• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘অপারেশন কালিগঙ্গা’ 


ফেসবুক থেকে ডেস্ক জানুয়ারি ৩০, ২০১৭, ০৬:২৫ পিএম
‘অপারেশন কালিগঙ্গা’ 

পুলিশে জয়েন করার পর এএসপি হিসেবে প্রথম পোস্টিং পান মানিকগঞ্জের ঘিওরে। সেখানে প্রথম সশস্ত্র ডাকাতদল ধরতে বোট নিয়ে পিছু ধাওয়া করে পুলিশ সদস্যরা।

থ্রিলিং সেই অভিযানের লোমহর্ষক বর্ণনা লিখে তা ফেসবুকে পোস্ট করলেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সেকেন্ড ইন কমান্ড মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন (সানী ছানোয়ার)।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে এই পুলিশ কর্মকর্তার ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য হবহু তুলে ধরা হলোঃ-

‌‘#অপারেশন_কালিগঙ্গা
থানার উঠানে বসে ওসি ও অন্যান্য অফিসারদের সাথে গল্প করছিলাম। হঠাৎ পার্শ্ববর্তী থানা থেকে একটি ওয়ারলেস ম্যাসেজ আসল-

চৌহালী থানা এলাকায় যমুনা নদী পারাপারের সময় দুটি ইঞ্জিন চালিত নৌকার যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিয়েছে একদল ডাকাত। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এই ডাকাত দলটি একটি স্পীডবোটে করে যমুনা নদী থেকে কালিগঙ্গা নদীতে প্রবেশ করেছে। তারা ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে ঘিওর থানা এলাকায় প্রবেশ করবে।... ডাকাতদের সংখ্যা আনুমানিক ৮/১০জন।’

ওসি একটা হুংকার দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। সব অফিসারদের অস্ত্র- গোলাবারুদ নিয়ে নদীর ঘাটে যেতে বললেন। থানার সামনেই কলেজের বিশাল মাঠ, তার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কালীগঙ্গা নদী। আমরা সবাই দৌড়ে নদীর ঘাটের দিকে যেতে থাকলাম। হাতে একদম সময় নেই।

জীবনে প্রথমবারের মত এরকম একটি সিনেমাটিক থ্রিলিং ঘটনা বাস্তবে ঘটতে যাচ্ছে। তাই খুব উত্তেজনাবোধ করছিলাম। পুলিশ যে হয়েছি তা সেদিনই প্রথম টেড় পাচ্ছিলাম। প্রথমবারের মত কোন সম্মুখ যুদ্ধ (CQB) অংশগ্রহণের একটা ভায়ানক উত্তেজনা নিয়ে ঘাটে পৌঁছে গেলাম।

এটি ২০০৭ সালের শেষের দিকের ঘটনা। সবেমাত্র বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা থেকে এক বছরের বেসিক ট্রেনিং শেষ করেছি। মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানায় শিক্ষানবিশ এএসপি হিসেবে দুই মাসের জন্য সংযুক্ত করা হয়েছে আমাকে। উদ্দেশ্য একটাই- হাতেকলমে পুলিশিং শেখা।

যাহোক, থানার নিজস্ব কোন নৌকা না থাকায় একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া নেয়া হল। ভাড়া নেয়া হল বললে ভুল হবে, বরং নৌকার মালিকের কাছ থেকে জোর করে নৌকাটা ছিনিয়ে নেয়া হলো। বিদেশি পুলিশের স্টাইল ফলো করে যখন কোন নৌকা পেলাম না, তখন দেশী স্টাইলে নৌকা পেয়ে গেলাম। জননিরাপত্তার স্বার্থে এতটুকু ফাপর দেয়াটা আসলে কৌশগত বিষয়ও বটে।

যাহোক ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ‘অপারেশন কালিগঙ্গা’ শুরু করে দিলাম। নৌকা নিয়ে নদীর মাঝখানে যেতে না যেতেই প্রবল বেগে একটি স্পীডবোট আমাদের দিকে ধেয়ে আসতে দেখলাম। চাইনিজ রাইফেল আর শর্টগান নিয়ে নৌকার সামনে পজিশন নিল তিনজন পুলিশ। আমাদের নৌকার মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। এর মধ্যে ০৫ জনের হাতে আর্মস, ০৩ জনের শরীরে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট আর ০১ জনের মাথায় হেলমেইট রয়েছে। বাকিরা অরক্ষিত।

আমরা দু'জন শিক্ষানবিশ এএসপি ছিলাম সেই নৌকায় ; আমাদের কাছে অস্ত্র, বিপি (Bullet Proof) জ্যাকেট কিংবা হেলমেইট কোনটাই ছিল না। বিষয়টি খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ডাকাতদের স্পীডবোটটি আমাদের কাছাকাছি আসতেই শর্টগানের কয়েক রাউন্ড গুলি ফুটালাম আমরা। পুলিশের এই সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে ডাকাত দল ভড়কে গেল। তারা 'ইউ টার্ন' নিয়ে আবার নদীর উল্টো পথে পালিয়ে যেতে থাকলো।

মুহূর্তের মধ্যে নদীর দু'ধারে শত শত মানুষের ভীড় জমে গেল। সবাই পুলিশ কিংবা ডাকাতদের গোলাগুলি তোয়াক্কা না করে সার্কাস দেখার মত উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমরা ডাকাতদের ধাওয়া করে পিছু নিলাম, কিন্তু আমাদের নৌকা খুব একটা এগুচ্ছে না। আর ওদিকে, ডাকাতদের স্পীডবোট পানির উপর দিয়ে উড়ে উড়ে যাচ্ছে।

মাঝের ব্যবধান বেড়ে গিয়ে ডাকাতদের স্পীডবোটটা দৃষ্টিসীমা অতিক্রম করে গেল। আমাদের মাঝে একটা বিষাদের ছায়া দেখা গেল। ডাকাতের গতির কাছে পুলিশের এই পরাজয় নতুন পুলিশ হিসেবে আমরা দুজন মেনে নিতে পারছিলাম না।

যখন প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, 'অপারেশন কালিগঙ্গা' এখানেই সমাপ্তি, ঠিক তখনই একটি আশার আলো দেখা গেল.....
(চলবে)... নেক্সট পর্ব আগামীকাল।

লেখক: সানী সানোয়ার, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিট 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!