মিতুকে ছুরিকাঘাত করার সময় তার সাথে থাকা ছেলে মাহিরকে আনোয়ার নিজে ধরে রাখেন। সেসময় মাহির তার মাকে না মারতে আনোয়ারের পা ধরে করজোড় আকুতি করে বলে, ‘তোমরা আমার মাকে মেরে না, তাকে ছেড়ে দাও।’ এরপরও নবী তার ছেলের সামনে উপর্যপুরি আটটি ছুরিকাঘাত করে। এমনকি ওয়াসিম মিতুর মাথায় গুলি করে বলে উল্লেখ করে জবানবন্দি দেন গ্রেপ্তার আনোয়ার।
‘পুলিশের বড় সোর্স’ আবু মুছার নির্দেশেই পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম খুন হয়েছেন বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে এসব কথা জানিয়েছেন মিতু হত্যায় গ্রেপ্তার রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা মোতালেব ওরফে ওয়াসিম (২৮)। মুছা শুধু নির্দেশদাতাই নয় তার গুলিতেই মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রোববার (২৬ জুন) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হারুন অর রশীদ এর আদালতে মিতু হত্যায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন গ্রেপ্তার ওয়াসিম ও আনোয়ার। সেই জবানবন্দিতে খুনের কারণ কিংবা খুনের শিকার মিতুকে পূর্ব থেকে না চেনার কথা জানালেও শুধুমাত্র আবু মুছার নির্দেশে টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে কিলার হিসেবে ৭ সদস্যের এই কিলিং স্কোয়াড এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল বলে জানান।
জবানবন্দিতে বলা হয়, আবু মুছার নির্দেশে জিইসি মোড় এলাকার এক নারীকে খুনের জন্য তারা গত ৫ জুন ভোরে জড়ো হন। এই হত্যা মিশনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল মুছার ওপরই। তার নির্দেশনা মতে টাকার বিনিময়ে মোট সাতজন এই হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল। তারা হলেন, আবু মুছা, ওয়াসিম, রাশেদ, নবী, কালু, শাহজাহান ও আনোয়ার। এদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে ভোলা নামে একজনের নামও উঠে আসে তাদের দুজনের জবানবন্দিতে।
১০ পৃষ্টার জবানবন্দিতে আনোয়ার জানান, মিতুকে তারা খুন করলেও ভিকটিমের পরিচয় সম্পর্কে তারা জানতোনা। হত্যাকান্ডের পরে টিভিতে যখন নিহত ওই নারী এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী বলে নিশ্চিত হয় তখন তারা ভয় পেয়ে মুছাকে ফোন দেন। এসময় মুছা নিজকে এক বড় পুলিশ অফিসারের সোর্স দাবি করে তাদের হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বলেন। এরপর তারা উভয়ে জামা-কাপড় পাল্টিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ রাখে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। পরদিন পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিআই)। তবে মামলার মূল তদন্তে আছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যদিও সবগুলো সংস্থা মিলে এই হত্যাকান্ডের ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে। তারা ইতোমধ্যে রহস্য উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলেও দাবি পুলিশের।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন