ভারতের দিকে তাকিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীরা

  • সিলেট ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০১৯, ১২:২৭ পিএম

সিলেট : অবশেষে মেঘালয়ের খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। তবে এই অনুমতিতেও আশার আলো দেখছেন না বাংলাদেশের আমদানিকারকরা।

কয়লা উত্তোলন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্তজুড়ে দিয়েছেন সে দেশের আদালত। শর্তগুলো পূরণ করে মেঘালয় সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি নিয়েই কয়লা উত্তোলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এতে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের আটকা পড়া প্রায় শত কোটি টাকার এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, আপাতত তার কোনো সুরাহা হচ্ছে না। ফলে আমদানিকারকদের এখন তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের দিকেই।

চার মাস বন্ধ থাকার পর গত ১৭ মে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মেঘালয় রাজ্যের খনিগুলো থেকে শুধুমাত্র উত্তোলিত কয়লা ৩১ মে পর্যন্ত রপ্তানির অনুমতি দেন। এই আদেশের প্রেক্ষিতে ২২ মে থেকে সুনামগঞ্জের বড়ছড়া ও বাগলী সীমান্ত দিয়ে কয়লা আমদানি শুরু হয়। ৩১ মের পর ফের বন্ধ হয়ে যায় আমদানি। এরপর কয়লা রপ্তানির অনুমতি চেয়ে ভারতের ব্যবসায়ীরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন।

ভারতের ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি চন্দন সাহা জানান, ওই আপিলের প্রেক্ষিতে শুনানি শেষে গত ২ জুলাই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শর্তসাপেক্ষে কয়লা উত্তোলন ও রপ্তানির অনুমতি দেন। তবে এ ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে কোনোভাবে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করা যাবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করেই কয়লা উত্তোলন ও রপ্তানি করতে হবে।

এ জন্য মেঘালয় সরকার ও ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) যৌথভাবে একটি প্রজেক্ট প্রোপোজাল তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি সাপেক্ষেই কয়লা উত্তোলনের নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট।

চন্দন সাহা জানান, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া শর্ত পূরণ করে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি পেতে অন্তত ৩-৪ মাস সময় লাগবে বলে তাদের জানিয়েছেন সে দেশের রপ্তানিকারকরা। তাই আপাতত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের।

সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, কয়লা আমদানির জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রায় দেড় শ কোটি টাকার এলসি করা ছিল। গত ১৭ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকার কয়লা আমদানি হয়েছে। বাকি এক শ কোটি টাকার এলসি এখন আটকে আছে। অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এলসি করেছেন।

কিন্তু কয়লা আমদানি করতে না পেরে ঋণের সুদের বোঝা তাদের টানতে হচ্ছে। এ ছাড়া আবার আমদানি শুরু না হলে এই এক শ কোটি টাকার এলসির মধ্যে শুল্ক ও এআইটি বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যবসায়ীরা ফেরত পাবেন না। এতে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন।

আমদানিকারকরা জানান, বছরের এ সময়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা কয়লা আমদানি করে স্টক করে রাখেন। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ইটভাটায় মজুত করা এই কয়লা বিক্রি করা হয়। কিন্তু মেঘালয় থেকে আমদানি করা না গেলে এবার কয়লা মজুত করা যাবে না। ফলে ইট পোড়ানোর মৌসুমে কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, মেঘালয়ের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে কয়লা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতের ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। এরপর সে দেশের রপ্তানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উত্তোলিত কয়লা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন আদালত।

এর আগে ২০১৮ সালের ১ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় কয়লা আমদানি। পরে ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও ১৫ জানুয়ারি থেকে আদালতের অপর একটি আদেশে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই