• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ডেটলাইন পাঁচ জানুয়ারি

মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২, ২০১৭, ০৯:৪৯ এএম
মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিনকে (৫ জানুয়ারি) কেন্দ্র করে নতুন বছরের শুরুতেই দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের জন্য রাজধানীর দুটি স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। আর তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ অভিহিত করে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

দুই বছর আগে এই পরিস্থিতিতেই দেশে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে আবারো দুটি দলের মুখোমুখি অবস্থানে কোনো সহিংস পরিস্থিতির সূচনা হয় কি না জনমনে সেই শঙ্কাও ভর করেছে। তবে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে স্থিতিশীল পরিবেশ যাতে অস্থিরতায় রূপ না নেয়, সেজন্য নেতাদের দায়িত্বশীল আচরণ আশা করছেন তারা। যদিও এরই মধ্যে কর্মসূচি পালন ও ঠেকানো নিয়ে দল দুটির শীর্ষ নেতাদের বাকযুদ্ধ রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

তবে রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে গণতান্ত্রিক দলগুলোকে নির্বিঘ্নে তাদের কর্মসূচি পালন করতে দেয়া উচিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, নিজ নিজ রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণ এবং নির্বিঘ্নে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ থাকবে না। এজন্য দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে নেতাদের ধৈর্যশীল এবং দায়িত্বশীল বক্তব্য দেয়ার কথা বলছেন তারা।

সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারি ঢাকায় দুটি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আয়োজনে ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এ সমাবেশ করবে। এদিকে দিনটিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে মহানগর ও জেলায় কালো পতাকা মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ এবং ৭ জানুয়ারি ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘জনগণ বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দেবে না। বিএনপিকে এই দিবস নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে রাজপথে নামতে দেয়া হবে না।’ হানিফের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কর্মসূচি পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের যদি জবাবদিহি থাকত, তাহলে ‘দেব না, করতে দেব না, বাধা দেব, এগুলো বলত না।’ 

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশ তো জনগণের। কর্মসূচি করতে না দেয়ার কথা তো দস্যু মনোবৃত্তি। এটা কি কোনো সভ্য রাজনৈতিক দল, যে দলে নীতি-আদর্শ-দর্শন থাকে; কোনো সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দল হলে এসব কথা বলত না।’ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পূর্বাপর সময়ে ‘আন্দোলনে ব্যর্থ’ বিএনপি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়। দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয় উত্তেজনা। পুলিশ ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশের পথ বন্ধ করে দিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া টানা অবরোধের ডাক দেন।

এরপর তিন মাসে নজিরবিহীন সহিংসতা ও নাশকতায় প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এজন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দায়ী করে। যদিও এর পরের বছর একই দিনে দল দুটি নিজেদের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি পায়। তবে বছর ঘুরে সেই ৫ জানুয়ারিতেই আবারো কর্মসূচি নিয়ে মুখোমুখি আর বাকযুদ্ধে মেতেছেন দল দুটির নেতারা।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ঢাকাসহ সারা দেশে এই কর্মসূচি পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমরা কর্মসূচি করবই নিঃসন্দেহে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের গণতন্ত্রের প্রতি যদি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকে, তাহলে আশা করি তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে কোনো টালবাহানা করবে না।’

একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে সব রাজনৈতিক দলেরই সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে বলে জানিয়ে এক্ষেত্রে জনগণের কথা চিন্তা করে নেতাদের সহনশীল আচরণ করা উচিত বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দীন খান।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিকভাবেই কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে। এক্ষেত্রে বাধা বা অন্য কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার কোনো অর্থ হয় না। ৫ জানুয়ারিকে যে যার ইচ্ছামতো দিন অভিহিত করে কর্মসূচি পালন করতেই পারে। তবে এক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে যেন পরিবেশ-পরিস্থিতি অস্থিরতায় রূপ না নেয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!