ঢাকা : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র পদে প্রার্থীতে পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে নতুন মুখ আসছে বলে জোর প্রচারণা আছে।
ডিএসসিসিতে এবার অভিন্ন ঢাকা মহানগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মনোনয়ন পেতে পারেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মেয়র পদে শেষ পর্যন্ত আতিকুল ইসলাম আবারো দলের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আভাস দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা।
সূত্র জানায়, মূল দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়া দুইজনকে এবার ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী করা হতে পারে। এতে ‘বঞ্চিত’ নেতাদের না পাওয়ার ‘অসন্তোষ’ দূর করার পাশাপাশি নগরবাসীকে নতুন মুখ উপহার দেওয়ার সুযোগ থাকছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়ায়, মহানগরের দুই শাখার যেকোনো একটিতে সভাপতি পদে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে দেখা যেতে পারে। যদিও শেষ পর্যন্ত তা দেখা যায়নি।
মহানগরের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে তিনি নেই। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মায়া দলীয় মনোনয়নও পাননি। তাকে তাই ডিএসসিসির মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাবছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কেউ কেউ।
তবে যে রাজনৈতিক সমীকরণ থেকেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত দল নিক, প্রার্থীদের অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও নগরের বাসিন্দাদের কাছে জনপ্রিয়তা থাকার বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা।
এদিকে যোগ্য প্রার্থীর খোঁজে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হচ্ছে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) থেকে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ও পরদিন শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দলটির সভাপতির ঢাকার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার মনে হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন আতিক সাহেব পাবেন। দক্ষিণে হয়তো আমরা নতুন প্রার্থী দেখতে পারি।’
সূত্রমতে, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ দলটির নেতৃত্বের জোট ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে, ভোটের মাঠ ফাঁকা থাকবে না-এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা।
তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে বেশ কয়েক মাস ধরে নানা চিন্তাভাবনা চলছে।
আসন্ন ওই নির্বাচন নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে নানা তৎপরতাও আছে। মেয়র পদে প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে জরিপ পরিচালিত হয়েছে।
চূড়ান্ত মেয়র প্রার্থী কে, তা জানানো হবে ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায়। এর আগে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হচ্ছে না বলে আভাস দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা।
শীর্ষ নেতারা বলছেন, আগামী ২০২০ সালের আগে যথাসম্ভব শুদ্ধ রাজনৈতিক দল চায় আওয়ামী লীগ। নতুন বছর শুরুর আগেই দল ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলোকে কেন্দ্রীয় সম্মেলন এবং শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে নতুন করে সাজিয়ে বিতর্কমুক্ত করার কার্যক্রমের বাস্তবায়ন হয়েছে।
লক্ষ্যে পৌঁছাতে দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে দল ও সংগঠনে সাংগঠনিক শুদ্ধি অভিযান চলছে। নতুন বছরে ‘শুদ্ধ আওয়ামী লীগের’ পা রাখার মাসেই দলটি মুখোমুখি হচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের মুখোমুখি।
ফলে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবার অনেক সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাবে। প্রার্থী নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত দুই সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে।
কয়েকজন কাউন্সিলরের অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য পরিচালনা ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়।
কয়েকজন অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন, অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনেও আছেন। অভিযানে সরকারি দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও অন্য সংগঠনের যেসব নেতা ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগরের। যা দুই সিটি করপোরেশনেরও আওতাভুক্ত এলাকা। এমন পরিস্থিতিতে দল ও সরকার বিভিন্ন সমালোচনার শিকার হয়েছে।
বর্তমানের বেশিরভাগ কাউন্সিলরই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবেন না। কাউন্সিলর পদেও বেশিরভাগ মনোয়ন দেওয়া হবে নতুন ও জনপ্রিয়দের।
সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে যারা দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে মূল্যায়ন করেননি, তাদের সামনের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘যে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা দলের ও নেতাকর্মীদের কাছে থাকবে, যার বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক অভিযোগ থাকবে না, এমন প্রার্থীকেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
সোনালীনিউজ/এমটিআই