ঢাকা: ইসলামী ধারায় প্রেমের উপন্যাস লিখে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছেন বাংলাদেশের নিভৃতচারী লেখক কাশেম বিন আবু বকর। মূলধারার কবি-সহিত্যিকদের টপকে সাধারণ পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থান দখল করেছেন।
ইতোমধ্যেই এই লেখক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্থানও করে নিয়েছেন। যদিও দেশের মূল ধারার কোনো প্রকাশনীতে তার বইয়ের কোনো স্থান হয়নি।
লেখক কাশেম বিন আবু বাকারের লেখক হয়ে ওঠাও এক অন্যরকম গল্প। শুরুর দিকে বইয়ের দোকানে বিক্রয় সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তখনই দেখতে পান শহুরে গদবাঁধা সাহিত্যে গ্রামের সাধারণ তরুণ-তরুণীদের জন্য কোনো উপাদানই থাকে না। এসব ভারী উপন্যাস পড়ে নিজেদের খুঁজে পায় না গ্রামের সাধারণ মানুষ।
তাই কাশেম বিন আবু বাকার ভাবতে শুরু করেন, গতানুগতিক এই ধারা থেকে বেরিয়ে ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশে ইসলামী উপন্যাস লিখতে হবে। যেই কথা সেই কাজ। সত্তরের দশকেই কলম ধরেন। তার লেখা ‘ফুটন্ত গোলাপ’ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে।
তার জনপ্রিয়তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বার্তাসংস্থা এএফপিকে লেখক বলেন, ‘মেয়েরা আমাকে নিজেদের রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে পাঠায়। অনেকেই আবার বিয়ে করার প্রস্তাবও দেয়।’ লেখক হতবাক হয়ে পড়েন তার জনপ্রিয়তায়। তার মত বয়স্ক লোকের জন্য নারীদের উন্মাদনা সত্যিই বিস্ময়কর।
লেখকের প্রথম বইয়ের নাম ‘ফুটন্ত গোলাপ’। প্রায় তিন দশক আগে বইটি লিখেছিলেন। যা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। লেখক বলেন, ফুটন্ত গোলাপের মতো বইগুলো লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। ইদানিং এ প্রজন্মের ধর্মপ্রাণ ইসলামিক চেতনার রক্ষণশীল সমাজের কাছে নতুন করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে তার লেখা উপন্যাস।
তবে কাশেম বিন আবু বাকারের পথ ফুল বিছানো নয়। অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন। তাকে বলা হয়, ‘মোল্লাদের উপন্যাস বিক্রি হয় না।’ তবে কাদেরুদ্দিন শিশির নামে এক সাংবাদিক বলেন, কাশেম বিন আবু বকর তার উপন্যাস দিয়ে একটি জনগোষ্ঠীকে মোহিত করতে পেরেছেন। যা এর আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেন নি।
এছাড়াও বলা হয়ে থাকে, কাশেম বিন আবুবাকারের উপন্যাস প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য সেরা উপহার। যুবক প্রেমিক সমাজ এই বইগুলো তাদের প্রেমিকা ও বাগদত্তাদের উপহার দেয়া শুরু করেন।
‘ফুটন্ত গোলাপ’ উপন্যাসে লেখক মুসলিম পরিবারের দু’জন প্রেমিক যুগলের কথা লিখেছেন, যারা বিয়ের জন্য পারিবারিক সম্মতি চায়। এই প্রেক্ষাপটের উপন্যাসটি তিনি ১৯৭৮ সালে লেখেন। তবে বইটি প্রকাশিত হতে সময় নেয় প্রায় এক দশক।
এই প্রসঙ্গে কাশেম জানান, প্রকাশকেরা বলেন, মোল্লাদের বই বিক্রি হয় না। আর তাই তিনি তার ফুটন্ত গোলাপ বইয়ের স্বত্ব মাত্র এক হাজার টাকায় প্রকাশকের কাছে বিক্রি করে দেন। কিন্তু বইটি প্রকাশের পর বদলে যায় পুরো চিত্রটি। রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যান লেখক। এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটার পর প্রায় এক ডজনের মত উপন্যাস লেখেন কাশেম বিন আবু বাকার।
আরেক উপন্যাসিক মাজহারুল পারভেজ জানান, তার বইয়ের জনপ্রিয়তার কারণে অসংখ্য ছাত্র মাদরাসায় নতুন করে পাঠ শুরু করে। তিনি বলেন, ‘গ্রামের মানুষ এই লেখকের লেখায় নিজেদের গল্প খুঁজে পেতেন। তার লেখার ভাষা তাদের তৃপ্তি দিতে সক্ষম হয়।’
সোনালীনিউজ ডটকম/ঢাকা/এআই