ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেট দেশিয় শিল্প সুরক্ষার হলেও দেশিয় সিরামিক শিল্পের ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) নেতৃবৃন্দ দেশিয় সিরামিক শিল্প রক্ষায় বিদেশে তৈরি টাইলস্ আমদানি ক্ষেত্রে ন্যুনতম ট্যারিফ মূল্য হ্রাস না করে আরও বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি দেশিয় সকল প্রকার টাইলস্ এবং স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকালে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ ঘোষণা পরবর্তী জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান বিসিএমইএ নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সাধারন সম্পাদক ইরফান উদ্দিনসহ সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
বিসিএমইএ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, যেখানে দেশিয় পণ্যের উপরে উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং বিক্রয়কালীন সময়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপ রয়েছে, সেখানে তৈরি পণ্যের আমদানি পর্যায়ে ট্যারিফ মূল্য হ্রাস করার ফলে দেশিয় পণ্য অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। এতে করে এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ কমে যাবে, ফলে কর্মসংস্থান সুযোগের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হবে।
বাজার সংকুচিত হলে সিরামিক খাতটি রুগ্ন শিল্পখাত হিসাবেও পরিণত হতে পারে। এতে আর্থিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।যেখানে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সিরামিক শিল্প এমনিতেই টিকে থাকতেই হিমসিম খাচ্ছে। আর তাই দেশিয় সিরামিক শিল্প সুরক্ষায় বিদেশে তৈরি টাইলস্ আমদানি পর্যায়ে ন্যুনতম ট্যারিফ মূল্য হ্রাস না করে আরও বৃদ্ধি করা জরুরি।
বিসিএমইএ সাধারন সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন , দেশিয় টাইলস্ এবং স্যানিটারি পণ্য এখন কোন বিলাসী পণ্য হিসাবে বিবেচিত হয় না। স্বাস্থ্য সম্মত গৃহ নির্মাণে এসব পণ্য অপরিহার্য গৃহনির্মাণ উপকরণ হিসাবে ব্যবহার হয়। দেশিয় পণ্যের উপরে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হলে মূল্য হ্রাস পাবে, ফলে ব্যবহারের মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে বিক্রয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিমানও বৃদ্ধি পাবে। আর তাই দেশিয় সকল প্রকারের টাইলস্ এবং স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিসিএমইএ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট মই নুল ইসলাম, পরিচালক রাশেদ মাইমুনুল ইসলাম, আজিজুল হাকিম সুমন ও রুসলান নাসির।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বাজেটে প্রজ্ঞাপন এস,আর,ও, নং-১৬১-আইন/২০২১/১৫৮-মূসক, তারিখঃ ০৩ জুন, ২০২১ জারির মাধ্যমে টাইলস্ বা স্যানিটারি পণ্যের ডিলার বা পরিবেশক কর্র্তৃক সরবরাহকৃত পণ্যের উপর আরোপণীয় মূল্য সংযোজন কর আদায় বিধিমালা ২০২১ আরোপ করা হয়েছে। যেখানে স্থানীয় শিল্পের ডিলার বা পরিবেশদেরকে অনেক গুলি বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনা হয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত টাইলস্ ও স্যানিটারিওয়্যার ডিলার ও পরিবেশকদেরকে এই বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় শিল্পের ডিলার ও পরিবেশকরা একটি কঠিন বাস্তবতার সম্মুখিন হবে এবং দেশিয় পণ্য বিক্রয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাই এস,আর,ও, নং-১৬১সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে বিদ্যমান ভ্যাট আদায়ের আইন চলমান রাখা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সিরামিক একটি প্রসেসিং মেন্যুফেকচারিং ইন্ডাস্ট্রি। সিরামিক খাতে ব্যবহৃত প্রধান প্রাথমিক কাঁচামালের প্রায় ৮০% শতাংশই প্রাকৃতিক খনিজ মাটি-জাতীয় পদার্থ। এর মধ্যে চায়না ক্লে (এইচ.এস কোড২৫০৭.০০.০০) এবং বল ক্লে (এইচ.এস কোড২৫০৮.৪০.০০) পণ্যের বডি তৈরিতে ব্যবহার্য্য মোট উপকরণের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। এই সকল প্রাকৃতিক খনিজ-মাটির উৎস দেশে না থাকায় আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে Moisture, Iron, Wate এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। খনি থেকে কারখানা পর্যন্ত পরিবহনে ওয়েস্টজ হওয়াসহ বিভিন্ন প্রসেস পাড়ি দিয়ে তৈরিপণ্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে স্বাভাবিক ভাবেই ৩০% থেকে ৪০% পর্যন্ত প্রসেসলস বা অবচয় হয়ে থাকে। অথচ আমদানিতে অদৃশ্য পানিসহ শতভাগ পণ্যের উপরই সকল প্রকারের শুল্ক-কর পরিশোধসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় করতে হচ্ছে। আর তাই সিরামিকের বডি তৈরির এই সকল কাঁচামাল আমদানিতে ৩০ শতাংশ অবচয় ধরে আমদানিশুল্ক পরিশোধ ব্যবসা বান্ধব হবে।
সোনালীনিউজ/এমএইচ