ঢাকা : গভীর রাতে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে অটোরিকশা থামিয়ে তরুণীর ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এই কাজটিকে আইনবিরোধী বলছেন বাহিনীটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তরুণীটিকে ইচ্ছা করে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন পুলিশ সদস্যরা। আর তাকে নানা আপত্তিকর কথাও বলা হচ্ছে।
জানা গেছে, ঘটনাটি রাজধানীর একটি পুলিশ চেকপোস্টে। তবে কোন এলাকায় সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ সদস্যদের চেহারাও দেখানো হয়নি ভিডিওতে।
চেকপোস্টে ওই নারীকে বহনকারী সিএনজি থামিয়ে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান কয়েকজন পুলিশ সদস্য। ভিডিও দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন পুলিশেরই কোন সদস্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমাদের নজরে আসার পর তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে। অপরাধীকে বিধিমোতাবেক অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, সোমবার (২২ অক্টোবর) রাতে রামপুরা এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে অটোরিকশার যাত্রী ওই তরুণীকে থামিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। এ সময় ওই তরুণীর সঙ্গে ‘কুরুচিপূর্ণ’ কথা বলেন পুলিশের ওই সদস্যরা। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করণের কাজ প্রায় শেষ।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই পুলিশ সদস্যরা মিরপুর থেকে রাতে রামপুরায় গিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। চূড়ান্ত তদন্ত শেষে এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিস্তারিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানাবেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে তরুণী ও পুলিশ সদস্যদের কথোপকথনের কিছু অংশ এখানে তুলে দেওয়া হলো…
তরুণী : আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?
পুলিশ : কীভাবে বলা হয়েছে?
তরুণী : এত ভাব মারেন কেন? মাইয়াগো দেখলে ব্যাগ চেক করেন।
পুলিশ : এই, আপনি কিন্তু এত বিশ্বসুন্দরী না।
তরুণী : সমস্যা কী আপনার?
পুলিশ : না, আপনে তো মনে করছেন, আপনে কী যেন হয়ে গেছেন। আপনাকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আপনার সমস্যা কি?
তরুণী : সমস্যা লাইট সরান। আপনাদের সমস্যা কী?
পুলিশ : এটা আমাদের চেক পোস্ট, আমরা চেক করব।
তরুণী : তো চেক করেন না কেন, এত কথা বলেন কেন?
পুলিশ : আপনে এত কথা বলেন কেন? বেয়াদব মেয়ে। বাসা থেকে ভালো করে এয়া শেখায়নি? আপনাকে ভালো করে বাসা থেকে শিক্ষা দেয়নি?
তরুণী : আপনে বেয়াদব? আপনে আমাকে খারাপ মেয়ে কেন বললেন? এইটা পুলিশের বিহ্যাব (আচরণ) হইলো? ফিল্ডিং মারবেন কেন?
পুলিশ : আপনার সাথে কি ফিল্ডিং মারছি? এই আপনার সাথে কে ফিল্ডিং মারছে?
তরুণী : লাইট সরান, চোখে ধরছেন কেন? ব্যাগে মারেন লাইট, চেক করেন।
পুলিশ : এখন রাত কয়টা বাজে? আড়াইটা বাজে। একটা ভদ্র ফ্যামেলির মেয়েরা…
তরুণী : আমি সারারাত চলবো, আপনার সমস্যা?
পুলিশ : তো আপনে এভাবে অভদ্রর মতো কথা বলছেন কেন? বাসা থেকে আপনাকে ভদ্রতা শিখায়নি?
তরুণী : অভদ্রতো আপনে...
পুলিশ : বাসা কোথায়? কার মেয়ে আপনে? আপনে কার মেয়ে সেটা বলেন।
তরুণী : আমার ঠেকা পরে নাই।
পুলিশ : না, আপনে কোন মিনিস্টারের মেয়ে সেটা বলেন না। আপনে ব্যাগ খোলেন।
তরুণী : না, আপনারা খোলেন।
পুলিশ : না, না আমরা খুলব না তো। আপনার ব্যাগ আপনে দেখাবেন।
তরুণী : এতক্ষণ আমার টাইম নষ্ট করলেন…
পুলিশ : কেন, কেউ কি ওয়েট করতেছে?
তরুণী : কী হইছে? তোর বাপে ওয়েট করতেছে।
পুলিশ : বাসা হচ্ছে ডেমরা, আপনে ওই দিকে কোথায় যান?
তরুণী : হায় প্রশাসন, ভদ্রতা!
পুলিশ : সেটা আপনে কালকে দেখতে পারবেন। পুলিশ ভদ্র না অভদ্র, সেটা কালকে দেখতে পারবেন।
তরুণী : কী, বাল দেখব আমি।
পুলিশ : বাসা থেকে এইটা সেখাইয়া দিছে?
তরুণী :হ্যাঁ (রেগে )
পুলিশ : মানুষের সঙ্গে বাল-ছাল বলা শিখাই দিছে?
মেয়ে : অসভ্য, লাইটা নামান।
পুলিশ : ও তো পুরাভাবে অ্যাডিক্টেট, ওতো অ্যাডিক্টেট।
সোনালীনিউজ/এমটিআই