• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমার স্বামীকে হত্যার পর আমাকে ধর্ষণ করে’


সোনালীনিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ৫, ২০১৬, ০৯:৫৪ এএম
‘আমার স্বামীকে হত্যার পর আমাকে ধর্ষণ করে’

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিকজান্তা ও কট্টর বৌদ্ধদের নির্যাতনের-নিপীড়নের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে তরুণ যুবক ও পুরুষদের হত্যা করা হচ্ছে। নারীদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা যখন তখন ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হচ্ছে। রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এমনই এক নিগৃহীত নারী মোহসিনা বেগম। তার কাছ থেকে শোনা গেছে লোমহর্ষক এমন নির্যাতনের কাহিনী। সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে ওই নারীর প্রতি নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরা হয়।

মোহসিনা বেগমের কোলে ছোট একটি শিশু, বয়স চার বছর। শিশুটি খালি গায়ে মায়ের কোলে খেলা করছে। মিয়ানমারের আরাকান স্টেটের নামে তিনি শিশুটির নাম রেখেছেন আরকান। মিয়ানমারের রাখাইনের জাম্বুনিয়া এলাকায় বাড়ি মোহসিনার।

টেকনাফের শরণার্থীর থাকার জায়গা লেদা ক্যাম্পে মোহসিনার সঙ্গে দেখা হয় আমার। মলিন পোশাক আর বিধ্বস্ত চেহারার মোহসিনা বলছিলেন, গত মাসে ঠিক কী ঘটেছিল মিয়ানমারে নভেম্বরের ১২ তারিখ।

“সকাল বেলা হঠাৎ করেই একদল লোক অস্ত্র হাতে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ি ভাঙচুর আর আগুন। বাড়ির পুরুষ, মহিলা শিশু সবাইকে আলাদা করে দাঁড় করানো হয়।”

মোহসিনা বলছিলেন, “পুরুষদের আলাদা করে দাঁড় করায়, সেখানে আমার স্বামী, চাচা, আর বাবা ছিল। সঙ্গে ছিল আরো ২৫ থেকে ২৭ জন ওই এলাকার পুরুষ। আর মেয়েদের বলা হয় আলাদা লাইনে দাঁড়াতে।”

এর পর তার চোখের সামনেই হত্যা করা হয় তার পরিবারের তিনজন পুরুষ সদস্যকে।

“এরপর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের মধ্যে যাদের বয়স অল্প তাদেরকে ধরে নিয়ে বনের মধ্যে নিয়ে যায়। তাদের উপর চালানো হয় নির্যাতন, ধর্ষণ।”

মোহসিনা বলছিলেন,  “আমাকে সাতজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে।” তিনি বলছিলেন, “এখন চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে, কান্দনও আর আসে না।”

জ্ঞান হারান মোহসিনা। চেতনা ফিরে আসার পর পালিয়ে আসেন সেখান থেকে, কোলের শিশু আরকানের খোঁজে।

বাড়ি ফিরে শুধু আরকানকে পান। এরপর নাফ নদী পাড়ি দিয়ে যারা বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছেন তাদের দেখা পাওয়ার আসায় নদীর উপকুলে আসেন। ততক্ষণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হার মোহাম্মদ নামে জাম্বুনিয়ার আরেক ব্যক্তি উদ্ধার করেন মোহসিনাকে।

হার মোহাম্মদ বলছিলেন, “সেদিন রাতে নৌকায় করে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে অনেকেই টেকনাফে আসার চেষ্টা করছিলেন। সেই দলেই মোহসিনাকে নিয়ে তিনি উঠে পড়েন।”

নৌকা পাড়ি দিয়ে টেকনাফে আসার জন্য অবশ্য তাদের গুনতে হয়েছে অর্থ। হার মোহাম্মদ বলছিলেন মিয়ানমারে তার ভাষায় দালালদের টাকা দিয়ে তারা নৌকায় উঠে পড়েন। মোহসিনার মতো আরো অনেকেই টেকনাফে এসেছেন নদী পাড়ি দিয়ে। তাদের সবার কাছে কম-বেশি একই ধরনের নির্যাতনের কথা শোনা গেল।

তবে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে কোনো সংবাদদাতা বা মানবাধিকার কর্মী প্রবেশ করতে না পারায় এসব নির্যাতনের কথা কতটা সত্য সেটা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব নয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!