• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিকশিত হওয়ার আগেই ঝরে পড়ছে শিশুরা


মো. শামীম মিয়া সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯, ০৩:০৪ পিএম
বিকশিত হওয়ার আগেই ঝরে পড়ছে শিশুরা

ঢাকা : আজকের শিশুরা আগামী দিনের কর্ণধার, আজ সেই শিশুরাই বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। আমরা জানি, পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মাতৃগর্ভে শিশুর একটা জীবন আছে আর সেই জীবনের সুরক্ষার বিষয়টি তাদের প্রথম অধিকার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা প্রসূতি মায়ের জন্য যথাযথ খাদ্য, পুষ্টি, পরিচর্যা ও চিকিৎসাসেবা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারিনি। মাতৃগর্ভে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে টিকে থেকে সৌভাগ্যক্রমে যেসব শিশু পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ পায় তাদের জন্ম যেন আজন্ম পাপ। জন্মের পর থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তাদের বেড়ে উঠতে হয়। মুকুলেই ঝরে পড়ে তারা,  যখন অন্য শিশুরা স্কুলে জ্ঞান অন্বেষণে ব্যস্ত তখন এরা নিজেদের খাদ্যের সন্ধানে লিপ্ত। দারিদ্র্যের তাড়নায় অভিভাবকরা সন্তানকে কাজে নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু সে কাজটি কঠিন না সহজ, কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সেই ভাবনাটুকু কাজ করে না-অভাব-অনটনের দারিদ্র্যের কালো ছায়ায় হারিয়ে যায়।

আজও অনেক শিশুর অভিভাবক বা মনিবরা জানে না শিশু অধিকার ও আইন সম্বন্ধে আবার জানলেও মানা হয় না। জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গ সংগঠন ইউনিসেফ শিশু অধিকার তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু সনদ এখন আন্তর্জাতিক আইন। এতে বলা হয়েছে, শিশুর বেঁচে থাকা তার জন্মগত অধিকার। আর এ ক্ষেত্রে শিশুর স্নেহ-ভালোবাসা, সমবেদনা, পুষ্টি, খাদ্য ও চিকিৎসা, অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ, খেলাধুলা, আমোদ-প্রমোদের পূর্ণ সুযোগ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। পঙ্গু শিশুদের বিশেষ যত্ন ও সেবা-শুশ্রূষা পাওয়ার অধিকার আছে। দুর্যোগের সময় সবার আগে ত্রাণ তাদের দিতে হবে। সমাজের কাজে লাগার উপযোগী হয়ে গড়ে ওঠার এবং ব্যক্তি সামর্থ্য অর্থাৎ সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এসব অধিকার ধর্ম, বর্ণ, ও গোত্র ছেলেমেয়ে-নির্বিশেষে বিশ্বে সব শিশুর ভোগের অধিকার থাকবে।

প্রশ্ন জাগে জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, আমরা কতটুকু দিতে পারছি শিশুদের অধিকার শিশুশ্রম রোধে সরকার আপসহীনভাবে কাজ করলেও শিশুশ্রম রোধ করা যাচ্ছে না। শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অবহেলিত ও বঞ্চিত শিশুদের প্রতি নজর না দিলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ কোটি ৯০ লাখ শিশুমৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। আবার এর বাইরে ১৬ কোটি ৭০ লাখ শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। সেই সঙ্গে বাল্যবিয়ের শিকার হবে ৭০ কোটি মেয়েশিশু। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএ) জরিপ মতে, দেশে মোট ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত। প্রায় ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত এবং ১৬ লাখ শিশু শিশুশ্রমে কোনো মজুরি পায় না। সরকারি হিসাবেও শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শিশুশ্রমের প্রবণতা বেশি। কম মজুরি মাত্রারিক্ত খাটুনি ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থায় আছে শিশুশ্রম পরিস্থিতি। ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজ দিনরাত করানো হলেও শিশুশ্রম প্রতিরোধকারী আইন সেখানে কাজ করছে না।

দরিদ্র, এতিম, অসহায়, শিশুদের ব্যাপারে শুধু আমাদের দেশ থেকেই নয়, পুরো বিশ্বসমাজ থেকে বিদায় নিতে চলেছে বিবেক, মূল্যবোধ, নীতি, মনুষ্যত্ব, মানবতা। সরকারিভাবে শিশু শ্রমিকদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ না হলেও যেটুকু করেন তা তাদের হাতে আর পৌঁছায় না।

রাষ্ট্র যদি শিশুদের ন্যায্য অধিকার রক্ষা করতে না পারে তাহলে তার প্রভাব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর বর্তাবে। কাজ করতে গিয়ে ৫৭ শতাংশ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। আবার মালিকপক্ষ অদক্ষ শ্রমের দোহাই দিয়ে শিশুটিকে ন্যায্য পারিশ্রমিক দেয় না। সুতরাং আইন প্রণয়ন করলেই চলবে না প্রয়োগ করতে হবে। জাতি গঠনে শিশুদের জন্য শ্রমবিমুখ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। শিশুশ্রম রোধে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে।

লেখক : নিবন্ধকার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!