ঢাকা : যাদের বয়স ৪০ এর আশেপাশে তাদের, বিশেষ করে নারীদের ওজন বেড়ে যায়। এই ওজন আর কমতে চায় না। কিন্তু কিছু উপায়ে ৪০ এর কোঠায় পৌঁছালেও আপনি ওজন কমাতে পারবেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অবধারিতভাবেই বাড়ে ওজন, সেই সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে।
বয়স ২০ এর কোঠায় থাকতে ওজন কমানো যত সহজ, ৪০ এর কোঠায় ততটাই কঠিন। বয়স ৪০ বছর পার হবার পর মেটাবলিজমের গতি ধীর হয়ে যায়, ফলে ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দিতে হয়। অন্যদিকে, এ সময়ে নারীদের মেনোপজ শুরু হয় বলে শরীরে ইনসুলিন রেজিসটেন্স দেখা দেয়, ফলে মিষ্টি খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে।
এসব কারণ মিলিয়ে দেখা যায়, বয়স ৪০ পেরোলে সবার, বিশেষ করে নারীদের ওজন বেড়ে যায়। এই ওজন আর কমতে চায় না। কিন্তু কিছু উপায়ে ৪০ এর কোঠায় পৌঁছালেও আপনি ওজন কমাতে পারবেন। মেনে চলুন এই ছয়টি নিয়ম-
ওজন কমানোর সেরা নিয়মগুলো মনে রাখুন - যে কোনো বয়সেই ওজন কমাতে একদম মৌলিক কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।
এ নিয়মগুলো হলো-
* খাওয়া কমান। এ বয়সে দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা দুই হাজার ক্যালোরি থেকে কমিয়ে দেড় হাজার ক্যালোরিতে নামিয়ে আনতে পারেন।
* সপ্তাহে এক থেকে আধা কেজি ওজন কমান। কিছু ডায়েটে আরও দ্রুত ওজন ঝরানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেগুলো ব্যবহার করবেন না। বরং স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে সপ্তাহে এক কেজি থেকে আধা কেজি ওজন কমানোর লক্ষ্য রাখুন।
* খাওয়া বাদ দেবেন না। নিয়মিত খাওয়া বজায় রাখুন। সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবার- তিনবার নিয়ম করে খান। অনেকেই ওজন কমাতে সকালের বা রাতের খাবার বাদ দেন। তা করলে ওজন কমবে না বরং শরীরে আরও মেদ জমবে। অতিরিক্ত ক্ষুধা থেকে আজেবাজে খাবার খাওয়ার প্রবণতাও আসতে পারে।
খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তন আনুন - এ বয়সে এসে সুস্বাদু নয় বরং স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন। শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিন। প্রোটিন খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান। এতে বয়সের কারণে পেশীর ক্ষয় রোধ করা যায়। শুধু তাই নয়, মেটাবলিজমও গতিশীল হয়। এ ছাড়া খাবারের পরিমাণও ঠিক রাখুন-
* ফল ও শাক-সবজি - আপনার প্লেটের অর্ধেক অংশে ফল ও সবজি রাখা উচিত। এসব খাবারে প্রচুর খাদ্য আঁশ ও পানি থাকে, ফলে কম ক্যালোরিতেই পেট ভরে যাবে আপনার।
* চর্বিমুক্ত প্রোটিন - আপনার হাতের তালুর সমপরিমাণ চর্বিমুক্ত মাংস থাকতে পারে প্রতি বেলার খাবারে। তা হতে পারে দই, ডিম, মুরগির মাংস এবং মাছ।
* কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট - এ ধরনের শর্করার মাঝে থাকতে পারে হোল গ্রেইন, শিম, ফল এবং আলুর মতো খাবার। এর পরিমাণ হবে আপনার হাতের মুঠোর সমান।
* স্বাস্থ্যকর চর্বি - সতর্ক না থাকলে বেশি বেশি তেল ও চর্বি খাওয়া হয়ে যায়। খেয়াল রাখুন, প্রতি বেলায় খাওয়ার সময়ে যেন ৭-১০ গ্রামের বেশি তেল-চর্বি না খাওয়া হয়। খাবারে থাকতে পারে দেড় টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, একটি অ্যাভোকাডোর চার ভাগের এক ভাগ, বা দুই টেবিল চামচ বাদাম।
ঘন ঘন কম করে খান - মধ্যবয়সে ইনসুলিন রেজিসটেন্স দেখা দেয় বলে বার বার ক্ষুধা লাগতে পারে। এ কারণে শুধু তিনবেলা খাওয়াই যথেষ্ট নয়। তিনবেলা খাওয়ার পাশাপাশি এক বা দুইবার অল্প খাবার দিয়ে নাশতা করতে পারেন। এতে বারবার ক্ষুধা লাগবে না। এ ছাড়া ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন ফল ও সবজি বেশি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
প্রিয় খাবার অল্প করে খাবেন - তরুণরা ইচ্ছে হলেই ফাস্ট ফুড, জাংক ফুড খেয়ে নিতে পারেন যখন তখন, যত খুশি। এতে তাদের ওজন বাড়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। মধ্যবয়সে গিয়ে কিন্তু আপনি তা করতে পারবেন না। কোনো খাবার খাওয়ার খুব ইচ্ছে করলেও আপনাকে সেই ইচ্ছে দমিয়ে রাখতে হবে। যদি কোনো খাবার খেতে ইচ্ছে খুব বেশি হয়, যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, তাহলেও তা খেতে পারেন খুব অল্প পরিমাণে। আর খুব ঘন ঘন ইচ্ছেমত খাবার খাওয়া যাবে না। সপ্তাহে এক-দুইবার এসব খাবার খেতে পারেন।
প্রিয় খাবারটি খেতে পারেন অল্প পরিমাণ, সপ্তাহে এক বা দুই দিন। ছবি: সংগৃহীত
ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন - শুধু খাওয়া কমিয়ে ওজন কমানো কঠিন হয়ে পড়ে মধ্যবয়সে গিয়ে। এ সময়ে পেশী ক্ষয় শুরু হয়। দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। এর পাশাপাশি দিনে অন্তত ১০ হাজার কদম হাঁটাও উপকারী। এর সাথে সপ্তাহে ৪-৫ দিন রেজিসটেন্স ট্রেইনিং আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজে আসবে।
নিজেকে জানুন - বয়স ৪০ পার হয়ে গেছে বলেই যে কঠিন ডায়েটিং শুরু করতে হবে, তা নয়। তবে আপনি যদি জানেন যে মিষ্টি খাওয়া শুরু করলে আপনি আর থামতে পারেন না, তাহলে এ খাবারটি বাদ দেওয়াই আপনার জন্য উপকারী। শুরুতে খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ আপনার জন্য কঠিন মনে হবে। কিন্তু নিজেকে বলুন, এটা আপনার ভালোর জন্যই করতে হচ্ছে।
এ ছাড়া আরেকটি বিষয়ে খেয়াল রাখুন। ওজন কমানোর একই পদ্ধতি সবার জন্য কাজ করে না। যে পদ্ধতিটি আপনার উপকারে আসছে, সেটাই অনুসরণ করতে থাকুন। কোনো একটি পদ্ধতিতে কাজ না হলে অন্য কিছু চেষ্টা করে দেখুন। (সূত্র: গুড হাউজকিপিং)
সোনালীনিউজ/আরজে
আপনার মতামত লিখুন :