কুমিল্লা: জেলার বুড়িচং উপজেলার ভান্তি গ্রামে মেহেরাব হোসেন (২০) নামে এক নৌবাহিনীর সদস্যকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের ভান্তি গ্রামের গোমতী নদীর চরের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মেহেরাব হোসেন ওই গ্রামের ভান্তি এলাকার প্রবাসী শফিকুল ইসলামের ছেলে। মেহেরাব খুলনায় ট্রেনিং শেষে একদিনের ছুটি কাটাতে বাড়ি এসেছিলেন।
লাশ উদ্ধারের পর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেন কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই) ও ডিবি পুলিশ।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মনির হোসন নামের এক সিএনজিচালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছে।
হত্যাকাণ্ডের স্থানসহ স্থানীয় লোকজন ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।
কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন জানান, নৌবাহিনীর সদস্য মেহেরাব হোসেন হত্যার ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। বাড়ির কাছেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। পূর্বশত্রুতা, পারিবারিক কলহ বা কোনো দুর্বৃত্তের ঘটানো হত্যাকাণ্ড কিনা আমরা খতিয়ে দেখছি। দ্রুতই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আটক করার কথা জানান তিনি।
তবে পূর্বশত্রুতার আক্রোশে বন্ধুদের হাতেই নির্মমভাবে মেহেরাব হোসেন খুন হয়েছেন এমন দাবি করেছেন নিহতের মামাতো বোন সবিতা আক্তার লিজা ও ভাই হাবিবুর রহমান ইভান। বন্ধুদের ভয়ে ২ দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে মেহেরাব অন্যত্র ছিল বলে জানিয়েছে তারা।
লিজা ও ইভান জানান, মেহেরাব খুলনায় ট্রেনিং শেষে একদিনের ছুটি কাটাতে এসেছিলেন। বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় বাস থেকে নেমে মায়ের সঙ্গে কথা বলে। শেষবার রাত ৩টায় মোবাইল ফোনে কথা বলেছে।
এরপর আর খোঁজ ছিল না। বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় তার মা ও বোন তাকে খুঁজতে বের হয় বলে জানিয়েছেন লিজা।
বুড়িচং থানার ওসি আকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি নৌবাহিনীতে যোগ দেন মেহেরাব হোসেন। যোগদানের পর খুলনায় ট্রেনিং শেষে চট্টগ্রামে তার পোস্টিং হয়েছিল। একদিনের ছুটি কাটিয়ে শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর দপ্তারে মেহেরাব হোসেনের রিপোর্টিং করার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন নিহতের মামাতো বোন সবিতা আক্তার লিজা।
তিনি জানান, এসএসসিতে পড়ার সময় মেহেরাবের সহপাঠী বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। বেশ কয়েকবার মারামারি হয়েছিল তাদের মধ্যে। এসএসসি পাসের পরই নৌবাহিনীতে যোগ দেন মেহেরাব। ট্রেনিং অবস্থায় এইচএসসি পাস করেন।
মামাত ভাই হাবিবুর রহমান ইভান জানান, বাড়িতে আসা যাওয়ার সময় তার ওপর ক্ষিপ্ত বন্ধুরা তাকে দেখে নেবে হুমকি দিয়েছিল- এ কথা বাড়িতে জানিয়েছিল মেহেরাব।
ইভান জানান, তার নিজ বাড়ি ভান্তি আসার পর গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ থেকে রাস্তায় নামার সময়ও তার মাকে ফোন করে জানায় যে মা কাছেই এসে গেছে। এরপর আর খোঁজ ছিল না।
অপর দিকে স্থানীয় মেম্বার মো. কামাল হোসেন তার পুকুর থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে গোমতী নদীর বেড়িবাঁধে দুটি ব্যাগ দেখতে পেয়ে তা স্থানীয় মসজিদে দেয়ার জন্য রওনা হয়। পথে নিহত মেহেরাবের মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি তার ছেলের ব্যাগ বলে চিৎকার করেন। পরবর্তীতে তারা মেহরাবকে খুঁজতে থাকেন এবং গোমতী নদীর তীরে গিয়ে তার লাশ খুঁজে পান।
খবর পেয়ে বুড়িচং থানার এসআই রাজীব কর সঙ্গীয় ফোর্সসহ ভোরে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
সোনালীনিউজ/এমএইচএম