• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

অফুরন্ত সুখের জায়গা ‘জান্নাত’


ধর্মচিন্তা ডেস্ক ডিসেম্বর ১২, ২০২০, ১০:৫৫ এএম
অফুরন্ত সুখের জায়গা ‘জান্নাত’

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা : জান্নাত মুমিনের শেষ ঘাঁটি। মানুষ রূহের জগত থেকে চলা শুরু করেছে। এরপর মায়ের পেটে। অতঃপর পৃথিবী। এ পৃথিবীর ভালো কাজের ফলস্বরূপ বান্দা যে পুরস্কার পাবে তা হলো জান্নাত। পৃথিবীর পর বান্দা যাবে কবরজগতে। এরপর কেয়ামতের মাঠ। বিচার দিবস। অতঃপর পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাত। এ জান্নাতই মুমিনের বাড়ি। মুমিনের কষ্টের ফসল। এ জান্নাতে ‘নেই’ বলে কোনো শব্দ থাকবে না। সবার মুখে থাকবে সালাম আর সালাম। এমন একটি বাড়ি বা থাকার স্থান কেমন সুন্দর হবে? কার জন্য হবে এ জান্নাত? আর কি কাজ করলে পাওয়া যাবে চির সুখের স্থান জান্নাত তা আমাদের জানা প্রয়োজন। যাতে আমরাও তার ভাগিদার হতে পারি। আমরাও সেই জান্নাতে যেতে পরি।  

জান্নাত কেমন হবে : জান্নাত বা বেহেশত শব্দটি আমাদের কর্ণকুহুরে আসা মাত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে একটি সুখ ও আনন্দময় জীবনের দৃশ্য। যেখানে কষ্টের লেশমাত্রও নেই। এ স্থান কেমন সুন্দর ও আনন্দদায়ক হবে তার বর্ণনা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে দিয়েছেন। 

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতে প্রথম প্রবেশকারী দলের আকৃতি পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল হবে। তারা সেখানে থুথু ফেলবে না। নাক ঝাড়বে না এবং মলত্যাগ করবে না। সেখানে তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের। তাদের চিরুণী হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের। তাদের ধুনুচিতে চুলা থাকবে সুগন্ধ কাঠ। তাদের গায়ের ঘাম মেশকের ন্যায় সুগন্ধি হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দুজন স্ত্রী থাকবে যাদের সৌন্দর্যের ফলে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাঁড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মাঝে কোনো মতবিরোধ থাকবে না। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সবার অন্তর এক অন্তরের মতো থাকবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহতায়ালার তসবীহ পাঠ করবে।’ (বুখারি, হাদিস নং-৩২৪৫)

হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কর্ণ শুনেনি এবং কোনো মানুষের অন্তর যার কল্পনাও করতে পারে না। তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াতটি পড়তে পার“যার অর্থ কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ জুড়ানো কি জিনিস লুক্কায়িত রাখা হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৩২৪৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৮২৪)
 
জান্নাতে থাকবে চিরকুমার রমণী : জান্নাতের বর্ণনায় আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। তারাই নৈকট্যশীল। আবদানের উদ্যানসমূহে, তারা একদল পূর্ববর্তীদের মধ্যে থেকে এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্যে থেকে। স্বর্ণখচিত সিংহাসনে। তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে। তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা। পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি শূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে, যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্তও হবে না আর তাদের পছন্দমতো ফল-মূল নিয়ে এবং রুচিমতো পাখির মাংস নিয়ে। তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ, আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়, তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ। তারা তথায় অবান্তর ও কোনো খারাপ কথা শুনবে না কিন্তু সালাম আর সালাম। যারা ডান দিকে থাকবে তারা কতো ভাগ্যবান! তারা থাকবে কাটাবিহীন বদরিকাবৃক্ষে কাঁদি কাঁদি কলায় এবং দীর্ঘ ছায়ায় এবং প্রবাহিত পানিতে ও প্রচুর ফল-মূলে যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধও নয়, আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়। আমি জান্নাতি রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমার, কামিনী, সমবয়স্কা ডান দিকের লোকদের জন্য। তাদের একদল হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে এবং একদল পরবর্তীদের মধ্য থেকে।’ (সুরা আল ওয়াক্বিয়া, আয়াত : ১০-৪০) আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেন, ‘যদি সে নৈকট্যশীলদের একজন হয়, তবে তার জন্যে আছে সুখ, উত্তম রিজিক এবং নেয়ামতে ভরপুর উদ্যান। আর যদি সে ডান দিকের একজন হয়, তবে তাকে বলা হবে, হে দক্ষিণ পার্শ্ববর্তী! তোমার প্রতি শান্তি।’ (সুরা আল-ওয়াকিয়া, আয়াত : ৮৮-৯১)

অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না। তার বৃক্ষছায়া তাদের ওপর ঝুঁকে থাকবে এবং তার ফলসমূহ তাদের আয়ত্তাধীন রাখা হবে। তাদেরকে পরিবেশন করা হবে রুপার পাত্রে এবং স্ফটিকের মতো পানপাত্রে রুপালী স্ফটিকপাত্রে। পরিবেশকারীরা তা পরিমাপ করে পূর্ণ করবে। তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে যানজাবিল-মিশ্রিত পানপাত্র। এটা জান্নাতস্থিত সালসাবিল নামক একটি ঝরনা। তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মণি-মুক্তা। আপনি যখন সেখানে দেখবেন, তখন নেয়ামতরাজি ও বিশাল রাজ্য দেখতে পাবেন। তাদের আবরণ হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করানো হবে রৌপ্যনির্মিত কঙ্কন এবং তাদের পালনকর্তা তাদেরকে পান করাবেন শরাবান তাহুরা এটা তোমাদের প্রতিদান। তোমাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃতি লাভ করেছে।’ (সুরা দাহার, আয়াত : ৫-২২)

জান্নাতি রমণীগণ গান গাইবে : হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘হুরগণ জান্নাতের এক জায়গায় সমবেত হয়ে এমন সুন্দর লাহরী গাইবে, যা সৃষ্টিজীবের কেউ কখনো শুনতে পায়নি। হুরগণ বলবেন, আমরা চিরদিন তোমাদের কাছে থাকবো, কখনো ধ্বংস হবো না। আমারা সর্বদা শান্তিতে আনন্দে থাকবো কখনো নাখোশ হবো না। অতএব ধন্য সেই ব্যক্তি যে আমাদেরকে পাবে এবং আমারা যাকে পাবো। (তিরমিযি, হাদিস নং- ২৭৬৩)

জান্নাতের ফল দুনিয়ার ফলের অবিকল হবে : পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর হে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোনো ফলপ্রাপ্ত হবে তখনই তারা বলবে এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতঃপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্তুত তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকুল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থা করবে। (সুরা বাকারা, আয়াত নং-২৫)

জান্নাতের সীমানা : আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও। যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৩) অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মতো প্রশস্ত। এটা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাসস্থাপনকারীদের জন্য। এটা আল্লাহর কৃপা। তিনি যাকে ইচ্ছা এটা দান করেন। আল্লাহ মহান কৃপার অধিকারী।’ (সুরা আল হদীদ, আয়াত-২১) হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে যার ছায়ায় কোনো আরোহী একশ বছর পর্যন্ত চলতে পারে। আর তোমরা ইচ্ছা করলে পাঠ করতে পার (এবং দীর্ঘ ছায়া) আর জান্নাতে তোমাদের কারো একটি ধনুকের পরিমাণ জায়গাও ওই জায়গার চেয়ে উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস নং-৩২৫১, মুসলিম, হাদিস নং-২৮২৬)

জান্নাতিরা মৃত্যুবরণ করবে না : হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামত দিবসে জান্নাতবাসীদেরকে বলা হবে, এ হচ্ছে চিরন্তন জীবন, এখানে কোনো মৃত্যু নেই। আর জাহান্নামবাসীদেরকে বলা হবে হে জাহান্নামীরা! এ হচ্ছে চিরন্তন জীবন, এখানে কোনো মৃত্যু নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬৫৪৫) অফুরন্ত নেয়ামতে ভরপুর এই জান্নাত একমাত্র মুমিনদের জন্য, মুত্তাকীদের জন্য। আল্লাহ আমাদেরকে খাঁটি মুমিন মুত্তাকী হিসেবে কবুল করুন। আমিন!

কাজী সিকান্দার

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ আশরাফাবাদ

মাদবর বাজার, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!