ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর)। ভোট কেন্দ্রগুলোর সামনে লাইনে দাঁড়াবেন আমেরিকানরা। তাদের রায়ে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই নয়, প্রভাব ফেলবে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতেও। চাইলেও তাই এ নির্বাচনকে কেবল উত্তর আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। তাই সবার দৃষ্টি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে।
নির্বাচনের ঠিক আগে ইমেইল কেলেঙ্কারির থাবা থেকে আবার রেহাই পেয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। মার্কিন অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই প্রথমে ইঙ্গিত দিয়েছিল, হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ইমেইল সার্ভার থেকে পাওয়া কিছু ইমেইল নিয়ে নতুন করে তদন্ত হতে পারে। বিরোধী রিপাবলিকান দলের বিপর্যস্ত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই সুবর্ণ সুযোগ লুফে নিয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন, ‘এমন প্রার্থীকে নির্বাচিত করা যায় ন।’
এর আগে রোববার (৬ নভেম্বর) এফবিআই জানায়, তদন্তের আওতায় হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো অভিযোগ আনা হচ্ছে না। ইমেইল কেলেঙ্কারি নিয়ে নতুন করে জলঘোলা হওয়ার পর গত ১০ দিনে কয়েক লাখ মার্কিন নাগরিক আগাম ভোট দিয়ে দিয়েছেন। তাদের সিদ্ধান্তের ওপর ঘটনাটি কতোটা প্রভাব ফেলেছে, তা কেউ জানে না। তবে কিছু মহল মনে করে, এর ফলে ক্লিনটনের সুবিধাই হয়েছে।
শেষ মুহূর্তে এফবিআই ক্লিনটনকে রেহাই দিলেও বাকি ভোটাররা মনস্থির করে ফেলেছেন কিনা, তাও জানা নেই। ক্লিনটন শিবির অবশ্য আশাবাদী। ইমেইল কেলেঙ্কারির কালো ছায়া আপাতত সরে যাওয়ার ফলে তাদের আশা, ভোটাররা এবার শুধু দুই প্রার্থীর যোগ্যতা বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
অপরদিকে, রিপাবলিকান শিবির এফবিআইর সোমবারের (৭ নভেম্বর) ঘোষণায় বিরক্তি প্রকাশ করেছে। তদন্তে এতো দ্রুত অগ্রগতি ও তার এতো সহজ পরিণতি নিয়ে তারা সন্দেহও প্রকাশ করেছে। ট্রাম্প আবার গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ‘রিগিং’, অর্থাৎ ভোট কারচুপি নিয়ে তার অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন। তার মতে, হিলারি ক্লিনটনকে রক্ষা করতে গোটা প্রশাসনযন্ত্র কাজ করছে।
দুই প্রার্থীই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচার চালিয়ে যান। বিশেষ করে যেসব রাজ্যের ভোট আগামী ৯ নভেম্বর গতি বদলে দিতে পারে, সেসব ‘সুইং স্টেট’গুলোকে তারা বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন। অর্থাৎ হোয়াইট হাউসে প্রবেশের জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প- দুজনই সর্ব প্রকার কৌশলগত দিক আমলে নিয়েই লড়াই চালিয়েছেন।
সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নিউ ইয়র্কের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ধনকুবের ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে। নির্বাচনে বিজয়ী হলে হিলারি ক্লিনটন হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জনগণের সঙ্গে আছেন হিলারি। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে জীবনের এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন মাত্র ১৮ মাস আগে।
এই কম সময়ের অভিজ্ঞতায় ৭০ বছরের ট্রাম্প প্রাইমারিতে ১৭ প্রার্থীকে পরাজিত করে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মধ্যে বিস্ময় তৈরি করেছেন। ভুলের প্রান্তসীমায় পৌঁছেও এখন তিনি হিলারির কাছে সামান্য পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে আছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি প্রচারাভিযানকে বিচলিত করে তুলেছেন। হিলারির পক্ষে প্রচারণায় বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যারিশমেটিক বারাক ওবামার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। কিছুদিন ধরে হিলারির জন্য ভোট চেয়েছেন ওবামা ও মিশেল। ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া, ওহাইও এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারে হাজার হাজার মানুষ ঘণ্টাব্যাপী ওবামার বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করেছেন। এসব সমাবেশে ওবামা হিলারির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বারাক ওবামা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।’ নিজের মন্ত্রিসভার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারিকে ভোট দিতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান ওবামা। একই সঙ্গে ট্রাম্পকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হোয়াইট হাউসে তার উত্তরসূরি হিসেবে ট্রাম্প উপযুক্ত নন।
অন্যদিকে গত দুই দিনে গড়ে ছয়টি করে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাটদের থামাতে ঐতিহ্যগতভাবে তাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মিনেসোটা ও কলোরাডোতেও তিনি ভাষণ দিয়েছেন। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবিরের নেতারা মিশিগান ও অ্যারিজোনায় প্রচার চালিয়েছেন। সম্প্রতি জরিপে মিনেসোটায় ট্রাম্পের উত্থানের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আর অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হিলারির জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সর্বশেষ প্রচারণা: ভোটের আগের দিন রাতে ফিলাডেলফিয়ায় ওবামার সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন হিলারি ক্লিনটন। মধ্যরাতে নর্থ ক্যারোলিনার রাজধানী রালেগে আয়োজিত র্যালিতে তিনি সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। একই সময়ে মিশিগানে অনুষ্ঠিত হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের শেষ র্যালি।
সব মতামত জরিপে এগিয়ে হিলারি: নির্বাচনের একদিন বাকি থাকতে সব জনমত জরিপে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ৪-৫ পয়েন্টে এগিয়ে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। সিএনএনের সর্বশেষ জরিপ বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে হিলারিই এগিয়ে। ৪৭ শতাংশ ভোটার হিলারিকে চান, আর ট্রাম্পকে চান ৪২ শতাংশ। ইলেক্টোরাল জরিপেও হিলারি এগিয়ে। ৫৩৮ ইলেক্টোরাল ভোটের ২৬৮টিই হিলারির পক্ষে, আর ট্রাম্পের পক্ষে ২০৪টি। রিপাবলিকানদেন সমর্থক ফক্সের জরিপে অবশ্য হিলারি-ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান মাত্র দুই পয়েন্ট। ৪৫ শতাংশ ভোটারের রায় হিলারির পক্ষে, অন্যদিকে ট্রাম্পের পক্ষে ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে, জরিপ সংস্থা ন্যাট সিলভারের হিসাবে হিলারি ক্লিনটনের বিজয়ের সম্ভাবনা ৬৫ শতাংশ। মাত্র ৩৫ শতাংশ সম্ভাবনা ট্রাম্পের।
স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি কাদা ছোড়াছুড়ি হলেও জনমত জরিপ অনুযায়ী দুই প্রার্থীই কোনো না কোনোভাবে ভোটারদের কাছে অপছন্দের। অনেকে হিলারিকে বিশ্বাস করেন না। আর অনেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনে করেন অভিবাসনবিরোধী, মুসলিম বিদ্বেষী। অনেকে আবার ট্রাম্পকে হিলারির চেয়ে অনেক বেশি মিথ্যা বলার জন্য দায়ী করেন। তারপরও মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এ নির্বাচনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন এবং এভাবে নির্বাচনকে তার পক্ষের আন্দোলনেও রূপ দিয়েছেন।
সোনালীনিউজ/এমএন