ঢাকা : অবশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত শেয়ারে সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত চীনা জোটের সংশোধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে চীনা জোটকে।
বৃহস্পতিবার (৩ মে) কমিশনের এক জরুরি সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান এ তথ্য জানান। ডিএসইর কৌশলগত শেয়ার নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে বেশ প্রতিযোগিতা হয়। উন্মুক্ত দরপত্রে বেশি দরে ডিএসইর শেয়ার ক্রয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পরও ভারতের পক্ষ থেকে বেশ চাপের মুখে পড়তে হয় চীনা জোটকে। দর প্রস্তাবে হেরে যাওয়ার পরও ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে ডিএসইকে চাপ দেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। তবে এ চাপ উপেক্ষা করে চীনা প্রস্তাবে সায় দেয় ডিএসই। এ নিয়ে বিএসইসির সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত চীনা জোটের পক্ষেই তাদের সম্মতি আসে।
গতকাল বিএসইসির জরুরি সভা শেষে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিএসই প্রস্তাবিত কৌশলগত বিনিয়োগকারী (শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ) সংক্রান্ত শেয়ার ক্রয় চুক্তিপত্রে শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হলো। এক্ষেত্রে চুক্তিপত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম সিকিউরিটিজ ও দেশের অন্যান্য আইনসহ এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন, ২০১৩ এবং ডিএসইর ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম অনুযায়ী পরিপালন করতে হবে।
এ ছাড়া এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চুক্তি স্বাক্ষরের এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করে বিএসইসিকে জানাতে হবে। কমিশনের পূর্বানুমোদন ছাড়া চুক্তির শর্ত ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় পরিবর্তন করা যাবে না। চুক্তি অনুযায়ী, ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনবে চীনা জোট। এতে ডিএসইর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দাম হবে ২১ টাকা। এ হিসেবে ডিএসইর ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনতে ৯৪৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে চীনা জোটকে। এর বাইরে ডিএসইকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কারিগরি সহায়তা দেবে তারা।
এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগ চুক্তিটি আগামী ১৪মে হতে পারে। আর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বিনিয়োগের অর্থ দেশে আসবে। তিনি আরো বলেন, চীনা বিনিয়োগের প্রস্তাবটি অনুমোদনের ফলে ডিএসই দুইভাবে উপকৃত হবে। প্রথমত, শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে দেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসবে। দ্বিতীয়ত, তারা অংশীদার হওয়ায় বিনা পয়সায় পরামর্শসেবা পাবে।
প্রসঙ্গত, ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী অংশের শেয়ার ক্রয়ের বিষয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক উন্মুক্ত দরপত্রে ভারতীয় ও চীনা জোট অংশ নেয়। এতে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ারের প্রতিটি ২২ টাকা দরে কেনার প্রস্তাব দেয় চীন। তবে ২০১৭ সালের ৩০ জুন হিসাব বছরের পূর্বঘোষিত ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন হওয়ায় চীনা জোটের প্রস্তাব মূল্য নেমে আসে ২১ টাকায়।
অপরদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে ভারতীয় জোট ২৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ারের প্রতিটি ১৫ টাকায় কেনার প্রস্তাব দেয়। উন্মুক্ত দরপত্রে চীনা জোট ডিএসইকে আট ধরনের কারিগরি প্রযুক্তির জন্য ১০ বছরের লাইসেন্স এবং নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত তিন বছরের প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শসেবা ফ্রি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। প্রযুক্তিগত সহায়তার আর্থিক মূল্য ৩৭ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ভারতীয় জোট কোনো প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম বা সিস্টেম না দিয়ে প্রযুক্তি প্রস্তাবগুলো কেবল পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা শেয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই