ঢাকা : স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সবচেয়ে বিপর্যয়কর ঘটনা অবশ্যই স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড। যার নেতৃত্বে অভ্যুদয় ঘটল একটি নতুন দেশের তাকেই খুন করা হলো স্বাধীনতার চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে। দেশের অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে উঠেছিল সেই বিপর্যয়। এরপর দুটি সামরিক শাসন আমাদের আরো ঠেলে দেয়ে পেছনের দিকে। দীর্ঘকাল আটকে রাখলেও সে হত্যাকাণ্ডের বিচার করা সম্ভব হয়েছে, যদিও আজো সবার রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। হাজারো বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার করাও বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন।
১৯২০ সালে টুঙ্গিপাড়ায় যে শিশুটি জন্ম নিয়েছিল, কালের আবর্তনে সেই হয়ে উঠেছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে পাকিস্তান সরকারের এ ভূখণ্ডবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সোচ্চার প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল যে কণ্ঠস্বরে, সেই বজ্রকণ্ঠের সুনিপুণ দক্ষতায় পরাধীনতার নাগপাশ থেকে দেশ দেখেছিল মুক্তির সোনালি সূর্য। সেই মহামানব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের কালরাত ১৫ আগস্ট ভোরে। দীর্ঘ ২৩ বছর পর সেই হত্যার ঐতিহাসিক মামলার রায় ঘোষিত হয় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার ১৭১ পৃষ্ঠাব্যাপী যে রায় ঘোষণা করেন তার শুরুতেই তিনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলেন-
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কয়েক মাস পূর্ব হতে সেনাবাহিনীর বিপথগামী ও চাকরিচ্যুত বিক্ষুব্ধ কিছু লোক রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী কিছু ব্যক্তির সহযোগী হয়ে যৌথ ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা ও তার সরকারকে উৎখাত করার চক্রান্তে ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। অতঃপর সলাপরামর্শ ও পরিকল্পনামতে সেনাবহিনীর ঐ সমস্ত লোক ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে নাইট ট্রেনিং/প্যারেডের অজুহাতে ঢাকা ক্যানটনমেন্ট এলাকার বালুরঘাটে একত্রিত হয়ে সৈনিকদের বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্রিফিং করে ট্যাংক, কামান, অস্ত্র গোলাগুলি নিয়ে বিভক্ত হয়ে একদল অনুমান ভোর ৫টার সময় ধানমন্ডি ৩২ নং রোডস্থ বঙ্গবন্ধুর ৬৭৭ নং বাসভবনে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার স্ত্রী ফজিলাতুননেছা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের, রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি কর্নেল জামিলসহ মোট ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে মৃতদেহগুলোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন না করে কবরস্থ করে। প্রসিকিউশন দেশের সুষ্ঠু ও সামাজিক শান্তি নিশ্চিত করার এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের আইনত বিচার ও উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতাসীন হন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও হত্যাকারীদের অন্যতম সহযোগী খন্দকার মোশতাক আহমেদ। নতুন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক পঁচাত্তরের ২০ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে তারই পরম বন্ধু প্রয়াত শেখ মুজিবের সাথে শেষ ও চূড়ান্ত শত্রুতা করে। পরবর্তী সংসদে এই অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করা হয়। এই বাধাটি সরাননি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, তারপরের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। জেনারেল এরশাদও কোনো উদ্যোগ নেননি, খালেদা জিয়াও ছিলেন নিশ্চুপ।
শেখ মুজিব ছিলেন একজন বিশাল মাপের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই নেতার হত্যাকাণ্ডও ছিল রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট। ফলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করতে আওয়ামী লীগকে সুদীর্ঘ ২১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ১৯৯৭ সালের ৬ জুলাই ঢাকা দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে বিচারকার্য শুরু হয়। এর আগে ৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর পিএ মহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় এজাহার দায়ের করেন। কিন্তু মামলার বাধা থেকে যায় ইনডিমনিটি অধ্যাদেশের কারণে। এর মধ্যে ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদসহ প্রখ্যাত আইজীবীদের আইনি ব্যাখ্যায় মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ২২ নভেম্বর ১৯৯৬ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল করা হয়। মামলাটির চার্জশিট দাখিল করা হয় ১৫ জানুয়ারি ১৯৯৭ এবং ১২ মার্চ মামলাটি আদালতে ওঠে।
রুজুকৃত এজাহারের ভিত্তিতে পুলিশ এই মামলার খুঁটিনাটি তদন্তপূর্বক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারা মোতাবেক বর্তমানে মৃত খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, মাহবুব আলম চাষি, ক্যাপ্টেন মোস্তফা ও রিসালদার সৈয়দ সারোয়ার হোসেনসহ উপস্থিত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার খান, লে. মহিউদ্দিন (আর্টিলারি), অনারারী ক্যাপ্টেন আব্দুল ওহাব জোয়ার্দার, প্রাক্তন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর, জোবায়দা রশিদ (সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনি অব্যাহতি পান)-সহ পলাতক ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে জীবিতদের বিচারের জন্য সোপর্দ করে। আদালত প্রশিকিউশনসহ আসামীপক্ষের বিস্তারিত বক্তব্য শ্রবণ ও মামলার নথিভুক্ত কাগজপত্র/তথ্যাবলি পর্যালোচনা করে গত ৭/৪/৯৭ তারিখে জীবিত ২০ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ/চার্জগঠন করে পড়ে শুনিয়ে আসামিদের মতামত চাইলে তারা নিজেদের নির্দোষ বলে বিচার চায়। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রের খরচায় নিযুক্ত বিজ্ঞ আইনজীবীরা পলাতক আসামিদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। আসামি জোবায়দা রশিদ রিভিশন মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি লাভ করেন। দীর্ঘ ১৪৯ দিন শুনানির পর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ৮ নভেম্বর ১৯৯৮ রোববার বিকালে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। জনাকীর্ণ আদালত কক্ষে রায় ঘোষণাকালে বিচারক প্রথম চারজনকে এই মামলা হতে অব্যাহতি দেন এবং ১৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যভাবে মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে যদি কোনো অসুবিধা হয় তা হলে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। বিচারক কাজী গোলাম রসুল মামলার রায় ঘোষণায় বলেন, বাংলাদেশের ফৌজদারি আদালতের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি অনন্য হলেও প্রচলিত আইনে অপরাপর হত্যার ন্যায় এটাও একটি হত্যা মামলা। রায়ে তিনি সেনা কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে বলেন, এই ধরনের কার্যকলাপের জন্য সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।
এই রায়ের পর কারাবন্দি চার আসামি মেজর (অব.) বজলুল হুদা, কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) হাইকোর্টে আপিল করেন। এরপর বিচারপতিরা কয়েক দফা বিব্রতবোধ করেন। এরপরে ২৮ জুন ২০০০ তারিখে ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হয়। একই বছর ১৪ ডিসেম্বর বিচারপতিরা বিভক্ত রায় দেন। এরপর মামলা ডিপফ্রিজে চলে যায়। ২০০৭ সালের ২ আগস্ট আসামিদের লিভ টু আপিলের ওপর শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করে এবং ৭ আগস্ট শুনানি গ্রহণ শুরু হয়। ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতিকে নিয়ে একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর দুপুর পৌনে বারোটায় বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে আগের রায় বহাল রাখেন এবং আপিল খারিজ করেন। ইতোমধ্যে কারাগারে আটক আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। সর্বশেষ সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
২০১০ সালের ২৮ জানুযারি যাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তারা হলেন— লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার)। পাঁচজন এখনো বিদেশে পালিয়ে আছেন, তারা হলেন-কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ও লে. কর্নেল এস এইচ নূর চৌধুরী। এদের মধ্যে এস এইচ নূর চৌধুরী কানাডাতে গিয়ে ১৯৯৬ সালে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় চায়। পরে প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্টে আবেদন করেন। এ আবেদন কোন পর্যায়ে আছে তার তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ আবেদন করলে কানাডা সরকার তা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানায়। গত বছর কানাডার ফেডারেল আদালত বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছেন, এই তথ্য প্রকাশ করলে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না। ফলে তাকে ফিরিয়ে আনার পথ উন্মোচন হয়েছে বলে ভাবা হচ্ছে। আরেক খুনি কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী অবস্থান করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী সেক্রামেন্টো থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরের শহর কনকর্ডে অবস্থান করছেন। বাকি তিনজনের সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য জানা যায়নি। নিশ্চিত করা না গেলেও বিভিন্ন সময়ে শোনা যায় কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ পাকিস্তান অথবা লিবিয়ায় অবস্থান করছেন। শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তানে অবস্থান করছেন। আগে ভাবা হতো মোসলেমউদ্দিন জার্মানিতে অবস্থান করছেন। আব্দুল মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পরে মোসলেম উদ্দিনের ভারতে থাকার বা ভারতে মারা যাওয়ার বিভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হয়। আরেক খুনি আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে পালিয়ে থাকাকালে ২০০১ সালে মারা যায়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পলাতক খুনিদের খোঁজে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি করা আছে। বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও চিহ্নিত করে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আব্দুল মাজেদের বিষয়ে ধারণা ছিল তিনি সেনেগালে লুকিয়ে আছেন। তিনি কলকাতাতেই আত্মগোপনে থাকতে পারেন সেটা অভাবনীয়ই ছিল। এ বছর মার্চের মাঝামাঝিতে সে ঢাকায় ফেরে অথবা ভারতীয় পুলিশ এর আগে তাকে পুশব্যাক করে। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে কলকাতায় নিজের পরিচয় গোপন করে ছিলেন তিনি। পার্কস্ট্রিট এলকায় আলি আহমেদ নাম নিয়ে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে প্রাইভেট পড়াতেন ছাত্রদের। সেখানে সে আবারো বিয়ে করে সংসার পাতেন। তাদের ৬ বছরের একটি কন্যাও আছে। ঢাকার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে গিয়েই সে চিহ্নিত হয় এবং ধরা পড়ে। ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের বিষয়েও কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। আব্দুল মাজেদের বরাতেই সম্ভবত জানা যায়, মোসলেমউদ্দিন সমীর দত্ত পরিচয়ে ইউনানি চিকিৎসক হিসেবে বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায়। তিনি হিন্দু সেজে হিন্দু নারীকে বিয়ে করে আত্মগোপনে ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে হিন্দু রীতিতেই তাকে গাইঘাটা শ্মশানে দাহ করা হয়। শিমুলপুরের পরেশ চন্দ্র অধিকারী মোসলেমউদ্দিনকে দমদম স্টেশন থেকে বাড়ি এনে আশ্রয় দিয়েছিলেন। পরেশ চন্দ্র আর বেঁচে নেই। তার কন্যা মমতা অধিকারীর কাছ থেকে মরদেহের ছবিতে দেখা যায়, সমীর দত্তকে হিন্দু নিয়মে সৎকারের জন্য সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে ফুলচন্দন পরিয়ে গলায় মালা পরানো হয়েছে। পুলিশ তার চেম্বারে অভিযান চালিয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো বই না পেলেও ইসলাম ধর্মের ও ভারত ভাগের ওপর বেশ কিছু বই পায়। তাতে ধারণা করা হয় সমীর দত্তই হতে পারে মোসলেম উদ্দিন। তবে আনন্দবাজার পত্রিকা দাবি করেছে, মোসলেমউদ্দিন নিজের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে দিয়ে চব্বিশ পরগনা থেকে পালিয়ে গেছেন। তিনি মারা যাননি। কয়েকটি মিডিয়া দাবি করেছিল তিনি তিন বছর আগেই মারা গেছেন। আবার কয়েকটি মিডিয়া দাবি করে মোসলেম উদ্দিনকে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে। কোনো খবরই শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মোসলেম উদ্দিন অধরাই থাকলেন আরো কিছু রহস্য তৈরি করে।
সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশে ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণিত হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। খুনিদের হয় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে না হয় তারা পালিয়ে রয়েছেন। জাতি ন্যায়বিচার পেয়েছে, বিচার বিভাগের ওপর আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকা ও বুদ্ধিজীবী রায় প্রদান ও ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করাকে জাতির দায়মুক্তি হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এই বিচার সম্পন্ন করতে পারা ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আশা করা যায়, এই বিচার সম্পন্ন করতে পারার কারণেই বাংলাদেশে ভবিষ্যতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আর সংঘটিত হবে না।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব