• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
জাতীয় পাট দিবস আজ

‘বাংলার পাট, বিশ্বমাত’


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৬, ২০১৭, ১১:৪৯ এএম
‘বাংলার পাট, বিশ্বমাত’

ঢাকা : আজ সোমবার (০৬ মার্চ) জাতীয় পাট দিবস। পাটের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও সম্ভাবনা তুলে ধরতে এই প্রথমবারের মতো সারা দেশে জাতীয়ভাবে উদযাপিত হবে দিবসটি। প্রতি বছর ৬ মার্চ ‘জাতীয় পাট দিবস’ উদযাপনের জন্য এ বছরের ৩০ জানুয়ারি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

‘বাংলার পাট, বিশ্বমাত’ স্লোগান নিয়ে পাটের বহুমুখী সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এছাড়া ‘সোনালী আঁশের সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’-এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রথম পাট উদযাপনের জন্য।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

জাতীয় পাট দিবস-২০১৭ উপলক্ষে রোববার দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পাট শিল্পের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘দেশীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সাথে মানানসই পাট ও পাটজাত পণ্য দেশে যেমন গুরুত্বের দাবিদার, তেমনি বিশ্ব বাজারেও এটি এখন অনন্য পরিবেশ-বান্ধব পণ্য হিসেবে সমাদৃত।’ দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় পাট দিবস উদযাপিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি।

‘বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি। সে লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্যস্বাধীন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) রাষ্ট্রের উৎপাদন যন্ত্রের ওপর জনগণের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পাট ও বস্ত্রকলসমূহ জাতীয়করণ করেন। পাটের গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।’ রাষ্ট্রপতি জাতীয় পাট দিবসের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

 অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে দেওয়া তাঁর বাণীতে পাটজাত সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘সরকার পাটখাতের উন্নয়নের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সঙ্গে মানানসই বাংলাদেশের গর্ব সোনালি আঁশ বা পাটের বহুবিধ পণ্য বাজারে বিদ্যমান। ফলে এই পাটশিল্প বিকাশের স্বার্থে যথাসম্ভব দেশীয় সংস্কৃতি ধারণ করে এরূপ পরিবেশবান্ধব পাটজাত সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ’

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সোনালি আঁশ অন্যতম হাতিয়ার হবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট চাষিগণ পাটের ন্যায্য মূল্য পাবেন। পাটখাতের উন্নয়ন ঘটবে। সোনালি আঁশের ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে। পাট পরিবেশবান্ধব, তাই নির্মল ও দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পাট ও পাটজাত বহুমুখী পণ্যের বিকল্প নেই।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পাট দিবস-২০১৭ উপলক্ষে রোববার দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে আরো বলেন, সরকার পাটখাতের উন্নয়নের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি বন্ধ পাটকল পুনরায় চালু করা হয়েছে। পাটের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির জন্য পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এবং পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা ২০১৩ কার্যকর করা হয়েছে। একটি সময়োপযোগী পাট আইন ২০১৬ অনুমোদনের পথে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী ।

দিবসটি পালন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী পাটচাষি, পাটশিল্পের শ্রমিক-কর্মচারি, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীসহ পাট উৎপাদন এবং বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাকে শুভেচ্ছা জানান।

পাট দিবস উদযাপন উপলক্ষে উপলক্ষে আজ সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্দোনেশিয়া সফর শেষে দেশে ফেরার পর আগামী ৯ মার্চ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দিবস উপলক্ষে রাজধানীর উল্লেখযোগ্য সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলোয় ১২ মার্চ পর্যন্ত আলোকসজ্জা করা হবে।   

এছাড়া পাট দিবস উপলক্ষে ৪ মার্চ দুপুরে রাজধানীর হাতিরঝিলে পাটবোঝাই নৌ-র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল রোববার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ের জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে ৫০০ ফুট লম্বা পাটের তৈরি ক্যানভাসে ছবি আঁকেন দেশের খ্যাতনামা চিত্রশিল্পীরা।   

পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে পাটের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উদ্যোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পাট খাতে গবেষণা বাড়ানো, নতুন পাটনীতি প্রণয়ন,  জুটমিল করপোরেশনকে সংস্কারের আওতায় আনা এবং পণ্যের ব্যবহার পলিথিনের ওপর ইকো ট্যাক্স আরোপ করা। একদিকে দেশে পাট পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো এবং অন্যদিকে রফতানি বাড়ানো। সব মিলে এ খাতের বিশাল বাজার সৃষ্টি করে কর্মসংস্থান বাড়াতে চায় সরকার।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৯ দশমিক ৬২ লাখ বেল পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে ৭ হাজার ২৯৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৮৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেশি। দেশে মোট কাঁচাপাটের উৎপাদনের পরিমাণ ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বেল। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা হচ্ছে ৬৩ লাখ বেল, যা মোট উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ। পাশাপাশি বছরে ১২ লাখ বেল বিদেশে কাঁচাপাট রফতানি হচ্ছে। অবশিষ্ট ৭ থেকে ১০ লাখ বেল পাট ব্যবহার হচ্ছে গৃহস্থালি কাজে।

প্রসঙ্গত, সরকার ২০০৪ সালের ৭ মে  বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় একীভূত করে প্রজ্ঞাপণ জারি করে। পরে পাট শিল্পের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত পূর্বের সব আদেশ বাতিল করে গত বছরের ১০ এপ্রিল ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট পাট বিষয়ক একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। সূত্র : বাসস।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!