ঢাকা : ফেসবুকের অপপ্রচারে ক্রমেই বাড়ছে সহিংসতার ঘটনা। সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠীর অপব্যবহারে ধীরে ধীরে আতঙ্ক হয়ে উঠছে সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই মাধ্যমটি। সাম্প্রদায়িক উস্কানি, ব্যক্তি-সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক কুৎসা রটানোরও অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেসবুকে।
ফলে পর্যায়ক্রমে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে, এটি নিয়ন্ত্রণে সঠিক কাঠামো না থাকাকে দায়ী করছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা।
দূরের কিংবা কাছের মানুষের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার ফেসবুক। ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনের সহজলভ্যতায় এর ব্যবহার এখন আকাশচুম্বী।
যে ফেসবুক তৈরি হয়েছিল মানুষের মাঝে সেতুবন্ধনের জন্য, সেই ফেসবুক-ই এখন মানুষে মানুষে বিভক্তির অন্যতম কারণ। যার প্রভাব পড়ছে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। ঘটছে সহিংসতার ঘটনা।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে কক্সবাজারের রামুর বুকে। ভয়াবহ সহিংসতায় পুড়িয়ে দেয়া হয় বৌদ্ধ ধর্মের ১২টি বিহার আর শতাধিক বসত বাড়ি। নেপথ্যে হ্যাক করা একটি ফেসবুক আইডির ভুয়া পোস্ট।
ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর। যেখানে চিরদিনই হিন্দু-মুসলিমের মাঝে ছিল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্প্রীতির বন্ধন। ফেসবুকের ভুয়া পোস্টে সেখানেও ধরে ফাটল। ঘটে বড় ধরনের সহিংসতা।
গত বছর রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতাসহ এমন অনেক ঘটনার পেছনেই জড়িয়ে রয়েছে ফেসবুকের কোন না অপপ্রচার। সর্বশেষ নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনে ফেসবুকে ছড়ানো গুজব তো এখন সবারই মুখে মুখে।
এসব অপপ্রচারে সৃষ্ট সহিংসতায় ধীরে ধীরে জাতীয় নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের মাঝে একটা নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করাই, জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। সেই অংশ -তো আমরা দেখছি, বার বার আঘাত প্রাপ্ত হয়েছি। এরপর অনেকে বলে দেন, এটা (ফেসুবক) বন্ধ করে দেন। তাহলে- তো হয় না। ঝুঁকি পরিমাণকে বিবেচনা করলেই এটা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বন্ধ করা উচিত নয়।
অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বলছেন, ফেসবুকের অপপ্রচার রোধে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে আইপি ও ইন্টারনেট ডিভাইসগুলোকে।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা বলেন, সামাজিক গণমাধ্যমগুলো সারাবিশ্বে যে প্রযুক্তিগত কাঠামো দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে, বা শনাক্ত করছে, সেই কাঠামোগুলো বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর পাশাপাশি আমাদের আইপি ও ডিভাইসও রেজিস্ট্রেশনও করতে হবে।
সহিংসতা এবং ফেসবুকের অপপ্রচার বন্ধে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়নোরও তাগিদ বিশ্লেষকদের।
সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই