গাজীপুর: গাজীপুরে পরীকায় প্রেমের জের ধরে গৃহবধূকে হত্যার দায়ে দেড় যুগ পর প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অপর একটি ধারায় তাকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. ফজলে এলাহী ভূইয়া এ আদেশ দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম আবুল কালাম ওরফে কালু মিয়া (৬৫)। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন চান্দপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নান ওরফে মনা মিয়ার ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কালু মিয়ার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই এলাকার দুই সন্তানের জননী করিমন নেছা। এ সম্পর্কের জের ধরে ১৯৯৯ সালে ওই গৃহবধূ তার স্বামী চান মিয়াকে তালাক দেন। তবে স্বামীকে তালাক দেয়ার ঘটনা মেনে নিচ্ছিল না করিমন নেছার পরিবার। ঘটনার পর মায়ের সঙ্গে রাগারাগি হওয়ায় ওই গৃহবধূ বোনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন।
একই দিন (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পরিবারের ডাকে বাবার বাড়ির দিকে রওনা দেন। তবে রওনা দেয়ার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন করিমন। বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজ-খবর করেও সন্ধান মেলেনি।
এরপর নিখোঁজের ১৬ দিন পর (২৫ জানুয়ারি) বাবার বাড়ির কাছে একটি পুকুরের কচুরিপানার নিচে করিমনের মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। এঘটনায় নিহতের ভাই সফিজ উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তালাক দেয়া স্বামী নয় করিমনকে হত্যা করেছে তারই পরকীয়া প্রেমিক কালু মিয়া। যাকে বিয়ে করার জন্য স্বামীকে তালাক দিয়েছিলেন করিমন, অবশেষে তারই হাতে প্রাণ দিতে হলো।
তবে কেন পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হত্যাকারী কালু মিয়ার সঙ্গে করিমনের বয়সের ব্যবধান ছিল অনেক বেশি। সে কারণে তাদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছিলন চায়নি করিমনের পরিবার। তাই পাওয়া হবে না-এ ক্ষোভ থেকেই পরকীয়া প্রেমিককে দুনিয়া থেকে তুলে দিতেই হত্যা করে বসে।
তদন্ত কর্মকর্তা জয়দেবপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি, তদন্ত) দীর্ঘ তদন্ত শেষে আবুল কালাম ওরফে কালু মিয়াসহ একই এলাকার নাছির উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন ও জালাল উদ্দিন এবং কান্দুর আলীর ছেলে ফজলুল হককে অভিযুক্ত করে থানায় চার্জশিট দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে মামলায় আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
শুনানিতে অন্যদের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নাজিম উদ্দিন ও জালাল উদ্দিন এবং ফজলুল হককে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি মো. আতাউর রহমান। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ও আব্দুর রশীদ।
সোনালীনিউজডটকম
আপনার মতামত লিখুন :