ঢাকা : আমানত কমায় নতুন বছরের শুরুতেও তারল্য সংকটে রয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এদিকে, আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় পড়ে কার্যকর করা যাচ্ছে না ৬ ও ৯ শতাংশ সুদহার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানো ও খেলাপি ঋণ আদায়ে উদ্যোগী না হলে এ পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে না বলে মনে করছেন ব্যাংকিং বিশ্লেষকরা। আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতার কারণে বছরের শুরুতেই মেয়াদি আমানতের সুদের হার ১০ শতাংশে পৌঁছেছে। আমানতের সুদহার বাড়ায় বেড়েছে ঋণের সুদহারও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমানত ও ঋণের সুদহার যথাক্রমে ৬ ও ৯ শতাংশে বেঁধে দেয়া হলেও তা কার্যকর করছে না অনেক ব্যাংক।
অগ্রণী ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম জানান, ‘যেটা হচ্ছে না, সেটা আমি মনে করি যে কিছু বেসরকারি ব্যাংকিং-এ কিছু হচ্ছে বা হচ্ছে না। আমাদের ক্ষতি হচ্ছে, অনেক আমানত চলে যাচ্ছে কিংবা আমাদের ইনকাম স্কিম কমে যাচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি এটার একটা পজিটিভ ইম্প্যাক্ট আছে অর্থনীতিতে।’
ট্রাস্ট ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দীন জানান, ‘তারল্য সংকট কেটেছে এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না, বরং গত বছরের তুলনায় তারল্য সংকট আরও বাড়তেও পারে। ২০১৮ সালের পরে যখন একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন যারা বিনিয়োগকারি, তখন তাদের ওয়েট এন্ড সি-এর পর্বটা শেষ হয়, তখন তারা নতুন বিনিয়োগে যায়। যখনই তারা নতুন বিনিয়োগে যাবে তখনই তারল্যের ওপর চাপ পরবেই।’
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সুদহারের তুলনায় আমানতের সুদহার প্রায় অর্ধেক। ফলে মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা।
ট্রাস্ট ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দীন আরও জানান, ‘মধ্যবিত্ত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, তারা কিন্তু ব্যাংকের সুদের চাইতে সঞ্চয়পত্রের সুদ যেহেতু বেশি তার দিকে ঝুকে পড়তে পারে। সুতরাং এটা একটা ব্যাপার।’
বিআইবিএম-এর অধ্যাপক আহসান হাবীব বলেন, ‘আমানত হার হয়তো সবসময় ইনফ্লেশনের থেকে একটু বেশি না হলে মানুষের মধ্যে ইনসেন্টিভ থাকে না। আমানতের ক্ষেত্রে সমস্যাটা সবাই এখন উপলব্ধি করছে যার একটা সমাধানের দিকে আমাদের যেতে হবে। কারণ হলো এটার সাথে মানুষ তুলনা করে সঞ্চয়পত্রগুলো।’
২০১৯ সাল শুরু হয়েছে আমানতের সংকট দিয়েই। বন্ড মার্কেটের সম্প্রসারণ, বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমালে তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না বলেই মনে করেন এই বিশ্লেষক।
ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের লাগাম টানতে এডি রেশিও কিছুটা কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও সমন্বয় করার কথা রয়েছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই