিকে পেশা হিসেবে নিতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে আলী জানান, যারা এডুকেডেট এবং সম্ভাবনাময়ী এবং আগামীতে বিশ্বকে লিড করবে এমন লোকদের পরিচর্যা করতে হবে। এমনকি তাদের আর্থিক সাপোর্ট দিতে হবে। কাতার ফুটবল এসোসিয়েশন যে পরিমাণ আর্থিক সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে এটা আমাদের দেশে এখনো কল্পনাও করা যায়না। তবে আমাদের দেশে যদি এদের পরিচর্যা করা হয় তাহলে ভালো কিছুই হবে।
সোনালীনিউজ/এআর
আপনার মতামত লিখুন :