• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বর্জ্য নিয়ে দুরবস্থায় রংপুর নগরবাসী


রংপুর প্রতিনিধি মার্চ ১২, ২০১৮, ০১:৫৮ পিএম
বর্জ্য নিয়ে দুরবস্থায় রংপুর নগরবাসী

রংপুর : সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে বর্জ্য নিয়ে চরম দুরবস্থায় রয়েছে রংপুর নগরবাসী। অল্প পরিসরের জায়গায় দিনের পর দিন আবর্জনা জমা হওয়ায় কেন্দ্রীয় ময়লার ভাগাড়টি এখন নগরীর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমানো বর্জ্য পরিশোধন নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এখনো। ফলে দূষণে মারাত্মক হুমকির মুখে নগরের পরিবেশ। এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের স্থানীয় নেতারা। নইলে বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে শঙ্কা তাদের।

নগর ভবন সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালে সিটি করপোরেশন গঠনের ছয় বছর পর বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট সার তৈরির জন্য এক একর জায়গায় প্ল্যান্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই প্ল্যান্টের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু ওই প্ল্যান্টে মাত্র ১৬ টন আবর্জনা ব্যবহার করা যাবে। অথচ প্রতিদিনই শত শত টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে নগরজুড়ে।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরজুড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং ৩৩টি যানবাহন দিয়ে চলে ময়লা সরানোর কাজ। শহরতলির নাচনিয়া স্থানে একটি ডোবায় স্তূপাকারে ফেলে রাখা হচ্ছে নগরীর যাবতীয় আবর্জনা। এতে স্কুলগামী শিশুসহ চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে প্রায় আট লাখ নগরবাসী।

অবশ্য নগর ভবন সূত্র দাবি করে, প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে অর্গানিক ওয়েস্ট থেকে কম্পোস্ট সার তৈরির প্ল্যান্টটি তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। বর্তমানে পুরনো ৫২ বর্গকিলোমিটার এলাকা অর্থাৎ ১৫টি ওয়ার্ডে চালু রয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম। প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে প্রায় একশ’ টন বর্জ্য। আর এটি সম্পূর্ণ এলাকা অর্থাৎ ২০৩ বর্গকিলোমিটারে সম্প্রসারিত হলে প্রতিদিন উৎপাদিত হবে অন্তত এক হাজার টন আবর্জনা।

সূত্রটি জানায়, এখন নগরীর পুরনো ১৫টি ওয়ার্ডেই ৩৩টি ট্রাক বর্জ্য অপসারণের জন্য কাজ করছে। প্রতিটি ট্রাক কমপক্ষে তিন থেকে ছয়বার বর্জ্য ফেলছে। এর প্রতিটিতে ১৪ টন বর্জ্য পরিবহন হয়।

সরেজমিন নগরীর নাচনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ট্রাক থেকে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। পাশ দিয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট স্কুল শিক্ষার্থীরা। তারা নাক-মুখ চেপে চলাচল করছে। স্থানীয়রা জানায়, এটি ব্যস্ত সড়ক। মূল সড়কের পাশেই বর্জ্য স্তূপ করে রাখায় এলাকাবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

নাচনিয়া এলাকার আবদুল কুদ্দুস জানান, সিটি করপোরেশন যেখানে বর্জ্য ফেলছে তার পাশেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কখনো কখনো দুর্গন্ধে ছেলে-মেয়েরা স্কুলেই থাকতে পারে না। দ্রুত একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের অভাবে রাস্তাসহ যত্রতত্র ময়লা ফেলা হয়। রাস্তায় কোথাও কোথাও ময়লার স্তূপ জমে। দুর্গন্ধে চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়ে।

মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলনের সহসভাপতি সাংবাদিক মাহবুবুল ইসলাম বলেন, চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে রংপুর নগরীর মানুষ। দ্রুত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে একটি কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি তার।

পরিবেশ অধিদফতর রংপুরের উপপরিচালক মেজবাবুল আলম বলেন, খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলে রাখায় প্রতিনিয়ত জীবাণু ছড়াচ্ছে। মেডিকেল বর্জ্য হলে তো পরিবেশের জন্য আরো হুমকি। এই বর্জ্যকে সম্পদ হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে নগর ভবনকে। না হলে সিটি করপোরেশন এলাকায় আস্তে আস্তে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাবে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘আমি কিছুদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। শুধু বর্জ্যই নয়, নগরীর মেগা প্রজেক্ট নিয়েও ভাবছি। কীভাবে এসবের সুষ্ঠু সমাধান করা যায় সে বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। চেষ্টা করব রাত ১টা থেকে শুরু করে সকাল ৬টার মধ্যেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ শেষ করার।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!