নামের কলঙ্ক ঘুচল দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর

  • গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০১৯, ০৫:০৮ পিএম

রাজবাড়ী : অবশেষে নামের কলঙ্ক ঘুচল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পতিতালয়ের। এ পল্লীর যৌনজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানায় গ্রামের নাম দৌলতদিয়া পতিতালয় নাম বাদ দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে ঠিকানার বিড়ম্বনা নিয়ে ইতোমধ্যে কেটে গেছে তাদের ৪৭ বছর।

ঠিকানার কারণে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে বসবাসরত ১ হাজার ৩০৮ জন যৌনকর্মী নানাভাবে বিড়ম্বনা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছিলেন। শুধু নামের জন্য এখানকার ৬৪০ জন শিশুর ভবিষ্যৎ ছিল অনিশ্চিত। অবশেষে গত ১৫ জুলাই সোমবার পতিতালয় গ্রামের নাম পরিবর্তন করেছে নির্বাচন কমিশন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডেও ০০৭২ কোডের ভোটার এলাকার নাম পরিবর্তন বিষয়ক একটি চিঠি আমাদের কাছে আসে। সেখানে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ভোটার কোড ০০৭২ অপরিবর্তিত রেখে ‘পতিতালয় (উত্তর দৌলতদিয়া)’-এর স্থলে ‘দৌলতদিয়া বাজার পূর্বপাড়া’ নামকরণ করা হয়।

পতিতালয়ে নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে যৌনকর্মী নাসিমা বেগম জানান, আমরা কেউ পতিতা হয়ে জন্মায়নি। ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার হয়ে এখানে এসেছি। গ্রামের নাম হয়েছে পতিতালয়। আমরা সন্তানদের যখন বাইরের কোনো স্কুলে ভর্তি করতে যাই তখন গ্রামের নাম শুনে ভর্তি নেয় না। তাছাড়া আরো বিভিন্ন নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

দৌলতদিয়া কেকেএস সরকারি শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলকিস বেগম জানান, এক সময় এই পতিতালয়ের কোনো শিশুকেই কোনো বিদ্যালয় ভর্তি নিত না। তখন সমাজসেবক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আবদুল জব্বার এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দৌলতদিয়ার পতিতাপল্লীর শিশুদের পড়ালেখার সুযোগ করে দেন। এই বিদ্যালয়ে যৌনপল্লীর ১৪৩ জন ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে।

তিনি আরো বলেন, নাম পরিবর্তনের ফলে এখানকার শিশুরা এখন থেকে দেশের যে কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগ পাবে। আর কোনো বিড়ম্বনা থাকবে না।

দৌলতদিয়া পতিতালয়ের যৌনজীবী ও তাদের শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম জানান, লজ্জাজনক ঠিকানার কারণে এতদিন এখানকার নারী ও শিশুরা নানাভাবে বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে আসছিল। দীর্ঘদিন পরে হলেও নামটি পরিবর্তন হয়ে দৌলতদিয়া বাজার পূর্বপাড়া হয়েছে। এতে পল্লীর সবাই খুব খুশি। আমি এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুবায়েত  হাসান শিপলু জানান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বিষয়টি আমাদেরকে জানালে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে নাম পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করি। যেটা পরিবর্তন হয়ে আসছে। আগামী ২৫ জুলাই যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেখানে আর পতিতালয় গ্রাম নামে কোনো যৌনকর্মী ভোট প্রদান করতে পারবে না। তারা এখন দৌলতদিয়া বাজার পূর্বপাড়া গ্রামের মানুষ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই