ঢাকা: নারীর সৌন্দর্য কোনো জাতি বা ধর্মের জন্য নির্দিষ্ট নয়। কারণ, নারীদের সুন্দর করেই সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাই কোনো নারীকে নির্দিষ্ট করে সুন্দর বা অসুন্দর বলা যায় না। তবুও তাদের যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা, নেতৃত্ব ও লাবণ্যতা বিবেচনায় সুন্দরী তালিকা করা হয়।
তেমনি বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দশজন নারীর তালিকা করেছে- পাকিস্তানভিত্তিক ব্লগ ওয়ান্ডরলিস্ট এবং টপ এক্সবেস্ট নামে একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল। যেখানে মুসলিম নারীদের জনপ্রিয়তা ও সৌন্দর্যের ওপর এক জরিপ করা হয়েছে। চলুন দেখি, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী ১০ মুসলিম নারী হিসেবে সেই তালিকায় কাদের রাখা হয়েছে…
১০. মেহজাবিন চৌধুরী- বাংলাদেশ
টপ এক্সবেস্টের টপ টেনের সপ্তম স্থান অর্জন করলেও ওয়ান্ডরলিস্টে বাংলাদেশি এই মডেলের নাম নেই, তাই তাকে এই তালিকার ১০ নম্বরে রাখা হয়েছে। মেহজাবিন লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে শোবিজ জগতে আলোচনায় আসেন এবং নিজস্ব মেধা ও স্বকীয়তার গুণে একটি অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হন। তার জন্ম ১৯ এপ্রিল ১৯৯১ সালে। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের সফল টিভি অভিনেত্রী এবং মডেল।
৯. লিয়া বখতি- ফ্রান্স
আলজেরিয়ান বংশোদ্ভুত একজন ফরাসি চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন অভিনেত্রী। ১৯৮৪ সালের ০৬ মার্চ এক আলজেরীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা-মাতার তিন সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ তিনি। ফরাসি অভিনেতা তাহার রহিমের সাথে বিয়ে হয় রিয়া বখতির, যার সাথে তিনি ২০০৭ সালে প্রথম একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় জীবনে বহু পুরস্কার ও অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন লিয়া বখতি।
৮. শেখ মাহরা- আরব আমিরাত
তার সোনালী চুল, বাদামি চোখ, বলিষ্ট নেতৃত্ব এবং সুন্দর চেহারাই তাকে শ্রেষ্ঠ সুন্দরীদের স্থানে জায়গা করে দিয়েছে। মাহরার পুরো নাম- শেখ মাহরা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। তিনি আমিরাতের একজন রাজকুমারী। শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের কন্যা। যখন তার প্রথম ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করা হয় তখন থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। তিনি একজন অ্যাথলেটিকও বটে।
৭. মুনা আবু সুলাইমান- সৌদি আরব
মুনা আবু সুলাইমান আরব ও মুসলিম বিশ্বের পরিচিত মিডিয়া মুখ। তিনি খুবই আত্মবিশ্বাসী ও আকর্ষণীয় চেহারার নারী। মুনা একজন আরব বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি ব্যবসা শিক্ষায় পড়াশুনা করেছেন- যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়ায়। আরবি টেলিভিশন চ্যানেল এমবিসি টিভির একজন জনপ্রিয় উপস্থাপক মুনা।
৬. নাসরিন তাফিস- ফিলিস্তিন
নাসরিন ফিলিস্তিনের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তার সৌন্দর্য, অভিনয় এবং জনহিতকর কাজের কারণে তাকে টপ টেন নারীদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রাখা হয়েছে। নাসরিনের জন্ম সিরিয়ার আলেপ্প শহরে। বাবা আরব বিশ্বের জনপ্রিয় কবি ও লেখক ইউসুফ তাফিস, আলজেরিয়ান মায়ের সন্তান নাসরিন। তিনি সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে অভিনয় করে থাকেন।
৫. নাওয়াল আল জগ্বি- লেবানন
ভিডিও জরিপটির টপ টেন তালিকার চতুর্থ স্থান অধিকারী বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মুসলিম নারী তিনি। ১৯৭২ সালের ২৯ জুন লেবাননে জন্ম গ্রহণ করেন নাওয়াল। মূলত লেবাননী পপ গায়ক হিসেব বিশ্বব্যাপি পরিচিত বা প্রসিদ্ধ তিনি। আরবি ভাষায় গান করলেও উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের আরব প্রবাসীদের মাঝে তার বেশ পরিচিতি রয়েছে তার। সুদীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ তিনি বাদ্যযন্ত্রময় এই পেশায় জড়িয়ে রয়েছেন। সংবেদনশীল পপ সঙ্গীতের সঙ্গে ঐতিহ্যগত আরবী সঙ্গীত এবং উপসাগরীয় উপভাষায় সঙ্গীচর্চা করা ছাড়াও আরবীয় সঙ্গীতে নতুনত্বের আলিঙ্গন করানোর মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সর্বপ্রথম ৯০ দশকের আরব পপ সঙ্গীতে ভিডিওর ধারা প্রবর্তন করেন নাওয়াল। এ পর্যন্ত নাওয়াল আল জগ্বির ৫০ মিলিয়ন অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে।
৪. মরিয়ম উজেরিলি- তুরস্ক
একজন তুর্কি-জার্মান অভিনেত্রী এবং মডেল। ভিডিও জরিপটির টপ টেন তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে তার নাম। মরিয়ম ১৯৮৩ সালের ১২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তুর্কি টিভি সিরিজের হুর্রুম সুলতানার চরিত্রে অভিনয় করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপি প্রসিদ্ধি ও পরিচিতি অর্জন করেন তিনি। এই অভিনয় তাকে একটি অভিনন্দনময় জীবনে প্রবেশ করতে সহযোগিতা করেছে। এ জন্য তিনি সমালোচকদের বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ২০১০ থেকে ২০১৬ এই ছয় বছরে প্রায় ত্রিশের অধিক পুরস্কার ও অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। যার মধ্যে গোল্ডেন বিউটিফুল অ্যাওয়ার্ড অন্যতম। একটি জার্মান প্রযোজনা সংস্থায় কাজ করার মাধ্যমে মরিয়ম উজেরিলির অভিনয় জীবনে আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরে তিনি বিভিন্ন টেলিভিশন সিরিজ অভিনয় করেন। অভিনয়গত কর্মজীবনের পাশাপাশি উজেরিলি অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ করেছেন। ২০১২ সালে তিনি জিকিউ তুরস্ক কর্তৃক বর্ষসেরা নারী অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।
৩. কুইন রানিয়া আল আবদুল্লাহ- জর্ডান
মূলত তার নাম রানিয়া আল ইয়াসিন। ভিডিও জরিপটির টপ টেন তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে তার নাম। ১৯৭০ সালের ৩১ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ ইবনে হুসাইনের সাথে বিবাহের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনি জর্ডানের রাণী। ১৯৯৩ সালের ১০ জুন তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রিন্স হুসেন, প্রিন্স হাশেম এবং রাজকুমারী ইমান, রাজকুমারী সালমা- তাদের চার সন্তান। তিনি ১৯৯১ সালে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় অব কায়রো থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ব্যব্যাপি তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কমিউনিটি ক্ষমতায়ন, যুব, ক্রস-সাংস্কৃতিক সংলাপ এবং মাইক্রো-ফাইন্যান্স সম্পর্কিত সমর্থনমূলক কাজের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছেন। বহু দেশ থেকে তিনি সমাজসেবা ও উন্নয়নমূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ পুরস্কার এবং সম্মানিত ডিগ্রী লাভ করেছেন। www.queenrania.jo এটা হলো কুইন রানিয়া আল আবদুল্লাহর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট। এখানে তার সম্পর্কে আরো অনেক বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
২. রেহাম খান- পাকিস্তান
ভিডিও জরিপটির টপ টেন তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে তার নাম। লিবিয়ার আজাদাবাদে ১৯৭০ সালের ০৩ এপ্রিল রেহাম জন্ম গ্রহণ করেন। একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক হিসেবে রেহাম খান বিশ্বব্যাপি পরিচিতি। ২০০৬ সালে একটি আইনি টিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০৭ সালে তিনি সানশাইন রেডিও হেরফোর্ড এবং ওয়ারসেস্টারের উপস্থাপনার কাজ করেন। ২০০৮ সালে বিবিসিতে সম্প্রচার সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করে। রেহাম খান সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট www.rehamkhanofficial.com ভিজিট করতে পারেন।
১. আমিরাহ আল-তাওয়েল- সৌদি আরব
প্রিন্সেস আমিরাহ বিনতে আদিয়ান বিন নায়েফ আল তাওয়েল আল ওতাইবি- সৌদি আরবের একজন জনপ্রিয় নাম। শুধু আরবেই নয়, তার জনপ্রিয়তা পশ্চিমা বিশ্বেও রয়েছে। রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবে তার বলিষ্ট নেতৃত্বে নারীদের বিভিন্ন সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তিনিই প্রথম নারী যিনি মাইক্রোবাস ড্রাইভ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
আমিরাহ ইউনিভারসিটি অব নিউ হ্যাভেন থেকে ব্যবসা শিক্ষার ওপর স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তার উদারতা, দয়ালু মনভাব, সুন্দর্য ও বলিষ্ট নেতৃত্বের কারণে সৌদি নারীদের মনে আইকন হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই