ঢাকা : সম্প্রতি কয়েক দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও বন্যার কবলে পড়েছেন লালমনিরহাটের তিস্তা পাড়ের মানুষ।
কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানি ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে তিস্তা তীরবর্তি নিম্না ল ও চরা লের বিস্তির্ণ এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫হাজার মানুষ। পানি নিয়ন্ত্রণে খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো জলকপাট।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, গত সোমবার থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় পানি বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।
রাত ১২টার পর পানি আরো বেড়ে বিপদসীমার ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার ছাড়িয়ে তা বিপদসীমার ৫২ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত (২৫ সেন্টিমিটার) রেকোর্ড করা হয়। তবে গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় পানি প্রবাহ কমে বিপদসীমার ৮সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরবর্তিতে বিকাল ৩টা থেকে পানি প্রবাহ কমে বিপদসীমার ২সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।
হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারনে তিস্তার দুই কুল ছাপিয়ে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। পানির নীচে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা ও আমন ধানের চারা। জেলার ৫উপজেলার তিস্তা তীরবর্তি প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সময়মতো বানের পানি নেমে না গেলে রোপা-আমন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করছে কৃষকরা। অনেকে গবাদি পশু-পাখি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পানির প্রবল স্রোতে জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার ধুবনী এলাকায় তিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ে উপজেলার দক্ষিণ ধুবনী সিন্দুর্না এলাকার কয়েতশত পরিবার।
একই গ্রামের ফজলার রহমান (৫৮) বলেন, “তিস্তা নদীর পানি আকস্মিক বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। রান্না-বান্না করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে শুকনো খাবার কিনে এনে পরিবারের সবাইকে খাওয়াচ্ছি। সময় মতো পানি নেমে না গেলে ধান গাছ পঁচে যাবে। আর ফসল নষ্ট হয়ে গেলে আমরা দুর্বিসহ জীবনে পড়ে যাবো।”
হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার চর গড্ডিমারী এলাকার গৃহিনী আসমা বেগম (৪৫) বলেন, “আকস্মিক তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বাড়ি-ঘর বানের পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদি পশু-পাখি আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আমরা কোনোরকমে রাস্তার পাড়ে ঠাঁই নিয়েছি।”
জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধুভূষণ রায় জানান, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তাপারের নিম্না ল ও বিস্তীর্ণ চর এলাকার রোপা-আমন ও সবজি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে রোপা-আমনের ক্ষয়-ক্ষতি কম হলেও সবজির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফজলে করিম জানান, গত মঙ্গলবার রাতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বুধবার সকাল থেকে পানি প্রবাহ কমে বিকাল ৩টা থেকে বিপদসীমার ২সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে বলেও তিনি জানান ।
সোনালীনিউজ/এমটিআই