বরিশাল : রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৩০ জুলাই এই তিন সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৯ মে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত জানায় ইসি। এর পর থেকেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) চতুর্থবারের নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
মেয়র পদে জাতীয় পার্টি, বাসদ, সিপিবি ও জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও বড় দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। এ দুই দলে রয়েছেন সম্ভব্য একাধিক মেয়র প্রার্থী। মেয়র, ৩০টি ওয়ার্ডের ৩০ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ১০ মহিলা কাউন্সিলরসহ মোট ৪১ সদস্যের পরিষদের জন্য কমপক্ষে ২০০ সম্ভাব্য প্রার্থী বিসিসি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন। ৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মধ্যে বর্তমানদের সঙ্গে নতুন প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য নিজ নিজ ওয়ার্ডে শুভাকাক্সক্ষীদের কাছে দোয়া চাইছেন।
এ লক্ষ্যে তাদের বিভিন্ন সময়ে এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে দেখা গেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারদলীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের শীর্ষ নেতা ও হাইকমান্ডের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায়।
আওয়ামী লীগ মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ (আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির ছেলে) মেয়র প্রার্থী হতে তার সমর্থকদের নিয়ে দুই বছর ধরে নগরে গণসংযোগ করছেন। মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে তাকে মনোনয়ন দিতে কেন্দ্রে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে বলে জানান মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল।
এ ছাড়া সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল জাহিদ ফারুক শামিম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মীর আমিন উদ্দিন মোহন। তবে মেয়র প্রার্থী বাছাই ও চূড়ান্ত করতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির বড় ভূমিকা রয়েছে। দলীয় প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে তিনি যাকে সমর্থন করে কেন্দ্রে নাম প্রস্তাব করবেন তিনিই দলীয় প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।
বিসিসির সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরন ২০১৪ সালে মারা যাওয়ার পর এখানে আওয়ামী লীগে এখনো উল্লেখযোগ্য মেয়র প্রার্থী তৈরি হয়নি বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটার।
এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার জানান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন, বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চান, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি বর্তমান প্যানেল মেয়র কে এম শহীদুল্লাহ, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পরপর চারবার নির্বাচিত কাউন্সিলর আলতাফ মহমুদ সিকদার মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে দল সিদ্ধান্ত দেবে কাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেবে। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) বরিশালের নেতা অধ্যক্ষ মহসিন-উল-ইসলাম হাবুল জানান, তার দলের পক্ষ থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির বরিশাল জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন তাপসকে প্রার্থী দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে গত বছরের শেষদিকে। অপরদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন সিপিবির বরিশাল জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে আজাদ।
এ ছাড়াও মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল মেয়র প্রার্থী হবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৫ জুন। তখন বিএনপি সমর্থিত আহসান হাবিব কামাল ১৭ হাজার ১০ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনকে পরাজিত করে সিটি মেয়র নির্বাচিত হন। আহসান হাবিব কামাল পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট আর শওকত হোসেন হিরন পেয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৭৪১ ভোট। নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় ২৪ জুন।
বরিশাল মহানগর নিয়ে সদর-৫ আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পেলেও দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বিএনপির দুর্গে আওয়ামী লীগ হানা দিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয়। বিসিসির দ্বিতীয়বারের নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরন মেয়র নির্বাচিত হয়ে চমক লাগিয়ে দেন। তখন বিএনপির হাতবদল হয়ে নিয়ন্ত্রণে চলে যায় আওয়ামী লীগের। কিন্তু তৃতীয়বারের বিসিসি নির্বাচনে দলীয় অভ্যন্তরীণ সব কোন্দল ভুলে গিয়ে সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামালকে মেয়র নির্বাচিত করেন।
এবার চতুর্থবারের বিসিসি নির্বাচনে বিএনপি চায় ধানের শীষ মার্কা জয়ী হয়ে মেয়র পদটি ধরে রাখতে আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায় হারানো পদটি দখলে নিতে।
বরিশালের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিন খান জানান, বর্তমানে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় হালনাগাদ মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ২৫ হাজার ৫২৩। এর মধ্যে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৩৭ জন পুরুষ, আর ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৬ জন মহিলা ভোটার রয়েছেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই