• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মীর কাসেমের রিভিউর রায় মঙ্গলবার


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৯, ২০১৬, ১০:৪৯ পিএম
মীর কাসেমের রিভিউর রায় মঙ্গলবার

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একাত্তরের আলবদর বাহিনীর সংগঠক জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদনের রায় মঙ্গলবার (৩০ আগষ্ট)।

রবিবার (২৮ আগষ্ট) শুনানি শেষে রায়ের জন্য এদিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ শুনানি চলে। অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

মীর কাসেমের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি করেন তার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এর দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে হত্যা-গণহত্যার অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয় মীর কাসেম আলীর।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে কাসেমকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচারকাজ শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে তাকে ফাঁসির আদেশ ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ওই আপিলের শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। গত  ৮ মার্চ আপিলের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আদালত। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা মীর কাশেমের  আপিল আবেদন আংশিক খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত ৬ জুন এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৯ জুন পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। মামলাটি ২৫ জুলাই কার্যতালিকায় আসার পর মীর কাসেমের আইনজীবীর সময়ের আবেদনে এক মাস পিছিয়ে ২৪ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করা হয়।

গত ৬ জুন সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়। এদিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট থেকে তা পাঠানো হয় ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের দফতরে। সন্ধ্যায় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকসহ তিন সদস্য মীর কাসেমের মৃত্যুপরোয়ানায় সই করেন।

যে অভিযোগে ফাঁসি : মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও আপিলের রায়ে একটি অভিযোগের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। অন্যটিতে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

১১ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। এতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের কোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরো পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালে তিন বিচারকের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ অভিযোগে মীর কাসেমের ফাঁসির রায় হয়। আপিলেও তা বহাল থাকে।

তবে ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস ও টুনটু  সেনকে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করে কর্ণফুলী নদীতে মৃতদেহ ফেলে দেয়ার অভিযোগ থেকে তাকে মুক্তি  দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্যাতনের ৬ অভিযোগে সাজা বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি  জেনারেল মাহবুবে আলম। এর মধ্যে রয়েছে, লুৎফর রহমান ফারুককে নির্যাতন ও আটকে রাখার অভিযোগে ২০ বছর কারাদণ্ডাদেশ (২ নম্বর অভিযোগ)। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে অপহরণ ও অত্যাচারের অভিযোগে ৭ বছর কারাদণ্ডাদেশ (৩ নম্বর অভিযোগ)।  সানাউল্লাহ চৌধুরীকে অপহরণ, নির্যাতন ও আটকে রাখার অভিযোগে ৭ বছর কারাদণ্ডাদেশ (৭ নম্বর অভিযোগ); মো. ওসমান, জামালউদ্দিন, কামালউদ্দিন, সরোয়ার উদ্দিন,  গোলাম কিবরিয়া ও গোলাম রহমানকে ধরে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা ও নির্যাতনের অভিযোগে ৭ বছর কারাদণ্ডাদেশ (৯ নম্বর অভিযোগ);

জাকারিয়া, সালাউদ্দিন, ইস্কান্দার ও নাজিমুদ্দিনকে অপহরণ, নির্যাতন ও আটকে রাখার অভিযোগে ৭ বছর কারাদণ্ডাদেশ (১০ নম্বর অভিযোগ); এ জে এম নাসির উদ্দিন  চৌধুরীকে আটকে  রেখে অত্যাচারের অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ (১৪ নম্বর অভিযোগ)।

আপিলের রায়ে খালাস পাওয়া অন্য অভিযোগগুলো : শফিউদ্দিনকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ  থেকে খালাস (৪ নম্বর অভিযোগ)। হারুন অর রশিদ খানকে অপহরণ, নির্যাতন ও বন্দি করে রাখার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (৬ নম্বর অভিযোগ)।

গুরুদণ্ড হতে পারে না : গত রবিবার আপিল বিভাগে শুনানি শেষে এক ব্রিফিংয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, এই মামলায় যে সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে, সেখানে কোনো সাক্ষী বলেননি যে, মীর কাসেম সরাসরি এ হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছে তাতে তার অপরাধ প্রমাণ হয় না। আর সরাসরি অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থাকার কারণে তার গুরুদণ্ড (মৃত্যুদণ্ড) হতে পারে না।

চরম দণ্ড বহাল থাকবে : অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামিপক্ষ বলেছে, একটি চার্জের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অথচ সে  যে মুক্তিযোদ্ধা জসীমকে হত্যা করেছে, এর কোনো চাক্ষুস সাক্ষী নেই। আমি রায়ের অংশবিশেষ  থেকে আদালতকে  দেখিয়েছি, জসীম  যে ডালিম  হোটেলে বন্দি অবস্থায় ছিল, এটা প্রমাণিত। প্রসিকিউশন তা আদালতে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। তাই মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো সাজা দেয়া হলে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবিচার করা হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!