• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ুদূষণে বাড়ছে বজ্র্রপাত 


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৬, ০১:১৮ পিএম
বায়ুদূষণে বাড়ছে বজ্র্রপাত 

বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাড়ছে বজ্রপাত ও প্রাণহানির সংখ্যা। এছাড়া উচ্চ প্রযুক্তির মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির নেটওয়ার্ক টাওয়ার ও ‘কথিত’ ম্যাগনেটিক সীমানা পিলার চুরির কারণেও বজ্রপাতের ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে গেছে বলে পরিবেশ ও তড়িৎ বিশেষজ্ঞদের ধারণা । তবে এ নিয়ে এখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হয়নি। কোনো সংস্থারও বিষয়টি নিয়ে গবেষণার তেমন কোনো উদ্যোগও নেই।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর এপ্রিল ও মে এ দুই মাসে সারা দেশে বজ্র্রপাতে নিহত হয় ১১৮ জন। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো স্থানে বজ্রপাতে মৃতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবারই বজ্রপাতে সারা দেশে ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের জন্য বাতাসে ক্ষতিকারক নাইট্রোজেন ও সালফার গোত্রের গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, মৌসুমী বায়ু প্রবাহের ফলে দ্রুত গতির কালো মেঘের মধ্যকার ধাক্কা ও ঘর্ষণের ফলে সৃষ্টি হয় প্রচুর পরিমাণ ইলেক্ট্রন (বিদ্যুৎ)। আর বৃষ্টি কণা ও জলীয় বাষ্পের মাধ্যমে এসব ইলেক্ট্রন প্রবাহিত হয় ভূমিতে যা বজ্র্রপাত হিসেবে পরিচিত।
 
পরিবেশ ও তড়িৎ বিজ্ঞানীদের মতে, কালো মেঘে বিদ্যমান ক্ষতিকারক নাইট্রোজেন ও সালফারের যৌগিক গ্যাসের মধ্যকার বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয় প্রচুর পরিমাণ ইলেক্ট্রন যা কালো মেঘের মধ্যে ঘর্ষণ ও ধাক্কার ফলে গতিশীল হয়ে ওঠে এবং উপযুক্ত মাধ্যম অর্থ্যাৎ জলীয় বাষ্প ও বৃষ্টি কণার মাধ্যমে তা ভূ-পৃষ্ঠে চলে আসে। বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ উচ্চ প্রযুক্তির মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির নেটওয়ার্ক টাওয়ার ও ‘কথিত’ ম্যাগনেটিক সীমানা পিলার চুরি হওয়াকে এর জন্য দায়ী করছেন । 

বজ্র্রপাতের কারণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের সাবেক প্রধান ও বর্তমান সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. আবদুল মতিন বলেন, প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বজ্র্রপাতের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। কালো মেঘের ঘষর্ণে সৃষ্টি হয় বজ্র্রপাত আর এই কালো মেঘের প্রধান উপাদান হচ্ছে কার্বন, নাইট্রোজেন ও সালফারের পদার্থে যৌগিক গ্যাসসমূহ। তাই বাতাসে যত বেশি এসব বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বাড়বে বজ্র্রপাতের পরিমাণও ততোই বাড়বে। সেইসঙ্গে অপরিকল্পিত মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপন ও কথিত ম্যাগনেটিক পিলার চুরির কারণেও বজ্র্রপাতের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, ‘মোবাইল টাওয়ারগুলোর উচ্চতার কারণে বজ্র্রপাতের প্রথম ক্ষতির শিকার সেগুলোরই হওয়ার কথা। কিন্তু এসব টাওয়ারের উন্নত আর্থ কানেকশন (ভূ-সংযোগ) ব্যবস্থা থাকায় তা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। একই সঙ্গে এসব টাওয়ার অত্যধিক ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড (তড়িৎ চৌম্বকক্ষেত্র) সৃষ্টি করায় বজ্র্রপাতে তৈরি হওয়া ইলেক্ট্রনও টাওয়ারগুলো দিকে আকৃষ্ট হয়। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করায় বজ্র্রপাতের বিদ্যুতের কিছু অংশ আর্থ কানেকশনের মাধ্যমে মাটিতে কমিয়ে ফেলে এবং বাকি অংশ অন্যদিকে সরিয়ে দেয়। ফলে যত্রতত্র বজ্র্রপাতের ঘটনা ঘটছে। 

চুরি হওয়া কথিত ম্যানেটিক সীমানা পিলার সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে ভূ-জরিপের সময় কিছু ধাতব পিলার স্থাপন করা হয়। সম্প্রতি এসব পিলার একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চুরি হয়ে যাওয়ারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব পিলার কপার (তামা), আয়রন (লোহা) এবং জিংকের (দস্তা) সমন্বয়ে সংকর ধাতুতে তৈরি। আর এই তিনটি পদার্থই উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাই আগে যখন এসব সীমানা পিলার ছিলো তখন বজ্রপাতে সৃষ্ট বিদ্যুৎ উচ্চমাত্রা পরিবাহী হওয়ায় পিলারগুলো টেনে নিতো। কিন্তু চুরির কারণে এসব পিলারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বজ্র্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়ছে।

আবদুল মতিন বলেন, একেকটি বজ্র্রপাতের সময় প্রায় ৬০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। বাসাবাড়িতে আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি তার ক্ষমতা মাত্র ২২০ ভোল্ট। শিল্পকারখানায় ১২০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় এবং জাতীয় গ্রীডে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য মাত্র ১১০ ভোল্ট বিদ্যুৎই যথেষ্ট
 
বজ্রপাতের অন্যতম কারণ কালো মেঘের উপাদান সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, বজ্র্রপাতের কারণ নিয়ে আমাদের তেমন কোনো গবেষণা নেই। তবে সৃষ্টির শুরু থেকেই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। এখনও পর্যন্ত আমরা জানি বজ্রপাত ঘটে কালো মেঘের সংঘর্ষের ফলে। কালো মেঘে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইডসহ সালফার ও নাইট্রোজেনের বেশ কিছু যৌগ গ্যাস বিদ্যমান থাকে। 

আসলে আমাদের এ বিষয়ে কোনো গবেষণা না থাকায় আমি নিশ্চিত করে বলতে পারব না, এসব টক্সিক গ্যাস বজ্রপাতের জন্য দায়ী কিনা। তবে এসব গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। একই সঙ্গে বজ্রপাতের পরিমাণটা এখন বেড়েছে। যেহেতু কালো মেঘের সংঘর্ষে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে, তাই এসব টক্সিক গ্যাস বজ্রপাতের জন্য দায়ী হতে পারে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!