• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
আইলার ৯ বছর পূর্তি আজ

নিরাপদ আশ্রয় পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত ৫ সহস্রাধিক পরিবার


খুলনা প্রতিনিধি মে ২৫, ২০১৮, ০৪:২৩ পিএম
নিরাপদ আশ্রয় পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত ৫ সহস্রাধিক পরিবার

খুলনা : ঘূর্ণিঝড় আইলার ৯ বছর পূর্তি আজ। দীর্ঘ সময় পরও খুলনার উপকূলীয় ১৫৪ কিলোমিটার বাঁধ এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাঁধটি যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে কয়রা ও দাকোপ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। এতে করে দুই উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে।

এদিকে আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পরিবার এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি। আজো তারা বসবাস করছেন বেড়িবাঁধের উপর, বাইরে এবং পাশে।
জানা গেছে, কয়রা উপজেলার শত কিলোমিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ অধিকাংশই অরক্ষিত। ফলে যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে আরো একটি ভয়াবহ ঘটনা। ৯ বছর আগে ২৫ মে দুপুরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত এনেছিল ঘূর্ণিঝড় আইলা। সেদিন সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে উপকূল এলাকায় ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবল জোয়ারে লবণপানি ঢুকে পড়ে কয়রা উপজেলার ৬টি এবং দাকোপ উপজেলার ২টি ইউনিয়নে। এতে ভেসে যায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মারা যায় প্রায় ১০০ জন। ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় কাঁচা ঘরবাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত হয় অধিকাংশ পাকা ও কাঁচা রাস্তা।  

কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা বলেন, ওইদিন কয়রায় বেশি ক্ষতি হয়। ২৭ হাজার ৪৫৪টি পরিবারের মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৯ হাজার ৮২টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪ হাজার ৫০৭টি পরিবার। এর মধ্যে অধিকাংশ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার ৩০০ পরিবার রয়েছে পুনর্বাসনের অপেক্ষায়।  

দাকোপের কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মণ্ডল ও সুতারখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির জানান, আইলায় দাকোপে প্রায় ১২ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ১৩টি পরিবার বেড়িবাঁধের উপর বসবাস করছে। এসব পরিবারকে এখনো পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে দাকোপের প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পাউবোর খুলনা-১ এবং পাউবো সাতক্ষীরা-২-এর কয়রার আওতাধীন ৮৭৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৫৪ কিলোমিটার বাঁধ। কয়রায় রয়েছে ১০৪ কিলোমিটার এবং দাকোপে ঝুঁকির মধ্যে আছে ৫০ কিলোমিটার বাঁধ।  

উপকূলীয় এলাকায় কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডিপির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ আর স্লুইসগেট এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। চিংড়ির ঘেরে লবণপানি তোলার স্লুইসগেটগুলো উপক‚লের বাসিন্দাদের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

পাউবো খুলনা-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের বর্ণনা ও সংস্কার ব্যয় সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। তিনি জানান, ইতোমধ্যে যে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে সেই অর্থের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারটির ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলোর মেরামতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এজন্য পাউবো আর নতুন করে কাজ শুরু করেনি। সেগুলোর কাজও চলমান রয়েছে।  

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক বলেন, পাউবো-২-এর ৪২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে খুলনার কয়রা অংশে ৪৫ কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নোটশিট পেশ করার পর গত বছর ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই অর্থে মাত্র ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়েছে।

দক্ষিণ বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান কবি শামছুর রহমান বলেন, ঝুঁকিতে থাকা বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার করা না হলে ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে কয়রাবাসীকে। কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ খ ম তমিজ উদ্দিন বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়ন নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!