• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আজ

দ্রুত প্রত্যাবাসন চায় ঢাকা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ০২:২৫ পিএম
দ্রুত প্রত্যাবাসন চায় ঢাকা

ঢাকা : বাংলাদেশ যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে একাধিক চুক্তি হলেও দেশটি এ পর্যন্ত কোনোটিই মানেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার অনেকদিন ধরেই আলোচনা করে আসছে। কিন্তু মিয়ানমারের অসহযোগিতায় বিষয়টির সমাধান আটকে আছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সায় দিয়েও তারা শেষ সময়ে অসহযোগিতা করে।

এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের মধ্যস্থতায় আজ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠকে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু বিষয়ে জোর দেবে ঢাকা। বাংলাদেশ চাচ্ছে, আগামী এপ্রিল-মের আগেই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করুক।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আজ ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের যে বৈঠক বসছে তাতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমার সরকার এবং তাদের সেনাবাহিনীর সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট কয়েক যুগ ধরে বয়ে চলেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার বারবার যেভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে তা চলতে থাকলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগামী ১০ বছরের মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তাই সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।

গত বছরের ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা সমস্যা : পশ্চিমা, এশীয় ও দ্বিপক্ষীয় প্রেক্ষাপট-শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ হামিদ আলবার জানান, রোহিঙ্গা সংকট নিরসন করতে হলে সবার আগে এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হবে। এটি শুধু আঞ্চলিক সমস্যাই নয়, বৈশ্বিকও। এটি শুধু মানবিক সমস্যাই নয়, একইসঙ্গে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংকটও।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, কয়েক দশক আগে থেকেই মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বা বৈরী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য উসকানি দিয়ে আসছে।

কিন্তু বাংলাদেশ ভদ্রভাবে বন্ধুত্বের আহ্বান জানিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সৎভাব বজায় রাখার চেষ্টা করলেও নেপিডোর সেনা সরকারের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) তিন সদস্যকে হত্যা করে মিয়ানমার। ২০০৮ সালে বাংলাদেশর সমুদ্রসীমায় ঢুকে খনিজ আহরণের চেষ্টা চালায়। ২০১৭ সালে ১৭ বার বাংলাদেশের আকাশসীমায় অনুমতি না নিয়ে ঢুকে এবং ২০১৮ সালে সেন্টমার্টিনকে তাদের বলে মিয়ানমারের মানচিত্রে দেখানোর চেষ্টা করে।

বঙ্গবন্ধুর কথা অনুযায়ী, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র নীতিতে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়, এই নীতিতে বিশ্বাস করে। কিন্তু মিয়ানমারের কারণে এ অঞ্চলে অস্থিরতার সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ বসে থাকবে না।

সংকট সমাধানে দ্বি-পাক্ষিক, আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক ফোরামে আলোচনাসহ হাইব্রিড কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। বৈশ্বিক আদালত আইসিজি এবং আইসিসি যাতে এ সংকট কাটাতে যথাযথভাবে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে পারে, সেজন্য কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ ও ২০১৮ সালে জাতিসংঘ অধিবেশনে রাখাইনে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যে সুপারিশ করেছিলেন, তা বাস্তবায়ন করলেও এ সংকট সমাধান হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বছরটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরই আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই। বছরের শুরুর দিনে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া চিঠিতে বলেছি, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে রাখাইনে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করবেন-যাতে তারা ফেরত যায়। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটা এখনো চালু হয়নি। এজন্য পলিটিক্যাল উইল (অঙ্গীকার) দরকার। যেখানে মিয়ানমারের কোনো আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে না।

আমরা বিশ্বাস করি, মিয়ানমার তাদের দেওয়া কথা রাখবে এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চালু হবে।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তি, ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং ২০১৮ সালের ১৫-১৬ জানুয়ারি দুই দিনব্যাপী বৈঠকে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত মাঠ পর্যায়ের বিষয় সই করে বাংলাদেশ।

কিন্তু মিয়ানমার এ পর্যন্ত এসব চুক্তির কিছুই মানেনি। মাঝে ২০১৮ সালে চীনের সহায়তায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ এবং বৈঠকও হয়েছে। তাতে রোহিঙ্গা সংকটের কোনো সমাধান আসেনি।

তবে আজকের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে আশাবাদী ঢাকার কূটনীতিকরা। এই বৈঠককে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন আদেশটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বলছেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে সংকট সমাধানের দিকে আগানো যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক, অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, চীনের সমর্থন ছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। মিয়ানমারকে রাজিও করানো যাবে না। তাই চীনের বিষয়ে সরকারের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। এমনকি এই বৈঠক ঘিরেও তেমন পরিকল্পনা থাকা দরকার।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল গত বছরের ২০ জানুয়ারি। এরপর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় সচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমার পিছিয়ে দেয়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন মিয়ানমার সফরে থাকায় বৈঠকটি তারা পিছিয়ে দিয়েছিল। সচিব পর্যায়ের ওই বৈঠকটি আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগের সাড়ে তিনলাখ সহ বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!