ঢাকা : পরিবহন খাতে শীর্ষ প্রাধান্য এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এডিপি নেওয়া হলেও তা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এ হিসাবে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ বেড়েছে ১৬ হাজার ৭৮৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর সংশোধিত এডিপির তুলনায় নতুন এডিপির আকার বেড়েছে ২৩ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (১০ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি অনুমোদন পায়। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে নতুন এডিপির বিস্তারিত গণমাধ্যমে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এ সময় তিনি জানান, নতুন এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে মূল এডিপির আকার ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এ পরিমাণ অর্থ এডিপি হিসেবে দেখানো হবে। এর বাইরে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিলের পাশাপাশি এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির (ইসিএ) ঋণের ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা এডিপি বরাদ্দে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ আছে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩০ ভাগ। বিদেশি সহায়তার বরাদ্দ ৫২ হাজার ৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে আগামী অর্থবছর বিদেশি সহায়তা বাবদ ৭ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বাড়তি সংগ্রহ করবে সরকার। বিদেশি সহায়তা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল ও ইসিএ ঋণের বরাদ্দ ৯ হাজার ২১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি ২২ লাখ টাকা কমানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুকূলে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পলী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগটি বরাদ্দ পেয়েছে ২৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগের অনুকূলে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ হাজার ৮৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুকূলে দেওয়া হয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৮১৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর বাইরে শীর্ষ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৭২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ১৫৪ কোটি ৭২ লাখ, সেতু বিভাগ ৯ হাজার ১১২ কোটি ১৫ লাখ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৯ হাজার ৪০ কোটি ৬৩ লাখ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৩১২ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ৬ হাজার ৬ কোটি ৪৬ লাখ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৫ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।
সরকারের শেষ সময়ে পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, কর্ণফুলী নদীর টানেলসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প দৃশ্যমান করতে নতুন এডিপিতে সর্বোচ্চ প্রাধান্য পেয়েছে পরিবহন খাত। এ খাতে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ৪৪৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট এডিপি বরাদ্দের ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ ব্যয় হবে পরিবহন খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ হাজার ৯৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে দেওয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৮৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সংবাদ ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) লক্ষ্য পূরণে প্রধান ভূমিকা রাখে এডিপি। এডিপি বাস্তবায়নে পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে সরকার। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। স্কুলে উপস্থিতি, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার কথা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার এসব লক্ষ্য পূরণের পথে রয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের শুরুতে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছিল। বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ৬ হাজার ৪৯১ টাকা কেটে নিয়ে আরএডিপি নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায়। জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এ হিসাবে প্রথম ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশে। সংশোধিত এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন করতে আগামী ২ মাসে ৭৪ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় এ সময়ে বিশাল অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণের অর্থ ছাড় হলে কাজেন গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলেও তারা মনে করেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই