• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

‘পাসওয়ার্ড’ নকল সিনেমা, এখনো পরিচালকের গলাবাজি!


 ফুয়াদ খন্দকার জুন ১৬, ২০১৯, ০১:৫৩ পিএম
‘পাসওয়ার্ড’ নকল সিনেমা, এখনো পরিচালকের গলাবাজি!

শাকিব খান ও বুবলী

ফুয়াদ খন্দকার: ‘পাসওয়ার্ড’ নকল সিনেমা তবে এই নিয়ে এখনো গলাবাজি করে যাচ্ছেন পরিচালক মালেক আফসারী! অথচ ছবিটি কোরিয়ান একটি ফিল্মের কপি এরকম সত্যতা পাওয়া গেছে। তারপরও থেমে নেই এই পরিচালক।

মাত্র কয়েকদিন আগেই শেষ হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর ঈদ মানেই সাকিব খানের সিনেমা এ নিয়মটা বেশ অনেক বছর ধরেই চলে আসছে। এর অবশ্য কারণও আছে। প্রায় এক যুগের ও বেশি সময় ধরে এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নির্ভরযোগ্য একজন সুপারস্টার তিনি। কিন্তু সেরা নায়কের তকমার পাশাপাশি বেশিরভাগ সময় মানহীন ও সাউথ ইন্ডিয়ান ফিল্ম কপি করার অভিযোগ সব সময়ই তার বিরুদ্ধে ছিল।

এবার ঈদেও তার ২টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ২টি ছবি নিয়েই তাই সিনেমা প্রেমী মানুষের আগ্রহ ছিল চরমে। তবে আলোচনার চেয়ে সমালোচনার মাত্রাটাই বেশি চোখে পরেছে। বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় সব সময়ই সংবাদের শিরোনামে ছিল এই ২টি সিনেমার নাম।

‘নোলক’ নিয়ে খুব একটা সমালোচনা চোখে না পরলেও পাসওয়ার্ডের সমালোচনায় ভরে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায়। ঘটনার শুরুটা হয়েছিলো পাসওয়ার্ড ছবির ট্রেইলার মুক্তির বেশ আগে থেকেই। ছবিটির পরিচালনা করেছেন মালেক আফসারী। তিনি প্রথম থেকেই দাবী করে আসছেন এ ধরনের ছবি এই দেশের মানুষ আগে কখনো দেখেনি।

এই গল্পের কাহিনী সম্পূর্ণ মৌলিক। তামিল অথবা তেলেগু মুভির কপি নয়। তখন থেকেই সিনেমার আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ এর আগে মালেক আফসারী পরিচালিত সিনেমার নাম ছিল "অন্তর জ্বালা"। এ ছবিটি মুক্তির আগেও তিনি ঠিক একইভাবে ঢাক ঢোল পিটিয়েছিলেন।

‘পাসওয়ার্ড’ ও ‘দ্য টার্গেট’ ছবির সঙ্গে মিলে যাওয়া শট। ছবি : সংগৃহীত

এমনকি অন্তর জ্বালা ছবি নকল হলে তিনি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ছবিটি মুক্তির পর দেখা গেলো তেলেগু একটি সিনেমার সঙ্গে হুবহু মিল। আর সেই মালেক আফসারী যখন একই ঢোল আবারও তার পরবর্তী ছবির জন্য পিটানো শুরু করেন তখন আমাদের মতো হাজারো মানুষের মনে ঠিক আগের মতোই আশংকার সৃষ্টি হয়।

ছবিটির ট্রেলার মুক্তির পর আলোচনার মাত্রাটি আরও বেড়ে যায়। গতানুগতিক ধারা থেকে বেড়িয়ে ভালো মানের ট্রেইলার করলেও দর্শকরা অনেকেই এর সঙ্গে তামিল ছবি "ডায়নামাইট" এর নকলের আশংকা প্রকাশ করেন।

ট্রেলার  ‘দ্য টার্গেট’

কিন্তু এর পরপরই মালেক আফসারী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবী করেন "ছবিটি ডায়নামাইটের কপি নয়। কেউ কপি প্রমাণ করতে পারলে ১০ লক্ষ টাকা পুরষ্কার প্রদান করবেন। পাশাপাশি সিনেমার নায়ক এবং প্রযোজক সাকিব খান নিজেকে সিনেমার ডক্টরেট দাবী করে সিনেমার ভূয়সী প্রশংসায় মেতে উঠেন।

এত এত ঘটনার পর যখন সিনেমার গান মুক্তি পায় তখন সাকিবের ড্রেসআপের সঙ্গে কলকাতার দেবের কস্টিউমের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এ নিয়ে আবারো সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় হয়ে যায়। কারণ এই দেবেরই এবারের ঈদে মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমার নামও "পাসওয়ার্ড"! সব মিলিয়ে এবারের ঈদে আলোচনার শীর্ষে ছিল এই পাসওয়ার্ড। পরিচালক, প্রযোজক, নায়কসহ সবার এত কথার কারণে ধরে নিয়েছিলাম অন্তত কোন কপি সিনেমা হবে না। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে দিয়ে এই ছবিটিও কোরিয়ান একটি ফিল্মের কপি এরকম সত্যতা পাওয়া গেলো।

আমাদের দেশের পরিচালকরা এদেশের মানুষদের আসলে কী মনে করেন আমার জানা নেই। পরিচালক মালেক আফসারী হয়তো ভেবেছিলেন কোরিয়ান মুভি থেকে কপি করলে কেউ বুঝতে পারবে না। কেউ হয়তো কোরিয়ান মুভি দেখেন না। শুধু তাই নয়, ধরা পরার পর থেকেও এখনো তিনি সমান তালে গলাবাজি করে যাচ্ছেন এ ছবির পক্ষে।

তিনি তার ফেসবুকের টাইম লাইনে ছবিটি যে কোরিয়ান ছবির কপি নয় তার পক্ষে বেশ কিছু সস্তা যুক্তি দিয়েছেন যা বেশ হাস্যকর। তার প্রথম যুক্তি ছিল কোরিয়ান মুভিটির মোট সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট আর পাসওয়ার্ড মুভির মোট সময় ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট। স্যালুট পরিচালক আপনাকে।

সিন বাই সিন কপি প্রমাণ পাওয়ার পরেও আপনি কীভাবে এই হাস্যকর যুক্তি প্রদান করেন আমার বুঝে আসে না। পাসওয়ার্ড সিনেমায় কয়েকটা গান ও বেশ কিছু নতুন সিন ঢুকিয়ে বেশ সহজেই আপনি এর সময়ের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা বোঝার জন্য কোন সিনেমা বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পরে না। পরিচালকের দ্বিতীয় যুক্তি ছিল কোরিয়ান সিনেমায় কোন নায়িকা ছিলেন না। কিন্তু পাসওয়ার্ড সিনেমায় নায়িকা আছেন। দেশে এরকম বহু সিনেমা আছে যেখানে মূল কাহিনী একটু এদিক সেদিক করে সিনেমা নকল করে ফেলেন। সাউথে যে চরিত্র কোন নায়ক করেন বাংলাদেশে একই সিনেমার কাহিনীতে শুধু নায়কের জায়গায় নায়িকা বসিয়ে সিনেমা বানিয়ে ফেলা হয়।

কাজেই এরকম একটা নায়িকা কেন ৫টা নায়িকা পাসওয়ার্ডে থাকলেও এটা নকল সিনেমাই হবে। এরকম আরও বহু হাস্যকর যুক্তি এ পরিচালক দিয়েই যাচ্ছেন। তবে নকল থিসিসে ডক্টরেট করা সাকিব খানের বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। আমি জানিনা তিনি এই সিনেমার পক্ষে কীভাবে সাফাই গাইবেন?

পরিশেষে একটাই কথা। সিনেমা রিমেক একটা সাধারণ ব্যাপার। বলিউডের বহু সিনেমা রিমেক হওয়ার পরেও ব্লক বাস্টার হয়েছে। কিন্তু ছবিটি রিমেক ছিল এটা তারা প্রথমেই ঘোষণা করে দেন। পাশাপাশি রিমেক করার কিছু নিয়মও রয়েছে।

মূল পরিচালক ও লেখকের কাছ থেকে এর সত্ত্ব কিনে নিতে হয়। কিন্তু সত্ত্ব না কিনে যদি ছবিটি কেউ কপি করেন তাহলে তাকে আর রিমেক ছবি বলা যায় না। এটাকে সরাসরি চুরি বলে। আর এত বড় চুরি করার পরেও যদি কেউ সমান তালে এর পক্ষে সাফাই গাইতে থাকেন তখন একেই বোধহয় বলে "চোরের মার বড় গলা"।

পাশাপাশি আমাদের দেশের পরিচালকদের মানও বেশ উন্নত হয়েছে। তারা এখন সাউথ বাদ দিয়ে কোরিয়ান ফিল্মের নকল শুরু করেছেন। এরকম উন্নত হতে হতে একদিন মৌলিক ছবি বানাবেন সেই আশায় আমরা রইলাম।

ফুয়াদ খন্দকার, লেখক ও সামাজিক কর্মী

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!