ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, দল হিসেবে বিএনপির বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত। তাদের বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে জিএম কাদের এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি শক্তি অর্জন করে দ্বিতীয় অবস্থানে যেতে চায়। সরকারের বিকল্প হিসেবে জাতীয় পার্টিকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠনগুলো দুর্বল হলে মূল সংগঠন দুর্বল হয়ে যাবে। তাই অঙ্গসংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করতে হবে।’
এ সময় জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, নিজেরা ধ্বংস না করলে বাইরের কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। গত নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ হল নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এই কোন্দল কাটিয়ে উঠেছি। আমরা জনগণের মতামত নিয়ে আগামীতে দেশ পরিচালনা করব।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘নব্বইয়ের পর থেকে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হয়েছে। সংগঠন এক নম্বর হিসেবে আওয়ামী লীগ আছে, দ্বিতীয় বিএনপি, তৃতীয় স্থানে জাতীয় পার্টি। কিন্তু আমরা দ্বিতীয় অবস্থানে চলে যাব ইনশআল্লাহ।’
জিএম কাদের আরো বলেন, জাতীয় পার্টি দেশ ও জনসাধারণের দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে দেখতে চায়। ১৯৯০ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ছিল। কিন্তু '৯১ সালের পর থেকে জুলুম-নির্যাতন আর হামলা-মামলা দিয়ে জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করতে পারেনি। জাতীয় পার্টি দুর্বল হয়েছে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রে। ষড়যন্ত্র থেকে দলকে রক্ষা করতে পার্টির নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতেও নির্দেশ দেন জিএম কাদের।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরেই জাতীয় পার্টি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি। বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে বিলীন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিই একমাত্র বিকল্প শক্তি হিসেবে সাধারণ মানুষের সামনে রয়েছে। দেশের মানুষ অনেক আশা নিয়ে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে।
এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জিএম কাদের বলেন, সব সময় মনে রাখবেন জাতীয় পার্টি আপনার পার্টি। জাতীয় পার্টি কারও ব্যক্তিগত দল নয়, জাতীয় পার্টি কারও জমিদারি নয়। দলকে আরও শৃঙ্খল এবং শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ দিন জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি।
তিনি বলেন, যে মানুষটি ৯ বছর সফলতার সঙ্গে দেশ ও মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে কাজ করেছেন, সেই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কখনও স্বৈরাচার হতে পারে না। দীর্ঘ সাত বছর জেলে থেকে দুটি জাতীয় নির্বাচনে ৫টি করে আসনে বিজয়ী হয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছেন। দেশের মানুষের জন্য আজীবন কাজ করেছেন এরশাদ। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমরা সন্ত্রাস লালন করিনি, ক্যাসিনো ব্যবসা করিনি, আমরা হুণ্ডা-গুণ্ডা লালন-পালন করিনি।
রাঙ্গা আরো বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে পারলে জাতীয় পার্টিই রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করতে পারবে। সম্ভাবনাময় দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মো. বেলাল হোসেনের পরিচালনায় এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, গোলাম কিবরিয়া টিপু, এসএম ফয়সল চিশতী, রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। সম্মেলনে প্রকাশ্য ভোটে স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা ও বেলাল হোসেন সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন, আলমগীর সিকদার লোটন, আলহাজ আবদুস সাত্তার মিয়া, নাজমা আক্তার এমপি, সংসদ সদস্য ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী, পীর ফজলুর রহমান মেজবাহ্, আহসান আদেলুর রহমান আদেল, ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, জহিরুল ইসলাম জহির, মো. আরিফুর রহমান খান, হেনা খান পন্নি, সরদার শাহজাহান, যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, শেখ আলমগীর হোসেন, নুরুল ইসলাম ওমর, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, সুলতান আহমেদ সেলিম, শাহিদা রহমান রিংকু, সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসহাক ভুইয়া, মোবারক হোসেন আজাদ, ফকরুল আহসান শাহজাদা।
সোনালীনিউজ/এএএইচ