ঢাকা: টানা তৃতীয় দফা সরকার গঠন করেছেন আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের ৬ মাসের মাথায় মন্ত্রিসভায় যুক্ত হচ্ছেন নতুন ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের তিন প্রবীণ সদস্য রয়েছেন। বাকিরা নতুন মুখ। এ মাসের মধ্যেই নতুন মন্ত্রীরা শপথ নেবেন বলে সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল আনছেন। চীন থেকে দেশে ফেরার পর তিনি নতুন মন্ত্রীদের তালিকা করার কাজে হাত দিয়েছেন। সরকার গঠনের প্রথম বছরই ৫ লাখ কোটি টাকার উপরে বাজেট পাস করা হয়েছে। এ বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে অভিজ্ঞ ও কর্মদক্ষ ১০ থেকে ১২ জনকে মন্ত্রিসভায় যুক্ত করছেন শেখ হাসিনা। বাজেট অধিবেশন সমাপ্তির পরপরই যে কোনো মুহূর্তে নতুন মন্ত্রীদের শপথ হতে পারে। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বর্তমান মন্ত্রীদের দাপ্তরিক কার্যক্রম (পারফরম্যান্স) মূল্যায়ন করছেন। নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের পর অনেক মন্ত্রীর দপ্তর বদল হতে পারে।
সম্প্রতি মন্ত্রিসভার পরিধি সম্প্রসারণের বিষয়ে আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চীন থেকে ফেরার পর মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে পারে। সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভার রদবদল করা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।
মন্ত্রিসভায় যারা আছেন, তাদের কারও বাদ পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম এমন আভাস দিচ্ছে সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন মন্ত্রীদের তালিকা করছেন। এ তালিকায় প্রাধান্য পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের দুর্দিনে দুঃসময়ে অবদান রাখা প্রবীণ নেতা, কোনো এলাকা থেকে বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এছাড়াও মহিলা সংসদ সদস্যরাও মন্ত্রী করার প্রাধান্যের তালিকায় রয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রবীণ ও সিনিয়র সংসদ সদস্য তাদের বায়োডাটা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে জমা দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত নিয়েই তারা বায়োডাটা জমা দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভায় আরও কয়েকজন মহিলা সংসদ সদস্য স্থান পাচ্ছেন। চীন সফরের আগে মহিলা এমপিদের একটি তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সবার আমলনামা বিশ্লেষণ করে দেখছেন তিনি। দলে অবদান ও সর্বোচ্চ ত্যাগীরাই মন্ত্রিসভায় জায়গা পাবেন। এবারের মন্ত্রিসভায়ও চমক থাকবে। অনেকের ভাবনায় নেই এমন সংসদ সদস্যরাও শপথের ডাক পাবেন।
সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিসভার শ্রীবৃদ্ধি করতে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খোন্দকার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রিসভায় যুক্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রায়ত এক মন্ত্রীর স্ত্রীরও ভাগ্য খুলছে এ দফায়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি তারা নিয়ে রাখছেন। নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথের ফোল্ডার তৈরি করছেন। এ ফোল্ডারের সংখ্যা ১৬-এর কাছাকাছি। এ সপ্তাহের মধ্যে তারা ফোল্ডারগুলো হাতে পাচ্ছেন। আগের ফোল্ডারগুলো পুরোনো হয়ে যাওয়ায় শপথের সময় মন্ত্রীদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে নতুন ফোল্ডার তৈরির কাজ চলছে।
এদিকে দ্বিতীয় দফায় নতুন মন্ত্রীর তালিকায় কিছু মন্ত্রীর নামের গুঞ্জন সচিবালয়ে রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, চট্টগ্রামের ফজলে করিম এমপি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জি. আবদুস সবুরের নাম রয়েছে।
এছাড়া দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রীদের শপথ নেওয়ার পরে কয়েকজন মন্ত্রীর দপ্তর বদলের গুঞ্জনও রয়েছে। নাম প্রকাশ না করে মন্ত্রীদের ঘনিষ্টজনরা বলছেন, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং পানিসম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীমকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হতে পারে। আর বর্তমান পানি প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুককে বিমান মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পূর্ণ নতুন মন্ত্রী দেওয়া হতে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে অন্য মন্ত্রণালয়ে দিয়ে তার স্থানে আসতে পারেন বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ের পর ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেন শেখ হাসিনা। তাকেসহ নতুন মন্ত্রিসভায় ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী, তিনজন উপমন্ত্রী ও সাতজন উপদেষ্টা রয়েছেন।
মে মাসে তিনজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বভার কমেছে। মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এতে টেকনোক্র্যাট কোটায় ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া মোস্তফা জব্বারকে কেবল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে রাখা হয়েছে। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জুনাইদ আহমেদ পলককে একই দায়িত্বে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা তাজুল ইসলাম এখন কেবল স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যও এখন কেবল পল্লী ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এসএস