ঢাকা : প্রায় দুই যুগ ধরে অভিনয় করে যাচ্ছেন মির সাব্বির। অভিনয়কে নেশা হিসেবে নিয়ে কাজ শুরু করে ছিলেন থিয়েটারে। এখন নেশাই পেশা হয়ে গেছে তার। তিনি ১৯৯৯ সালে ‘পুত্র’ নামে একটি নাটকের মধ্য দিয়ে টেলিভিশন অভিনয়ের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ‘বরিশাল বনাম নোয়াখালী এবং ধারাবাহিক নাটক ‘মকবুল’-এর মধ্য দিয়ে।
‘নোয়াশাল’ মীর সাব্বির পরিচালিত নাটক একটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো। এছাড়াও তার পরিচালনা ও অভিনয়ে অনেক নাটক রয়েছে। তিনি অনেক চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন, তার মধ্যে ‘ভালবাসা এমনই হয়’, ‘কি যাদু করিলা’ উল্লেখযোগ্য।
কাজের ভিতরে থাকা মানুষটি কথা বলেছেন ‘সোনালীনিউজ’-এর সঙ্গে। অভিনয় এবং ঈদ ভাবনার গল্প জেনেছেন শব্দনীল।
সোনালীনিউজ : আপনি প্রায় দুই যুগ ধরে অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অভিনয় করতে আসা আপনাদের প্রজন্ম এবং বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে কোনও পার্থক্য কি আছে-
মির সাব্বির : আমরা যখন শুরু করেছি তখন থিয়েটার চর্চার প্রবণতা ছিলো। মানে আমরা থিয়েটার করে এসেছি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে থিয়েটার অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। এই চর্চার যায়গাটায় এক ধরণের অভাব আছে। এখন অনেকেই ভালো অভিনয় করছে, মেধাবীও কিন্তু থিয়েটার চর্চা করলে যেটা হয়, স্থায়িত্ব বাড়ে। কাজের স্থান বাড়ে, চিন্তার খোঁড়াক যোগায়, নতুন ভাবনা তৈরি করে, নিত্য নতুন চিন্তাকে সমৃদ্ধ করে। এখন সকলে চর্চার পরিবর্তে যান্ত্রিকতার ভেতর ঢুকে গেছে। সকলে দ্রুত কাজ করতে চাচ্ছে, রিচ হতে চাচ্ছে, দ্রুত নাম করতে চাচ্ছে। গাড়ি-বাড়ি-ফ্ল্যাট, টাকা-পয়সা দ্রুত ইনকাম করতে চাচ্ছে। নাটক করে ইনকাম করা যায় এই ধরণের চিন্তা ভাবনা তাদের ভেতর চলে এসেছে। আসলে আমি যখন কাজ শুরু করেছি, এই ধরণের চিন্তা-ভাবনা মাথার ভেতর আসেনি। কাজ নিয়ে শুধু চিন্তা করেছি। কাজ করার নেশাটি আমার পেশা হয়ে গেছে। এখন সকলে, কাজটিকে পেশা হিসেবে নেওয়া শুরু করেছে। নেশাটা আসলে হারায় যাচ্ছে। তবে সকল ক্ষেত্রে না অবশ্যই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হচ্ছে। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। দেখুন একটা প্রজন্ম যদি এই ভাবে তৈরি হতে থাকে তবে পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি করতে অনেক সমস্যা হবে। আমরা যেভাবে তৈরি হয়েছি কারণ, আমাদের আগের প্রজন্ম কাছ থেকে আমরা শিখেছি। তার আগের প্রজন্ম, আগের প্রজন্ম থেকে শিখেছে। এই ভাবেই তো চলছে। এই যে শিখার বিষয়গুলো আস্তে আস্তে কমছে, এক সময় তো শেষ হয়ে যাবে। শিখার কিছু থাকবে না। এতে প্রজন্ম নষ্ট পথে চলবে। যা আমাদের জন্য আশংকা, হুমকি সরূপ।
সোনালীনিউজ : ঈদুল আজহার পরিকল্পনা শুনতে চাই ।
মির সাব্বির : ঈদ পরিকল্পনা বলতে প্রতি বছরে যে ভাবে হয়ে আসছে, এবার সেভাবে হবে না। কারণ, করোনা চলছে। ঈদের যে আনন্দ বা উচ্ছ্বাস তার পরিবর্তে এক ধরণের আতঙ্কের ভেতর আছি বলা যায়। পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যতটা সাবধানতা অবলম্বন করে ঈদ উদযাপন করা যায় তাই করবো।
সোনালীনিউজ : ঈদকে ঘিরে আপনার ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই ।
মির সাব্বির : লকডাইনের ভেতরে থেকে যতটুকু পেড়েছি ঈদের কাজ করেছি। অনেক কাজ করেছি। কয়টার নাম বল যায় বলুন, একটার নাম নিতে হলে অন্যটিরও নাম নিতে হবে। তারচেয়ে দেখুন প্রচার তো হবেই। তখন সকলে দেখতে পারবে।
সোনালীনিউজ : বাংলা সাহিত্যের কোন উপন্যাসের নায়ক হওয়ার ইচ্ছা আছে ।
মির সাব্বির : পছন্দের উপন্যাস তো অনেক। নানা রকম চরিত্রে বিন্যস্ত। বয়সের কারণে হোক বা যে কোনও কারণে হোক, ধরেন এখন আমার যে বয়স, সেই বয়সে এসে তো ২৫ বছরের কোনও চরিত্রের রোল প্লে করতে পারবো। ইচ্ছে ছিলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’র অমিতের চরিত্রটি করা, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ করার ইচ্ছা ছিলো। হুমায়ূন আহমেদের অনেকগুলো চরিত্রের মধ্যে ‘হিমু’ চরিত্রটি আমার খুব পছন্দের। এই চরিত্রটি করতে ইচ্ছা ছিলো। নানান রকমের ইচ্ছা ছিলো। আবার ইচ্ছা তো পরিবর্তনশীল।
সোনালীনিউজ : বাংলাচলচ্চিত্রের কোন নায়িকার সঙ্গে অভিনয় কেরতে পারলে ভালো লাগতো বলে মনে করেন ।
মির সাব্বির : আমাদের সময় মানে ছোট বেলার তো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছে ববিতা আপ, শাবান আপা। সে রকম অভিনেত্রী তো বাংলা সিনেমায় আর আসে নাই। পরবর্তীতে এসেছে মৌসুমি আপা, সাবনুর। সাবনুরের সঙ্গে অভিনয় করি নাই, মৌসুমি আপার সঙ্গে নাটকে অভিনয় করেছি। আমার আসলে নায়িকার চাইতে ভালো অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করার বড় ইচ্ছা। সিনেমায় নাচ-গান করার চেয়ে ভালো অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে ভালো লাগে। আর দেশের বাহিরে যদি বলেন, অনেকেই আছে। আমি আসলে নাম মনে রাখতে পারি না তবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির কথা বলতে পারি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই